ভাবছো কি?

আমার বাসা বগুড়ার প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায়। খুব বেশি একটা ঢাকা শহরে যাই না বললেই চলে। ২-৩ বছর পর হঠাৎ জরুরি কাজে যাওয়া হয় ঢাকায়।

তাসনিম সাজিদতাসনিম সাজিদ
Published : 5 April 2021, 04:39 AM
Updated : 5 April 2021, 04:39 AM

প্রতিবারের মতো ঢাকায় আসলে আমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে যাবই। কিন্তু আগের তুলনায় বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অসহায় পথমানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এটার একটা কারণ হতে পারে যে, করোনাভাইরাসে দীর্ঘদিন লকডাউনে অনেক মানুষ নিজেদের কর্মক্ষেত্র হারিয়েছে। যা দিয়ে তাদের সংসার চলত আজ তাও হারিয়ে তারা একদম নিঃস্ব।

কিছু কিছু মানুষ দেখলে মনে হয় আমার মতো সুখী হয়তো আর কেউ নেই। গত ২৫ মার্চ বগুড়া থেকে ঢাকায় এসে সকালের নাস্তা সেরে একটু ঘুরতে এসেছিলাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে কিছু পথমানুষ দেখে নিজের সঙ্গে তুলনা করে দেখলাম বোধহয় আমার মতো সুখী আর কেউ নেই।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইটে ঢোকার পথেই দেখতে পেলাম এক চাচি ও তার ছোট্ট সন্তানকে। উভয়ে খুব ক্ষুধার্ত। ক্ষুধার্ত সন্তানের বুকের পাঁজরের হাড় পর্যন্ত গোনা যাচ্ছে, বেরিয়ে আসছে শিরা উপশিরা। তার ক্ষুধার্ত মা কোথাও থেকে হয়তো দুমুঠো খিচুরি জাতীয় কোন খাবার পেয়েছিল, তা দিয়েই তার সন্তাদের ক্ষুধা নিবারণ করছেন। সন্তুানকে বুঝতে দেয়নি যে মা কতটা ক্ষুধার্ত, সন্তান খেলেই মার পেট ভরে যায়।

এভাবেই বোঝা যায় একজন মা তার সন্তানকে কতটা ভালোবাসে। খাবারটা তার সন্তান খুব আনন্দের সঙ্গেই খাচ্ছিল। আমি তাদের কাছ থেকে শুনে পরে জানতে পারলাম তাদের কোন ঘরবাড়ি নেই। গাছের নিচেই তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। করুণ সে ছবি ক্যামেরায় তুলে নিয়ে এলেও সেটা আপনাদের দেখিয়ে নিজেকে আর লজ্জিত করতে চাই না।

আবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর বৈঠকখনায় এক চাচাকে দেখতে পেলাম। চাচা আরামে সেখানে শুয়েছিলেন। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল যেন তিনি কতটা সুখী। কিন্তু তিনি কাউকে তা বুঝতে দেননি যে তিনি অনেক দুঃখী। তার জীবন দেখলেই বোঝা যায় তিনি সামান্য একটু সুখের জন্যই দুঃখটুকু ভুলে গেছেন। তার কাছ থেকে জানতে পারলাম ওখানটাই তার অবলম্বন। ওখানেই তিনি থাকেন।

চাচার স্ত্রী ও এক সন্তান রয়েছে। স্ত্রী কাগজ কুড়িয়ে কুড়িয়ে বিক্রি করেই যে কয়টাকা পান তা দিয়েই তাদের দিন চলে। কখনো কখনো চলে এক মুঠো মুড়ি, কিংবা সামান্য নুন-ভাত। কখনোবা সারাটা দিনই উপোস থাকতে হয়। আমি এদের দেখে নিজেকে প্রশ্ন করলাম, হায়রে জীবন। আমি এতো সুখী কেন?

আজ কিছু টাকা আছে বলে ভালো ভালো খাবার খাই। আর আমার পাশে বসে থাকা অসহায়ের দিন কাটছে অনাহারে। কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়ে আমরা অনেক সুখী হতে পারি, কিন্তু তারা সামান্য একমুঠো নুন-ভাত খেতে পারলেই স্বর্গীয় তৃপ্তি অনুভব করে। এটাই হলো জীবন। হায়রে মানবতা কোথায় গেছে আজ! এরকম হাজারো পথলোকজনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

এটাই কি ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন? আমরা কী তার স্বপ্ন সত্যি করতে পেরেছি? একটু নিজের বিবেককে প্রশ্ন করলেই হয়তো বোঝা যায়। সেসব থাক, এখন থেকেই যদি তাদের কোন দেখাশোনার দায়িত্ব নেওয়া হয় তাহলে একদিন তাদের জীবনও আমাদের মত সুন্দর হবে।

আমি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, আপনারা দয়া করে এসব অসহায় মানুষদের একা ছাড়বেন না। তাদের দেখাশোনা ও সামান্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করুন। তাদের কোন না কোন কর্মের দায়িত্ব দিন। কারণ তারা স্বাবলম্বী হলে স্বাবলম্বী হবে দেশ। মনে পড়ে ভূপেন হাজারিকার সেই গান, ‘মানুষ মানুষের জন্য/ জীবন জীবনের জন্য/ একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না..’।

লেখক পরিচিতি: শিক্ষার্থী, অষ্টম শ্রেণি, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজ, বগুড়া

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!