সবার বাবা যেন থাকেন দুধে-ভাতে

আজ বিশ্ব বাবা দিবস। বাবার জন্য উৎসর্গ করা একটি দিন। প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ববাসী বাবা পালন করা হয়। গ্রেস গোল্ডেন ক্লেটন নামে এক নারীর হাত ধরে দিবসটির সূচনা হয়েছিলো।

অনিল মো. মোমিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2021, 10:53 AM
Updated : 22 June 2021, 05:54 AM

বাবা যেকোনো পরিস্থিতিতে সন্তানদের আগলে রাখেন, ছায়ার মতো পাশে থাকেন, নির্ভরতা দেন। সন্তানকে সুরক্ষিত রাখতে জীবনের ঝুঁকি নিতেও পিছপা হন না। বাবা নিজের বাইরেরটা শক্ত খোলসে আটকে রাখলেও ভেতরটা তার নরম নারকেলের মতো। সন্তানরাও কিন্তু গম্ভীর বাবাকে ঠিকই ভালোবাসে। শুধু মুখ ফুটে বলা হয় না।

আজ এ দিবসে বাবার প্রতি নিখাদ অনুভূতি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের সেই অনুভূতি তুলে ধরেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিল মো. মোমিন।

বাবা তোমাকে বলা হয়নি...

ফুয়াদ হাসান

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

চৈত্রের ছাতিফাটা রৌদ্রে পিপাসায় ক্লান্ত নিথর দেহ বিলিয়ে দেয় বটবৃক্ষ তলে। অকৃতজ্ঞায় নেই অভিমান, যেন ভালোবাসাতেই তার মহীয়ান। শত কান্না, অভিমান, শঙ্কায় পাখির পালকের মতো কোমল ভয়হীন আশ্রয়ের নাম বাবা।

কখনও বায়না ধরে ওই দূর গ্রামে বৈশাখী মেলায় যাওয়া, কখনও  ফাগুনের বিকেলে বাবার হাত ধরে মেঠোপথ ধরে হাটে যাওয়া, কখনো কাঁধে চড়ে পুরো ময়দান চষে বেড়ানো। হাজার বায়নার ভারেও ক্লান্ত মুখে মৃদু হেসে কপালে চুমু খাওয়া মানুষটাই বাবা।

নশ্বর এ মহাজগতে যার কারণে আসা, কখনো বুক ফুলিয়ে গর্বভরে ডাকা হয়নি  বাবা বলে। কখনো হাতটি ধরে মৃদু পথ বেয়ে চলা হয়নি অনেক দূর। ভয় ভয় বুকে একলা পথে চলতে চলতে বাবা বাবা বলে চিৎকার করে অভয় প্রার্থনা করা হয়নি কখনো। পৃথিবীতে আমি নামক এক বনফুল ফোটার পরই জীবন থেকে মিশে গেছে বাবা নামের গোলাপ গাছটি। তাইতো আজও স্মৃতিগুলো সব বাদামি ডায়েরিতে বন্দি। বনজুঁই আর ঘাসফুলের রাজ্যে চিরঘুমন্ত বাবার পাশে দাঁড়িয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কখনও বলা হয়নি, বাবা তোমাকে খুব মনে পড়ে।

শেষ বয়সে বাবার বাবা হতে হবে

তিথি রানী দাস

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বাবা শব্দটা বটবৃক্ষের মতো। বাবা নামের বটবৃক্ষের ছায়াতলে সন্তান তরু-পল্লবে বিকশিত হয়ে আগামী প্রজন্মের ধারা বহন করে। জীবন সংসারের মায়াজালে সমস্ত রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে অজানা গন্তব্যে সংসার নামে সদস্যদের শান্তির বার্তাবাহক বাবা।

‘পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম পিতাহিপর মন্তপ/ প্রিতরী প্রিতিনাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা।’ হিন্দুধর্মে এ শ্লোকে বলা হয়েছে, ‘পিতা স্বর্গ ও ধর্ম স্বরূপ।’ অর্থাৎ পিতার স্থান সন্তানের কাছে অনন্য। পিতৃসেবা করেই সন্তান স্বর্গসুখ আস্বাদন করতে পারে। কিন্তু প্রযুক্তির এ অভাবনীয় অগ্রগতি আমাদের সমাজের আশীর্বাদের সঙ্গে ভয়ংকর অভিশাপ বয়ে আনছে। বর্তমান তরুণ সমাজ বাবা-মায়ের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ককে দূরে ঠেলে দিয়ে ভার্চুয়াল জগতকে আপন করে নিয়েছে। ফলে বার্ধক্যে পিতা-মাতার প্রতি অবহেলা এবং পরিবারের স্বাভাবিক বন্ধন তলানিতে ঠেকেছে।

