নৌকা ছাড়া অন্য কোন যান নেই যে শহরে

নেদারল্যান্ডসের ভেনিস বা ডাচ ভেনিস বলে খ্যাত ‘খিটহর্ন’ আসলে একটা সাধারণ ছোট গ্রাম ছিলো। দুই হাজার ছয়শ ত্রিশজন বসবাসকারী নিয়ে ওভারাইজেল প্রভিন্সের এ শহরটির কথা অনেকেই আগে জানতো না।

তানবীরা তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2021, 04:38 AM
Updated : 19 Feb 2021, 04:38 AM

১৯৫৮ সালে বের্ট হান্সট্রা ‘ফানফেয়ার’ সিনেমার শুটিং করেন এখানে। সিনেমাটি খুব জনপ্রিয় হয়, প্রায় দুই দশমিক ছয় মিলিয়ন মানুষ এ সিনেমা হলে গিয়ে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে ‘খিটহর্ন’ এর নাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়। পর্যটন হয়ে যায় আয়ের প্রধান উৎস। বিদেশ থেকেও পর্যটক আসা শুরু হয়, বিশেষ করে প্রতিবেশি জার্মানি আর বেলজিয়াম। এটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি গ্রাম ছিলো।

১২৩০ সালে ভূমধ্যসাগর থেকে আসা শরণার্থী আর ফ্ল্যাজলেট্যান্টদের (নেদারল্যান্ডসের ছোট একটি গ্রামের অধিবাসী যাদের পেশা ছিলো মাছ ধরা আর কাদামাটি দিয়ে রাস্তা বানানো) দ্বারা এ গ্রামটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে তারা বুনো ছাগলের অনেক শিং পেয়েছিল এবং তাদের বন্দোবস্তের নাম হয় ‘খেয়েনহর্ন’। পরে এটি ‘খেইথর্ন’ নামকরণ করা হয়, যা শেষ পর্যন্ত আবার ‘খিটহর্ন’ হয়ে যায়। গ্রামে রাখা অস্ত্রের ভান্ডারে এখনও ছাগলের শিংগুলো দেখা যায়।
খিটহর্নের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় এর খনন কাজের মধ্যে। ১১৭০ সালে নেদারল্যান্ডসে প্রচণ্ড বন্যা হয়েছিলো, তাতে প্রায় সমস্ত নেদারল্যান্ডস তলিয়ে যায়। তার প্রায় একশো বছর পর একশোজন মানুষ এ অঞ্চলে বাস করতে শুরু করে। এ জায়গাটিকে বসবাসের উপযোগী করার জন্য মাটি খননকারীরা তাদের পছন্দের জায়গার একদম তলদেশ থেকে ঘাসের চাপড়া তুলে তুলে ঘাস সরিয়ে মাটিগুলোকে আলাদা পাত্রে নিয়ে মাখতেন, তারপর গর্তে ফেলে দিতেন শুকানোর জন্য।
পরে সেখান থেকে টুকরো টুকরো চাপড়া কেটে নেওয়া হতো। ঘাসের চাপড়া খননের ফলে পুকুর এবং হ্রদ তৈরি হয়েছে। চাপড়াগুলো পরিবহনের জন্য খালের পর খাল খনন করা হয়েছিল। তাতে গ্রামজুড়ে খণ্ড খণ্ড দ্বীপ তৈরি হয়। দ্বীপগুলোতে অনেক বাড়ি নির্মিত হয়। সেই দ্বীপগুলোতে কেবল সেতুর মাধ্যমে পৌঁছানো যায়। যদিও এর মধ্যে ১৭৬টির বেশি সেতু ব্যক্তি মালিকানাধীন।
যদিও শুরুর দিকে এ শহরটিই ক্যাথলিক প্রধান গ্রাম ছিলো, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিংশ শতাব্দী থেকে প্রথাগত ধর্মে অবিশ্বাসীদের সংখ্যাই এখানে এখন বেশি। খিটহর্নে ব্যবহৃত বৃহত্তম জাহাজটি ছিল ‘খিটারসে বক’ যা প্রায় বারো মিটারের বেশি লম্বা আর এর মধ্যে কেবিনও ছিলো। প্রচুর পরিমানে খড়, গবাদিপশু ইত্যাদি পরিবহনের জন্য এটি ব্যবহৃত হতো। কৃষকরা এগুলো ভাড়া নিতো, অনেকসময় পুরো বছর জুড়ে বিভিন্ন কাজের জন্য ভাড়া হিসেবে বক ব্যবহার করা হতো।
খিটহর্নের সৌর্ন্দয বেশ কয়েকজন চিত্রশিল্পীকে আকৃষ্ট করেছে। দ্য হাগেস বা লারেন্সে স্কুল, কর্নেলিস ফ্রেডেনবার্গ, ডব্লিউ.বি. থোলেন এবং জি.এফ ফান স্কাগেনের ছাত্র ছিলেন তারা। ছবি আঁকার জন্য বেশ কয়েক সপ্তাহ তারা গ্রামে অবস্থান করেছিলেন। চিত্রশিল্পী পিট জুইয়ার্স খিটহর্নে স্থায়ী হয়েছিলেন। চিত্রশিল্পী হেন্দ্রিক ব্রোয়ার খিটহর্নে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
আজকাল খিটহর্ন নেদারল্যান্ডসের জনপ্রিয় অবকাশ ও পর্যটন কেন্দ্রের একটি। বিদেশিরা ছাড়াও প্রচুর ডাচবাসী নিরিবিলি ছুটি কাটাতে চলে আসেন এখানে। সেজন্য গড়ে উঠেছে হোটেল, ভ্যাকেশান ভিলা, ক্যাফে অনেক কিছু। পায়ে হেঁটেই শহরটা পুরো দেখা যায়। মনোরোম প্রাকৃতিক দৃশ্যকে আরো মনোরোম করেছে বিভিন্ন আকারের সুদৃশ্য সব উইন্ডমিল আর সেতুর উপস্থিতি।
বিভিন্ন রকমের বোট ট্রিপের ব্যবস্থা আছে যা পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয়। আর আছে ভাজা মাছ খাবার জন্য হরেক রকম মাছ ভাজার দোকান। ফিশ অ্যান্ড চিপ্স না খেলে খিটহর্ন ট্রিপটাইতো মিছে। সব যে খিটহর্নের খালেরই মাছ তা নয়, বাইরে থেকেও আসে। এর বাইরে ন্যাশনাল পার্ক, জাদুঘর আরও কত কি আছে এখানে!

শহরের মধ্যে গাড়ি, বাস, ট্রেন কিছুই চলে না। তাই সবাইকে শহরের বাইরে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে শহরে ঢুকতে হয়। কিছু কিছু জায়গায় সাইকেল চলতে পারে, নইলে সবাই পায়ে হেঁটে কিংবা নৌকায় করে চলাচল করে।

ছবি কৃতজ্ঞতা: লেখক

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!