মিনু ছবি আঁকতে খুব ভালবাসে। সময় পেলেই বাসার সামনের বাগানে মাদুর বিছিয়ে ছবি আঁকতে বসে সে। ওদের বাড়ির সামনে বড় একটা বাগান। সেখানে অনেক গাছ। আম, জাম, পেয়ারা, ডালিম, বাতাবিলেবু কত কী!
Published : 24 Apr 2021, 11:58 AM
মিনু আজ একটি পাখি এঁকেছে। সেটিতে রংও দিয়েছে। রং দেয়ার পর যে কী দারুণ লাগছে পাখিটিকে! চোখ ফেরানো যায় না। পাখিটির ঠোঁট লাল, শরীর সোনালি-হলুদ। পাখিটির লেজে একরাশ লম্বা পালক গাঢ় নীল রঙের। মিনু পাখিটির নাম দিল ‘সোনা ঝলমল’। মিনু একমনে পাখিটিকে দেখছে। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ এক দমকা হাওয়ায় উড়ে গেল কাগজটি। মিনু ছুটল কাগজের পিছু পিছু। অবশেষে কাগজটি হাতে পেল সে।
কিন্তু অবাক! পাখিটি নেই সেখানে! কোথায় গেল সোনা ঝলমল! মিনু হঠাৎ দেখল, হাওয়ায় উড়ছে সোনা ঝলমল। সূর্যের আলো পড়ে তার হলুদ শরীর সোনার মতো চকচক করছে। গাঢ় নীল রঙের লেজের ঝালর বাতাসে ঝলমল করছে। মিনু অবাক হয়ে দেখছে সোনা ঝলমলের উড়ে যাওয়া।
সোনা ঝলমল উড়তে উড়তে একটি বনে চলে এলো। সেখানে একটি হিজল গাছে বসল সে। গাছের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট্ট একটি নদী। হিজল গাছে বাসা বেঁধেছে একটি শালিক পাখি। সেখানে কিচিরমিচির করছে তিনটি ছানা। সোনা ঝলমলকে দেখে শালিক পাখি বলল, তুমি কে গো?
সোনা ঝলমল বলল, আমি কাগজের পাখি। আমার নাম সোনা ঝলমল।
শালিক বলল, বাহ দারুণ ব্যাপার তো। আমি কখনো কাগজের পাখি দেখিনি। তোমার নীল পালকের লেজ তো দারুণ সুন্দর। অনেক পালক আছে তোমার লেজে!
সোনা ঝলমল বলল, তুমি নিবে আমার পালক?’
শালিক বলল, তুমি দিবে?
সোনা ঝলমল বলল, অবশ্যই দিব।
সোনা ঝলমল তার লেজ থেকে তিনটি পালক খুলে শালিককে দিয়ে বলল, এই তিনটি পালক তোমার তিন ছানার জন্য। ওরা খুব খুশি হবে।
পালক পেয়ে শালিক তো মহাখুশি! এরপর সোনা ঝলমল উড়ে গেল আকাশে।
আকাশে উড়তে উড়তে একটু পর সোনা ঝলমলের সাথে দেখা হলো একটি কাগজের ঘুড়ির। ঘুড়িটি টুকটুকে লাল রঙের। ঘুড়ি সোনা ঝলমকে দেখে খুব অবাক হলো। এমন পাখি সে আগে কখনো দেখেনি। লাল ঘুড়ি সোনা ঝলমলকে বলল, তুমি কে? নাম কি তোমার?
সোনা ঝলমল বলল, আমি কাগজের পাখি। আমার নাম সোনা ঝলমল।
ঘুড়ি হেসে বলল, তাইতো বলি তোমাকে দেখে আমার এত খুশি লাগছে কেন। আমরা দুজনই কাগজের তৈরি, তাই না?
সোনা ঝলমল বলল, একদম ঠিক বলেছ।
লাল ঘুড়ি বলল, তোমার লেজটি তো দারুণ সুন্দর। অনেক নীল পালকে সাজানো তোমার লেজ।
সোনা ঝলমল বলল, তুমি নেবে আমার পালক?