বাবা-মা বার্ধক্যে উপনীত হলে সন্তানের স্নেহের পরিবর্তে বৃদ্ধাশ্রম নামক নিঃসঙ্গ জীবনকে বরণ করে নিতে হচ্ছে এবং পারিবারিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে শেষ জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। ‘একজন বাবার মন হলো প্রকৃতির এক অপার স্থান’, বলেছেন অ্যান্টনি ফ্রাঙ্কে প্রিভোস্ট। সুতরাং বাবার সমস্ত মন সন্তানের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনায় পরিপূর্ণ। আর এ বাবা দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সন্তানের জীবনে বাবার এ অকল্পনীয় অবদান এবং বাবার প্রতি সন্তানের কর্তব্য।

শৈশবে বাবা যেমন ছাতার মতো সমস্ত রোদ-বৃষ্টিকে দূরে ঠেলে দিয়ে সর্বদা আমাদের জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়, আমদেরও উচিত বার্ধক্যে তাদের পাশে ছায়ার মতো অবস্থান করে পদসেবা করা।

সন্তানদের কাছে প্রতিটা দিনই হোক বাবা দিবস

এম. ওমর ফারুক জিহাদী

শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বাবা, এ যেন কশেরুকার উপর ভর করে গড়া ওঠা আমাদের এ ক্ষুদ্র পরিসর। যার বটবৃক্ষের ছায়াতলে আচ্ছাদিত হয় রক্তমাংসে গড়া এক আবেগ, অনুভূতি। বাবা নামটা যেন ব-এর সঙ্গে আকার এবং ব-এর সঙ্গে আকার এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এখানে ব-এর সঙ্গে আ-কার এর মানে শুধু আ-কার বুঝায় না। আ দিয়ে বোঝায় পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের পদতলে বাবার শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম কতটুকু নিমজ্জিত।

যে পরিবার বাবার নিয়ামক থেকে দূরে সে পরিবার জানে পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু তার সঙ্গে কতটুকু আপন-পর। বাবা শুধু একজন ব্যক্তিতেই আবদ্ধ নয়, যার বিস্তৃতি সন্তানের প্রতিটি অর্জন, ব্যর্থতা, দুঃখ সুখের প্রতিটি কণা। তাই আমি বলি-

বাবা মানে অফুরন্ত নিখাদ ভালোবাসা,

বাবা মানে স্নেহ-তৃষিত মনের দুর্ভেদ্য আশা।

বাবা মানে মাথার উপর এক শান্তির ছায়া

বাবা মানে শত অপরাধের প্রতিদানে দেয়া মায়া।

বাবা দিবস কেবল একটি দিবসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ যেন বাবাকে কেন্দ্র করে, বাবার ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভালোবাসার সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াসের জগতকে বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ করতে পারি। যেখানে প্রতিটি অস্থি, তরুণাস্থি বাবার পদতলে লুটে যায়। তাই বাবা দিবসে সবার বাবার প্রতি রইলো অকৃত্রিম-অকৃপণ ভালোবাসা। বাবা দেহত্যাগ করার আগেই যেন তার দেহে আমাদের অর্জিত পরম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা পৌঁছে দিতে পারি।

সবার বাবা যেন থাকেন দুধে-ভাতে

অর্পিতা রায় শাওন

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়‌

বাবা শব্দটা দুই অক্ষরের, তবে শব্দটার বিশালতা যেন সমুদ্রসম। রাগি চেহারা, গম্ভীর মুখ ও শক্ত চোয়ালের অবয়বে আঁকা এক বটবৃক্ষ যেমন। বাবা সহসা হাসেন না। বৃক্ষের মতো নীরবে অক্সিজেন জুগিয়ে চলেন নিঃশব্দে। বাবা সেই ভরসাস্থল যার সুগঠিত কাঁধে মাথা রেখে স্বস্তিতে সব চিন্তা-দুঃখ ম্লান হয়ে যায়।

পেশাগত কারণে মায়ের চেয়ে বাবার সান্নিধ্য বেশি পেয়েছি, তাই ছোট্টবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে দারুণ সখ্যতা আমার। কালের পরিক্রমায় আমরা যেন বাবা-মেয়ে থেকে দুই বন্ধুতে পরিণত হলাম। আমার বেড়ে ওঠা, লেখাপড়ার হাতেখড়ি সবই বাবার কাছে। এরপর স্কুল-কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি ছুঁলেও আজও তার অবদান অনস্বীকার্য।

