শহরের সব রাস্তাই গেছে আজ শহীদ মিনারে

ব্যাপারটা কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছেন সারার মা। সন্ধ্যা হতেই ছাদে যেতে তাড়াহুড়া শুরু করে সারা। ছাদে গিয়ে ফুল গাছগুলোর সঙ্গে সময় কাটায়।

মাসুম মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2021, 03:31 AM
Updated : 21 Feb 2021, 03:31 AM

গাছের ময়লা পরিষ্কার থেকে শুরু করে পানি দেওয়া, সব কাজ সারা একাই করতে পারে। হঠাৎ ফুল গাছের প্রতি এত আগ্রহ দেখে মা ভাবেন, কী হলো মেয়েটার! আজ সন্ধ্যায় ফল গাছগুলোতে পানি দিতে দিতে মা জিজ্ঞেস করেন, কী ব্যাপার সারা! ফল গাছগুলোর সঙ্গে বুঝি ঝগড়া হয়েছে?

মায়ের কথা শুনে সারা হাসে। ফুল গাছের যত্ন নিতে নিতে বলে, একটুও ঝগড়া হয়নি মাম্মি। কিন্তু ফুলগাছের সঙ্গে বেশি বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। হা হা হা।

মেয়েকে অমন সুন্দর হাসতে দেখে মা আর জানতেই চায়নি ব্যাপারটা আসলে কী!

সকালে ঘুম থেকে উঠে সারা তার বড় আপুর সঙ্গে ছাদে আসে। দেখে- ওমা! কি সুন্দর ফুল ফুটেছে! ফুলগুলোর গায়ে হাত বুলিয়ে একটু আদর করে। আপুকে ছাদে রেখেই দৌড়ে নিচে নামে। মাকে বলে, মাম্মি মাম্মি! দুটো ফুল ফুটেছে।

সারাকে খুশি দেখে মা বলেন, ফুল! এখন কী করবে ওই ফুলগুলো দিয়ে?

আমি আর কী করবো! করবে তো রোদ। ফুল দুটোকে জড়িয়ে ধরে আদর করবে।

রোদ বুঝি ফুলকে আদর করে?

হ্যাঁ, মাম্মি। রোদের আদর পেয়ে পেয়েই ফুল সুন্দর হয়ে উঠে। আপু বলেছে। আমিও জানি।

তুমি আর কী কী জানো?

কাল আরও ফুল ফুটবে।

কেমন করে জানলে? ফুল গাছের সঙ্গে কথা হয়েছে বুঝি?

আমরা তো রোজ কথা বলি। গাছ কী বলে জানো, মাম্মি?

কী বলে!

গাছ বলে, তুমি যেমন আমাকে আদর করে খাইয়ে দাও, গাছও ফুলকে আদর করে খাইয়ে দেয়।

গাছ বলেছে এই কথা?

বলেছে তো! আরও বলেছে, নাস্তা করেছো সারা? আমি বললাম, এখনো করিনি, তুমি করেছো? গাছ বলল, মাত্রই ফুল দুটোকে খাওয়ালাম। এবার নিজে খাবো।

সারার কথা শুনে ওর মা হেসেই যাচ্ছে। সন্ধ্যায় আবার ছাদে যায় তারা। ওপাশে সবজি বাগান দেখছেন মা আর আপু। এপাশে সারা দেখে ফুল গাছে নতুন ফুল এসেছে। খুব খুশিতে ফুলের কাছে গিয়ে বলে, কী নাম তোমার?

সারা নিজেই উত্তর দেয়, গোলাপ।

তোমার অনেক মজার গন্ধ আছে, তাইনা গোলাপ?

হ্যাঁ।

বন্ধুও আছে তোমার?

পাশের গাছে ফুল দুটোতে তাকিয়ে সারা বলে, এরাই আমার বন্ধু।

এদের কী নাম?

সূর্যমুখী। বলে সারা হি হি করে হাসে।

সন্ধ্যা পেরিয়ে ফের রাত। মায়ের সঙ্গে ঘুমুতে যায় সারা। মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আচ্ছা মাম্মি, বৃষ্টিতে গাছেরা এত যে ভিজে, বুকে ঠান্ডা লাগে না ওদের?

মা বলেন, গাছ মায়ের ঠান্ডা লাগলে কেমন করে চলবে? ফুল বাচ্চাদের কে সামলাবে তখন? গাছ মায়ের তো হাত, পা নেই। বুক দিয়েই তারা ফুলকে আঁকড়ে ধরে রাখে।

তুমিও আমাকে আঁকড়ে ধরে রাখো বুকে। আমিও তাহলে ফুল, তাইনা মাম্মি?

তুমি আমার একটা আদুরি ফুল। আমার সারা ফুল।

আবার হি হি করে হাসে সারা। বলে, আমার কাছে এলে গন্ধ পাও বুঝি?

তুমি ঘরে থাকলে পুরো বাড়ি গন্ধে মৌ মৌ করে।

জানো মাম্মি, গাছে ফুল আসছে দেখে খুব আনন্দ হচ্ছে আমার।

এ কথা শুনে মায়েরও ভীষণ আনন্দ হয়। গল্প শুনতে শুনতে সারা ঘুমিয়ে পড়ে। ছাদবাগানের ফুলগুলো তখনও জেগে আছে। একটি অন্যটির সঙ্গে কথা বলছে। খুনসুটি করছে। সূর্যমুখী মুখ ভেংচে গোলাপকে বলে, কেমন আছো কাঁটা বন্ধু?

