জেনি এখন আকাশের তারা

জেনি ফুল চেনে, ফল চেনে। শাপলা-শালুক চেনে। গাছ চেনে, পাতা ও পাখি চেনে, মাছ চেনে। চেনে বিড়াল ও ব্যাঙ।

জব্বার আল নাঈমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2021, 05:58 PM
Updated : 8 Jan 2021, 05:58 PM

জেনি সব চেনে। সবার সঙ্গে তার ভাব। যেমন একটি ব্যাঙ তার বন্ধু। ব্যাঙের যখন ক্ষুধা পায় তখন খাবার দিতে হয়। না খেলে বাঁচবে না। ছোটো জেনির মুখে এমন কথা শুনে যে কেউ অবাক হয়। ঘরে খাটের নিচে ব্যাঙ থাকে। খাবার দিত। সেখানে দিন দিন ব্যাঙের সংখ্যা বাড়ে খাওয়ার লোভে।

খুশি হয় জেনি। খাবার পেলেই খাটের নিচে চলে যেত। দেখে ফেলত মামুন ও টিনা। দু’জনেই জেনির বড়ো ভাই-বোন। লুকিয়ে লুকিয়ে ছোটো বোনকে দেখত। আম্মুকে বলে দেয়ার ভয়ও দেখাত। জেনি এসব ভয় পেত না। মুচকি হেসে খাবার নিয়ে খাটের নিচে চলে যেত।

০২

একদিনের ঘটনা। প্রতিদিনের মতো জেনি খাবার নিয়ে মাকে ফাঁকি দেয়। খাটের নিচে চলে আসে। তার মা না দেখার ভান করে। ব্যাঙগুলোও মুখিয়ে থাকে খাবারের আশায়। জেনিকে দেখামাত্রই আনন্দে লাফাতে শুরু করে। লাফ দেখে জেনিও খুশি। খাবার সামনে ধরে অনাহারীর খাওয়ার দৃশ্য দেখছে সে। হঠাৎ ডান পা ঠান্ডা অনুভব করল। হাত স্পর্শ করে। কিছুটা দড়ির মতো। মুঠো করে। সাপ। মায়ের মুখে সাপের কথা শুনেছে জেনি। সাপ ভয়ংকর প্রাণী, কামড়ে দেয়। ভয় পেয়ে চিৎকার করে জেনি। চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে মামুন, টিনা ও তাদের আম্মু। ততক্ষণে সাপ জেনিকে প্যাঁচিয়ে ধরেছে।

ছুটতে পারছে না জেনি। কান্না করছে। সাপ প্যাঁচিয়ে রেখেছে। মামুন, টিনা ও তাদের আম্মু চিৎকার করে। আশপাশের মানুষ শুনতে পায়। ছুটে আসে। ভয়ে কেউ সামনে যেতে পারল না। মামুন ও টিনা কান্না করছে। বড়োরা জেনিকে মুক্তি দেয়ার উপায় খুঁজছে। কীভাবে সাপের মুখ থেকে ছাড়িয়ে আনা যায়।

জেনির বাবাকে ফোন করা হয়। একজন বলল সাপুড়ে ডাকো। কেউ বলে লাঠি, দা ও দড়ি নাও। সাপ জ্যান্ত মেরে ছাড়ব। এই সাপ নাবিলার মুরগি খেয়েছে। ঝিনুদের ঘরে প্রবেশ করেছে। রেনুর পোষা হাঁসের ডিম খেয়েছে। ভয়ংকর সাপ! কিছুতেই ছাড়া যাবে না। সবাই যখন পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত, জেনির আম্মু দেখে- সাপ নিজেকে কিছুটা আলগা করছে। মেয়ে সাপের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আদর পেয়ে সাপ মাথা নত করে। জেনির আম্মু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

জেনি খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে আসে। পেছনে সাপও বেরিয়ে আসে। জেনি ঘর থেকে বের হয়। সাপও বের হয়। এরপর সাপ ডোবার দিকে চলে যায়। সবাই তাকিয়ে রইল। কিছুটা অবাক হয়ে। জেনিকে কোলে তুলে নেয় তার আম্মু। নাকে মুখে চুমো খায়। কপালে চুমো খায়। বুকে জড়িয়ে ধরে। জেনি হাসে। জেনির সঙ্গে টিনা ও মামুন হাসে।

আম্মু টিনাকে পড়াতে বসে বলেছে, সাপ দুধ খেতে পছন্দ করে। সেকথা জেনি শুনেছে। ঘরে দুধ থাকলে ছোট বাটিতে নেয়। তারপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে ডোবার কাছে রেখে আসে। সকালে দেখত বাটিতে দুধ নেই। জেনি খুশি হত। সন্ধ্যা হলেই সাপ চলে আসত। জেনি সাপের সামনে দুধের বাটি এগিয়ে দিত। দুধ খেয়ে চলে যেত সাপ। এজন্য ঘরের অন্যরা জেনিকে ‘সাপকন্যা’ ডাকত।

