জাবি ক্যাম্পাসে জাপানি ফুলের সৌরভ

প্রতি বছরের মতো এবারও মনমাতানো থোকা থোকা ক্যাসিয়া রেনিজেরা ফুলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রকৃতি পেয়েছে নতুন রূপ নতুন প্রাণ।

ইমন ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2021, 07:57 AM
Updated : 4 April 2021, 07:04 AM

ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে এবং মার্চ-এপ্রিলে ক্যাসিয়া গাছে ফুল ফোটে। বৈচিত্র্যময় এই ক্যাসিয়া রেনিজেরার ফুলগাছ।পাতাশূন্য গাছে বিভিন্ন রঙের ফুলগুলো যেন মন কাড়ে সবার।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম আকর্ষণ হলো ক্যাসিয়া রেনিজেরা ফুল। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে এই ফুল গাছগুলোর অবস্থান। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, পুরাতন কলাভবনের ভেতরে, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে, জহির রায়হান অডিটোরিয়ামের সামনে অবস্থিত গাছগুলোতে এবারও ক্যাসিয়া ফুল ফুটেছে।

ক্যাসিয়া রেনিজেরা একটি বিদেশি ফুল। এর আদি নিবাস দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপানে। আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই ফুলগাছ ছিল না। জানা যায় ২০০০ সালের কোন এক সময় এ আর খান সর্বপ্রথম ক্যাসিয়া রেনিজেরার বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদন করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে রোপন করেন। ক্যাসিয়া রেনিজেরার ফুল ও বীজ অনেকটা শিম আকৃতির লম্বা দণ্ডের ফল। ফুলের ভেতর গোলাকৃতি আকৃতির বীজ। আতা ও ডালিম গাছের সাথে অনেকটা তুলনীয়।

ক্যাসিয়া রেনিজেরার বৈজ্ঞানিক নাম হলো বার্মিজ পিংক ক্যাসিয়া। ক্যাসিয়া গাছের উচ্চতা প্রায় ১০ মিটার হয়ে থাকে। মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই ফুল ধরতে শুরু করে। বর্ষা মৌসুম ছাড়া প্রায় প্রতিটি সময়েই ক্যাসিয়া গাছ থাকে পাতাশূন্য।

ছবি কৃতজ্ঞতা: সাজিদ ইবনে হাবীব

মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মার্চ মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থী-শূন্য ফাঁকা ক্যাম্পাসে প্রকৃতি পেয়েছে তার আপন রূপ। ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে ক্যাসিয়া রেনিজেরার ফুলগুলো। এ যেন এক স্বর্গ। ক্যাসিয়া ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ক্যাম্পাসের আশপাশে থাকা ক্যাম্পাসপ্রেমীরা ভিড় জমাচ্ছেন। এদিকে ক্যাসিয়া রেনিজেরার অপরূপ সৌন্দর্য বাস্তবে উপভোগ করতে না পেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাওসিফ আব্দুল্লাহ বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস বরাবরই সুন্দর। ক্যাসিয়া রেনিজেরা সেই সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়েছে। স্তব্ধ ভোরে ক্যাসিয়ার স্থানটিকে মনে হয় কোনো ভিনদেশের অংশ। এই পথ দিয়ে প্রতিবার হেঁটে যাওয়ার সময় অসামান্য সৌন্দর্যে মন হারিয়ে যায় কিছুক্ষণের জন্য। এই ধরনের গাছ জাবি ক্যাম্পাসে আরো থাকলে ক্যাম্পাসের রূপ আরো বাড়বে। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরণের জন্যও সহায়ক। এই সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধির কামনা রইলো।”

ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সঙ্গীতা কর্মকার তিথি বলেন, “এ ফুলটির ছবি প্রথম দেখি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা পেইজে। দেখে এক বান্ধবীর কাছে জানতে পারি এ ফুলটির নাম। অনেক মায়া আর সৌন্দর্য আছে ফুলটির মাঝে। ভেবেছিলাম গাছ যখন আছে তখন ক্যাম্পাসে থাকাকালীন একবার না একবার দেখতে পাবো এই ফুল। কিন্তু বর্তমান মহামারীতে এই মনোমুগ্ধকর ফুলে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়লেও তা দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে না আমার, যা সত্যি মনকে খারাপ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে আশা রাখছি সামনের বছর হয়তো আবার এই ফুলের দেখা পাবো ক্যাম্পাসে।”

সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, “প্রকৃতির নিসর্গ খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ক্যাসিয়া রেনিজেরার ফুল অনেক ভূমিকা রাখে। শুধু ফুল-ই নয়, এটা দেখতে অনেকটা শূন্যে ভাসা হিমবাহের মতো। জাপানের দৃষ্টিনন্দিত ও অনন্য এই ফুল দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।”

ছবি কৃতজ্ঞতা: সাজিদ ইবনে হাবীব

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মীর রাসেল বলেন, “ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বরাবরই উপভোগ করার মতো। প্রতিটি গাছপালা যেন নতুন রূপে সেজেছে। আর এই সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা এনেছে ক্যাসিয়া রেনিজেরার ফুল। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাই ক্যাম্পাসে অবস্থান করে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছে না। কিন্তু আমি বর্তমানে ক্যাম্পাসের পাশেই আমবাগানে অবস্থান করি বলে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করা হয়। বিশেষত ক্যাম্পাসের এই ক্যাসিয়া রেনিজেরার ফুলের সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ।”

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ক্যাসিয়া রেনিজেরার ফুলগুলো নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। ক্যাম্পাস নতুন রূপে সেজেছে ঠিকই তবে সে সৌন্দর্য উপভোগের কেউ নেই। করোনাভাইরাসের কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ রয়েছে। ক্যাম্পাসপ্রেমী শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই ক্যাসিয়ার সৌন্দর্য চেতনায় ও কল্পনায় ধারণ করে চলেছেন। আবারো তারা ভালোবাসার ক্যাম্পাসে ফিরে ক্যাসিয়া রেনিজেরায় মাতোয়ারা হবেন এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

লেখক পরিচিতি: শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!