গোলাপ তিড়িং করে ওঠে। বলে, আমায় কাঁটা বন্ধু বলবে না। আমার অনেক সুন্দর গন্ধও আছে।

সূর্যমুখী মাথা নাড়ে, ঠিক বলেছ। কিন্তু দেখো না, আমার তেমন গন্ধই নেই।

গোলাপ বলে, তাতে কী হয়েছে। তুমি দেখতে অনেক সুন্দর। তোমায় দেখলে মনে হয় সুয্যিমামা হাসছে।

হঠাৎ বাতাস পেয়ে ফুলগুলো একটু হেলেদুলে ওঠে। গোলাপ বলে, জানো সূর্যমুখী! বাড়িতে সারা ওর বন্ধুদের আমন্ত্রণ করেছে।

অবাক হয়ে জানতে চায় সূর্যমুখী, হঠাৎ আমন্ত্রণ! কেন কেন?

সারা ওর বন্ধুদের হাতে আমাদের তুলে দেবে তাই।

আমাদের পেয়ে সারার বন্ধুরা কী করবে?

বেড়াতে নিয়ে যাবে।

তাহলে খুব মজা হবে। আচ্ছা! সেখানে রোদ আছে? আমার আবার রোদ না হলে চলেই না। সূর্যমুখী বলল।

সূর্যমুখীর কথা শুনে গোলাপ হাসে। গোলাপকে হাসতে দেখে সূর্যমুখীও হাসে।

পাখির কিচিরমিচির শব্দে সারার ঘুম ভাঙে। ফুলেরা কী কথা বলছিল মনে পড়ে সারারও হাসি পায়। জানালা খুলে দেখে এক ঝাঁক পাখি। একটা পাখি জানালার সামনে দিয়ে উড়ে গেল। সারা যেন শুনতে পেল পাখিটা বলে গেছে, ছাদে যাও সারা। ওখানে মাম্মি আছে। গিয়ে দেখো কত্ত ফুল ফুটেছে।

সারা ছাদে গিয়ে দেখে সত্যি! কত্ত ফুল! খবরটা দেওয়ার জন্য মনে মনে পাখিকে ধন্যবাদ জানায়। আনন্দে থৈ থৈ করে নাচে ও। সারার এত আনন্দ দেখে মা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ফুল দেখে এত্ত আনন্দ কেন, মামণি?

সারা অবাক হয়ে বলে, তুমি দেখছি জানই না, মাম্মি! কাল একুশে ফেব্রুয়ারি। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ফুলগুলো শহীদ মিনারে দেবো তাই।

সারাদিন নানা কর্মকাণ্ড করে সারা আজ একটু আগেই ঘুমুতে আসে। সকালে কত কাজ। এক তলা, দোতলা আর পাশের ফ্ল্যাটের বন্ধুরা আসবে। শহীদ মিনারে ফুল দিতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে মাকে জড়িয়ে শুয়ে আছে ও।  সারার মাও ভাবছে, ছোটবেলায় বাড়ির বড়সড় উঠোনটায় ২১ ফ্রেব্রুয়ারির দুদিন আগে শহীদ মিনার বানানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে যেত তাদের। তারা ছোট ছোট ভাই-বোনেরা কেউ ইট জোগাড় করে আনতো, কেউ আল্পনা করতো।

বাড়ির বড়রাও লেগে পড়তো ছোটদের সাহায্য করতে। ইটের পরে ইট গেঁথে মিনার তৈরি হতো। তারপর গোল করে ইট দিয়ে তৈরি হতো বেদি। শহরের এ ছোট্ট ফ্ল্যাটে উঠোন থাকবে কি! খেলার জন্য একটু জায়গাও তো নেই। নইলে সারাকে সঙ্গে নিয়ে ঠিক একটা শহীদ মিনার বানিয়ে ফেলা যেত।

মা রোজ গল্প শুনালেও আজ চুপচাপ আছে দেখে সারা উঠে বসে। জানতে চায়, তোমার কি হয়েছে, মাম্মি? আজ একটাও গল্প শুনাচ্ছ না আমায়।

সারার দুই গালে চুমু খেয়ে মা বলেন, আমায় একটা কথা বল তো মামণি, কাল যে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ফুল দেবে; শহীদ মিনার পাব কোথায়? তোমার স্কুল বন্ধ। কাছাকাছি কোথাও শহীদ মিনার নেই। কী হবে তাহলে?

পাশ থেকে সারা ওর  ড্রয়িং খাতাটা হাতে নেয়। পাতায় পাতায় লেখা অ আ ক খ। অক্ষরগুলো কেটে কেটে ছাদবাগান সাজাবে বলে লিখেছে। খাতার ভেতরে আরও একটি ছবি দেখিয়ে বলে, বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ফুল দেবো তাই এই শহীদ মিনারটিও বানিয়েছি মা।

সারার মুখে প্রথমবার মাতৃভাষায় ‘মা’ ডাক শুনে আনন্দে বুক ভরে উঠে মায়ের।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!