ছোট্ট কাঁধে সংসারের বড় বোঝা

শিক্ষা মৌলিক অধিকার হলেও এ শিশু-কিশোররা তা থেকে বঞ্চিত। সুযোগ ও পরিচর্যার অভাবে জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা, এ বয়সেই পরিবার চালাতে বেছে নিয়েছে নানা পেশা।

আজাহার ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2021, 04:00 AM
Updated : 25 March 2021, 04:16 AM

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে এমন ২০ জন ক্ষুদে শ্রমজীবী শিশু-কিশোরদের নিয়ে ভিন্নধর্মী এক আয়োজন করেছে ‘কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব’।

ক্লাবের সভাপতি সরকার মাসুমের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন।

সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুমি নোমানের সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে নিজেদের দুঃখ-দুর্দশা-আনন্দ ভাগাভাগি করতে আসে হোটেল বয়, ভ্যানচালক, ফুল বিক্রেতা ও হকারসহ নানা পেশায় থাকা শিশু-কিশোররা। অল্প বয়সেই তাদের ঘাড়ে সংসারের বোঝা, অথচ এ বয়সে কাঁধে স্কুলব্যাগ থাকার কথা।

বাবা অথবা মা অসুস্থ অথবা পরপারে পাড়ি জমানোয় সংসারের বোঝা এসে পড়ছে এসব শিশু-কিশোরের কাঁধে। উপায় না পেয়ে বেছে নিয়েছে শ্রমজীবী হওয়ার পথ। যার মধ্যে গুটিকয়েক শিশু পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারলেও অধিকাংশই সংসারের বোঝা টানতে টানতে আর সুযোগ হয়ে ওঠে না। অথচ তাদের মনেও বাসনা, কাজ ছেড়ে স্কুলে যাবে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে। এসব স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে যায়।

ছোট কাঁধে এত বড় বোঝা চেহারা দেখলে বুঝে ওঠা মুশকিল। অন্তরের কষ্ট চাপিয়ে রেখে হাসিমুখেই সম্মোধন করতে দেখা যায় এদের। কাজের ব্যস্ততায় কথা বলার যেন ফুসরত নেই তাদের। তবু নিজের কাজকে কিছু সময়ের জন্য ছুটি জানিয়ে প্রেস ক্লাবের এ আয়োজনে যোগ দিয়েছে তারা। তাদের গল্প শুনতে অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন।

মায়া জড়ানো শিশু-কিশোররা একে একে বর্ণনা করে তাদের জীবনযুদ্ধের গল্প। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছে জিহান (৯)। আর্থিক অনটনের কারণে পড়াশোনা আর চালিয়ে যেতে পারেনি। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে।

জিহান জানায়, মায়ের যতসামান্য উপার্জন আর জিহানের সারাদিনে ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এখন তেমন আয় হয় না। ফলে সংসার চালানো আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

কাজলের (১২) গল্পটাও প্রায় এমনই। সংসারের হাল ধরতে চতুর্থ শ্রেণির পর আর পড়াশোনা চালাতে পারেনি সে। মা ও ভাই-বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে পা দিয়েছে ভ্যানের প্যাডেলে।

এদিকে তারিক (১৪) ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছে। ছাতার মতো বাবাও আলসারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। পড়ালেখার পাশাপাশি ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হয় তা দিয়েই সংসার চলে।

অনুষ্ঠানে আসা অন্যান্য শিশু-কিশোরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে প্রতিটি পদক্ষেপে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয় এ ক্ষুদে শ্রমজীবীদের। এমনকি ছোটখাটো ভুল করলেও মাঝেমধ্যে মারধরের শিকার হয় মালিকদের দ্বারা। শত কষ্ট মোকাবেলা করে দিনশেষে পরিবারের জন্য দুমুঠো আহার জোগাড় করাই তাদের তৃপ্তি। চোখে মুখে তখন দেখা যায় সন্তুষ্টির ছাপ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আয়োজক সংগঠনটির কোষাধ্যক্ষ আহসান নাঈম, দপ্তর সম্পাদক মুতাসিম বিল্লাহ পাপ্পু, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রায়হান মাহবুব, কার্যনির্বাহী সদস্য আদিল সরকার ও সদস্য আজাহার ইসলাম।

প্রেস ক্লাবের এ আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আব্দুস সালাম বলেন, “শ্রমজীবি শিশুদের নিয়ে প্রেস ক্লাবের এ আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার৷ আসলে, পুরো বাংলাদেশের চিত্রই এক। সরকারের পাশাপাশি আমরা সবাই যদি এভাবে এগিয়ে আসি তাহলে এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।”

লেখক পরিচিতি: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!