আমার জীবনের সমস্ত অর্জন ও অগ্রগতির নেপথ্যের নায়ক আমার বাবা। বাবা আমার সব অনুপ্রেরণার উৎস। ফ্রাংক এ. ক্লার্কের একটা বিখ্যাত উক্তি, ‘একজন বাবা তার সন্তানকে ততটাই ভাল বানাতে চান যতটা তিনি হতে চেয়েছিলেন।’ আমার বাবাও এর ব্যতিক্রম নন। তিনি সবসময় সর্বগুণসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে চেয়েছেন আমাকে।

মাঝে মাঝে ক্ষণিকের জন্য হলেও ভাবি আদৌ কি তার অবদানের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পেরেছি! আজ বিশ্ব বাবা দিবসে পৃথিবীর বাবারূপী মহৎ-ত্যাগী মানুষগুলোর প্রতি নিগুঢ় শ্রদ্ধা জানাই। কবি ভারতচন্দ্র রায়ের কথাটাই ঘুরিয়ে বলতে চাই, সবার বাবা যেন থাকেন দুধে-ভাতে।

বৃদ্ধাশ্রমে নয় বাবারা থাকুক পরিবারের মধ্যমণি হয়ে

হাসান মাহমুদ শুভ

শিক্ষার্থী, ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, গাজীপুর

‘কাটে না সময় যখন আর কিছুতে, বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না। জানালার গ্রিলটাতে ঠেকাই মাথা, মনে হয় বাবার মতো কেউ বলে না, আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়...।’ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও শ্রাবন্তী মজুমদারের গাওয়া এ গানে বাবার প্রতি সন্তানের শূন্যতার কথা ভীষণ মনে করিয়ে দেয়।

প্রতিটি সন্তানের জীবনে বাবার গুরুত্ব সীমাহীন। আমাদের স্বপ্ন জয়ের পেছনে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি তারাই হলেন বটবৃক্ষ বাবা। হাজারও প্রতিবন্ধকতার মধ্যে নিরাপত্তার প্রাচীরে আগলে রাখার মানুষটিই আমাদের বাবা। পৃথিবীর রঙ-রূপ এবং আলোর দর্শনের পরিবর্তন হলেও বাবাদের ভালোবাসায় পরিবর্তন আসে না। পরম আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মমতামাখা বুকে ভালোবাসায় আবদ্ধ করে রাখেন। যে মানুষটি আমাদের শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও আগলে রেখে ভালোবাসেন। অথচ সেই বাবাকে আমরা বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে রেখে আসি। আসুন এ বাবা দিবসে আমরা প্রতিজ্ঞা করি বৃদ্ধাশ্রম নয়, বাবাদের ঠিকানা হোক আমাদের অন্তরের মনিকোঠায়।

বাবার ভালো মেয়ে হওয়ার দৌড়ে যেন কখনো পিছিয়ে না পড়ি

রাফিয়া তাহসিন লাজুক

শিক্ষার্থী, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, টাঙ্গাইল

বাবা আমাদের জীবনে কী তা নতুন করে বলার প্রয়োজন বোধহয় নেই। পৃথিবীর কোনো বাবাকে নিয়ে সংক্ষেপে শব্দসীমায় লেখা কঠিন বটে। তবে আমার কথা যদি বলি তাহলে শৈশবে মায়ের চাকরির সুবাদে বাবার সঙ্গেই আমার বেশি সময় কাটানো হয়েছে। বাবা আমাকে খাওয়াতো, আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতো, আমাকে গল্প শোনাতো। মূলত আমার পৃথিবীটা ছিল বাবাকে ঘিরেই।

বাবা আমাকে দেয়াশলাই কাঠি দিয়ে আগুন জ্বালানো শিখিয়েছেন, মাছের কাঁটা বাছা শিখিয়েছেন, হারিকেন জ্বালানো শিখিয়েছেন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তিনি আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে মানুষ হতে হয়।

বাবাকে যে ভালোবাসি বলাই বাহুল্য, তবে আশা করি কোনোদিন আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা’আলা আমাকে এতটা সাহস দিক যেন আমি তাকে সামনাসামনি জড়িয়ে ধরে বলতে পারি- বাবা, তোমাকে অনেক বেশিই ভালোবাসি, জীবনে আর কিছুতে ভালো না হতে পারি! ভালো মেয়ে হওয়ার দৌড়ে যেন কখনো পিছিয়ে না পড়ি!

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!