০৩

টিনার সঙ্গে পড়তে বসত জেনি। যে কোনো পড়া একবার শুনলে মনে থাকত। মা বলেছে হরিণ বনের সুন্দর প্রাণী। কারো ক্ষতি করে না। অথচ হরিণকে শিকার করে বাঘ। জেনির তখন কান্না চলে আসে। মাকে বলে, আমি বড়ো হয়ে হরিণের জন্য বাগান বানাব। চারপাশে থাকবে নকল বাঘ। ভয়ে আসল বাঘ আর আসবে না।

জেনির বাবা যখন জানতে চাইত বড়ো হয়ে কে কী হতে চাও, মামুন আগেই বলত- বড়ো হয়ে বিজ্ঞানী হব। টিনার স্বপ্ন ডাক্তার। প্রথম প্রথম জেনির কোনো স্বপ্ন ছিল না। পরে টিনাকে অনুসরণ শুরু করে। আব্বু, আমিও ডাক্তার হব। চিকিৎসা করব হরিণ, ব্যাঙ আর সাপের।

মামুন বলত- জেনি মণি, তুমি ব্যাঙ, বিড়াল, সাপ, হরিণ চিকিৎসা করবা। আমার চিকিৎসা করবা না?

জেনি হাসতে হাসতে বলত, টাকা দিলে করব।

০৪

কয়দিন ধরে জেনি গো ধরেছে, আল্লাহর সঙ্গে দেখা করবে। প্রাইভেট শিক্ষকের নামে অভিযোগ করবে। শিক্ষক চকলেট খেতে দেয় না। জেনির প্রশ্ন চকলেট খেলে কী হয়?

বেশি চকলেট খেলে দাঁতে পোকা ধরে।

জেনি আল্লাহকে বলবে, দাঁতে যেন পোকা না দেয়।

আম্মু, আল্লাহ কোথায় থাকে? কোথায় তার ঘর?

আল্লাহ আরশে থাকে। আরশ ওই আকাশে থাকে। আর আল্লাহকে দেখা যায় না।

আমিও আকাশে যাব।

আকাশ অনেক দূর। সেখানে যেতে হয় বিমানে।

প্রথমে ঢাকায় মামার কাছে যাব। মামাকে বলব, বিমানে উঠিয়ে আল্লাহর কাছে পাঠাতে। বিচার শেষে সেই বিমানে নেমে আসব। এরপর মামা আমাকে পুতুল কিনে দিবে। নিয়ে সোজা বাড়ি চলে আসব।

আল্লাহর কাছে এভাবে যাওয়া যায় না যে, মা। আল্লাহর কাছে যেতে হলে নামাজ আদায় করতে হয়। মোনাজাত দিয়ে ডাকতে হয়। তখন আল্লাহ সব শুনবেন।

তাহলে আমিও তোমার সঙ্গে নামাজ আদায় করব, আম্মু।

ঠিক আছে। প্রতিদিন আমার সঙ্গে নামাজ আদায় করবা।

০৫

অনেকদিন হয় গ্রামের বাড়িতে জেনিরা। আগামীকাল তাদের আব্বু আসবে। এরপর শহরে চলে যাবে। জেনির শহর ভালো লাগে না। সেখানে সকালে ফুল ফোটে না, পাখি ডাকে না, প্রজাপতি উড়ে না। জেনিদের গ্রামের বাড়িতে একটি বিড়াল আছে। জেনির সময় কাটে বিড়ালের সঙ্গে খেলা করে।

জেনির দাদু, আম্মু মিলে পিঠা বানায়। তখন জোহরের আজান হয়েছে। পিঠা বানানো দেখে জেনি। নামাজ আদায় করতে যায় তার আম্মু। দাদুর কাছে বসে থাকে জেনি। হঠাৎ মনে হয়, শহরে গেলে চকোলেট খেতে বাধা দেবে শিক্ষক। আল্লাহকে আগে কিছু কথা বলতে হবে।

পুকুরে ওজু করতে যায় জেনি। মামুন সেই পথ ধরে মসজিদে যাচ্ছিল। নজর পড়ে পুকুরের দিকে। জেনি ভাসছে। ছোটো মামুন ভয় পেয়ে যায়। গলা শুকিয়ে আসে। অনেক কষ্টে আমমু... বলে চিৎকার দেয়। দৌড়ে আসে মামুনের চাচিমা। পাড়ে তুলে। জেনির মা, দাদুর আহাজারি চলে। জেনির কাছে বসে কান্না করছে মামুন ও টিনা।

মামুন ভাবে, কথা বলার পাখিটা চুপটি মেরেছে। আর কোনোদিন কথা বলবে না। ভাইয়া বলে ডাকবে না। চকলেট খেতে কান্না করবে না। স্কুলে যাওয়ার পথে বায়না ধরবে না। আমার জুতা নিয়ে কাড়াকাড়ি করবে না।

টিনার বিশ্বাস জেনি হেসে ফেলবে। ধীরে ধীরে বলবে, জা নোওওও... তো মা দে র কে ভয় দেখিয়েছি। তো ম রা ভয় পাও না...? আম্মু ভয় না পেলে জেনি কান্না করবে। আম্মুকে ভয়ের ভান অন্তত করতেই হবে।

জেনি সাড়া দেয় না।

দুই ভাইবোন চিৎকার করছে, তোমার সব আবদার মেনে নেব। জেনি, তুমি ফিরে এসো।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!