লাল ঘুড়ি বলল, তাহলে তো দারুণ হয়!
সোনা ঝলমল তার লেজ থেকে দুইটি পালক খুলে লাল ঘুড়িকে দিল।
লাল ঘুড়ি বলল, তুমি পালক দুটি আমার লেজে লাগিয়ে দাও।
সোনা ঝলমল তার নীল পালক দুটি লাল ঘুড়ির লেজে লাগিয়ে দিল। খুব খুশি হলো লাল ঘুড়ি।
হঠাৎ লালঘুড়ি বুঝল তার সুতায় টান পড়েছে। সে বলল, এই রে, সুতায় টান পড়েছে আমার। এক্ষুনি চলে যেতে হবে আমায়। ভাল থেকো সোনা ঝলমল। আমি তোমার কথা সবসময় মনে রাখব।
সোনা ঝলমল আবার উড়তে শুরু করলো। উড়তে উড়তে সে দেখল এক গ্যাস বেলুন। বেলুনটি হলুদ রঙের। হলুদ বেলুন সোনা ঝলমলকে বলল, তুমি কে?
সোনা ঝলমল বলল, আমি কাগজের পাখি। আমার নাম সোনা ঝলমল।
বেলুন বলল, বাহ! দারুণ নাম তো! আমি আগে কখনো কাগজের পাখি উড়তে দেখিনি। তোমার লেজ তো খুব সুন্দর। নীল নীল অনেক পালক তোমার লেজে!
সোনা ঝলমল বলল, তুমি নেবে আমার পালক?
বেলুন বলল, নিশ্চয়ই নিব।
সোনা ঝলমল তার লেজ থেকে দুইটি পালক খুলে লাগিয়ে দিতে চাইল বেলুনের গায়ে। হলুদ বেলুন বলল, সোনা ঝলমল সাবধান! আমার শরীর যেন ফুটো না হয়। ফুটো হলেই গ্যাস বেরিয়ে যাবে আমার শরীর থেকে।
সোনা ঝলমল খুব সাবধানে পালক দিয়ে সাজিয়ে দিল বেলুনকে। বেলুন খুশি হয়ে নাচতে নাচতে হাওয়ায় উড়তে থাকল। যাওয়ার আগে বলল, সোনা ঝলমল, দেখেছ আকাশে মেঘ করেছে? বৃষ্টি নামবে। এক্ষুনি ফিরে যাও তুমি। গায়ে পানি পড়লেই কিন্তু বিপদ তোমার।
সোনা ঝলমল দেখল সত্যিই আকাশে মেঘ করেছে। এখনই ফিরতে হবে তার। সে বলল, আমি এখনই ফিরে যাব।
ভীষণ জোরে উড়তে শুরু করল সোনা ঝলমল। বৃষ্টি নামার আগেই পৌঁছতে হবে মিনুর কাছে।
উড়তে উড়তে অবশেষে সে ফিরে এলো মিনুর কাছে। এসে দেখল, মিনু মাদুরে শুয়ে ঘুমিয়ে গেছে। সোনা ঝলমল লক্ষ্মী পাখির মতো মিনুর আাঁকার কাগজে ঢুকে পড়ল। এদিকে একফোঁটা দুইফোঁটা করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল মিনুর। চোখ খুলে কাগজের দিকে তাকাতেই সে সোনা ঝলমলকে দেখতে পেল। সোনা ঝলমলকে ফিরে পেয়ে এক মুহূর্তেই মন ভাল হয়ে গেল মিনুর।
কিন্তু সোনা ঝলমলের লেজের এতগুলো পালক কোথায় হারিয়ে গেল! এদিকে বৃষ্টি বাড়তে শুরু করল। মিনু তাড়াতাড়ি মাদুর, রং পেন্সিল আর সোনা ঝলমলের ছবি নিয়ে ছুটলো বাড়ির দিকে। মনে মনে ভাবল, পাখিটির লেজের পালকগুলো আবার আঁকতে হবে। আর এই দুষ্টু পাখিকেও সবসময় চোখে চোখে রাখতে হবে।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected]। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |