এক যে ছিল মজার রাজ্য। সেই রাজ্যের নাম কনক রাজ্য।
Published : 24 May 2021, 09:22 AM
কনক মানে সোনা। সেই রাজ্যের মাঠে মাঠে ফলে সোনা রঙের ধান। কনক রাজ্যে সবাই পেট ভরে ভাত, মাছ, মাংস, সবজি আর ফল খায়। আরও খায় গরুর খাঁটি দুধ। প্রজারা দারুণ হাসি-আনন্দে আছেন কনক রাজ্যে।
কনক রাজ্যের রাজার নাম লালমোহন। রাজার বাবা লালমোহন মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসতেন। তাই তিনি ছেলের নাম রেখেছেন লালমোহন। কিন্তু রাজা লালমোহন ভালবাসেন ভাত, মাছ, মুরগি আর শাক-সবজি খেতে। রাজার যেমন বুদ্ধি তেমনি সাহস।
কনকরাজ্য থেকে বেশ দূরে আছে এক রাজ্য। সেই রাজ্যের নাম সিলভার রাজ্য। সেই রাজ্যের রাজার নাম ডনরাজ। রাজা ডনরাজ, রাজা লালমোহনের বন্ধু। একদিন রাজা ডনরাজ, রাজা লালমোহনের জন্য নতুন এক খাবার পাঠালেন। রাজা লালমোহন জানতে পারলেন, খাবারটির নাম বার্গার। খাবারটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি এর স্বাদ! এমন মজার খাবার তিনি আগে কখনো খাননি। তিনি রাজপাচককে হুকুম দিলেন বার্গার রান্না শিখে নিতে।
রাজা লালমোহন সকাল-বিকেল বার্গার খেতে শুরু করলেন। বার্গার খেতে খেতে একসময় তিনি ভুলে গেলেন ভাত, মাছ, শাক, সবজি আর ফলমূলের কথা। বার্গার নামটিও দারুণ মনে ধরেছে রাজা লালমোহনের। তিনি ভাবলেন বাবার পছন্দের খাবারের নামে নিজের নাম আর কতদিন! তিনি নিজের নাম বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি ঠিক করলেন, তাঁর নতুন নাম হবে ‘বার্গার রাজা’।
পরের দিন তিনি রাজদরবারে তাঁর নতুন নামটি প্রস্তাব করলেন। সভাসদরা একসঙ্গে বলে উঠল, ‘বাহ বাহ! দারুণ! দারুণ! রাজা বার্গারের জয় হোক!’
কিছুদিন পরের কথা। একদিন সকালে রাজদরবারে সিংহাসনে বসতে গিয়ে রাজা দেখলেন, সিংহাসনটি যেন অনেক ছোট। এখানে কিছুতেই জায়গা হচ্ছে না তার। অনেক চেষ্টা করলেন রাজা। কিন্তু কিছুতেই কাজ হলো না। প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘জাঁহাপনা, কনক রাজ্যের দিনদিন সমৃদ্ধি হচ্ছে। সেই সঙ্গে সমৃদ্ধ হচ্ছে আমাদের জাঁহাপনার স্বাস্থ্য। কনক রাজ্যের মহান রাজার জন্য প্রয়োজন আরও প্রশ্স্ত সিংহাসন।’
সেদিনই হুকুম দেয়া হলো নতুন একটি সিংহাসনের।
এর কয়েকদিন পর দুপুরে রাজা বার্গার খেলেন আস্ত পাঁচখানা, চিকেন বার্গার। কিন্তু খাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গেলেন তিনি। সামান্য বিশ্রাম সেরে রাজদরবারে নতুন সিংহাসনে বসেই তিনি বললেন, ‘আজ দুপুরে আমি কিছুই খাইনি। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। বার্গার চাই আমার।’
শুধু তাই নয়; তিনি মন্ত্রীকে উজিরের নামে আর উজিরকে মন্ত্রীর নামে ডাকতে শুরু করলেন। অন্য সভাসদদেরও কাকে কী নামে ডাকছেন তার ঠিক নেই। রাজার কোনোকিছুই মনে থাকছে না। ওদিকে সন্ধ্যা হতে না হতেই ভূতের ভয় পেতে শুরু করলেন তিনি। ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল সবাই।
রাজবৈদ্যকে ডাকা হলো। রাজবৈদ্য বলল, ‘রাজা বার্গার কিংয়ের অসুখ গুরুতর; তবে নিরাময়যোগ্য। রাজার ভোলা রোগ দেখা দিয়েছে। তাই তিনি সব কিছু ভুলে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়। রাজা গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছেন। শুধু বার্গার খাওয়ার ফলে দিন দিন বুদ্ধি কমে যাচ্ছে রাজার। রাজাকে বাঁচাতে হলে তাকে আবার পুরানো খাবারের অভ্যাসে ফেরাতে হবে।’
অনেক চেষ্টার পর ধীরে ধীরে আবার আগের খাবারের অভ্যাসে ফিরে গেলেন রাজা। প্রায় একমাস রোগ ভোগের পর সুস্থ হয়ে উঠলেন তিনি। দরবারে ফিরে আসতেই সভাসদরা বলে উঠল, ‘জয়, রাজা বার্গারের জয়!’
কিন্তু বার্গারের নাম শুনেই এইবার চটে গেলেন রাজা। বললেন, ‘ঢের হয়েছে! আমি আর বার্গারের নাম শুনতে চাই না। আজ থেকে আমি আবার রাজা লালমোহন।’
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected]। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |