চলো যাই মহাকাশ

এ পর্যন্ত মহাকাশে যারা গেছেন তারা মাত্র গুটিকয়েক ভাগ্যবান। তবে এমনটি বেশিদিন থাকবে না। তোমরা যখন বড় হবে, তখন আরো অনেক মানুষ মহাকাশে যাবে, নিয়মিতই যাবে।

শেখ আনোয়ারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2021, 05:07 AM
Updated : 5 Jan 2021, 05:13 AM

হয়তো বা তোমাদেরও কেউ কেউ সেদিন মহাকাশে পাড়ি দেবে নানা কাজে। এমন দিনের শুরু হিসেবে মহাকাশে একটা পাকাপোক্ত ল্যাবোরেটরি বানাবার কাজও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ওটা মহাকাশে থাকবে আর পৃথিবী থেকে নানা বিজ্ঞানীরা দরকার মতো সেখানে গিয়ে কিছুদিন থেকে কাজ করে আবার ফিরে আসবেন। যেমন করে দেশের বিজ্ঞানীরা বিদেশের ল্যাবরেটরিতে কিছুদিন কাটিয়ে আসেন, অনেকটা তেমনি। একদিন যখন যেতে হতেই পারে, তাহলে কেমন হবে সে যাওয়াটা? আগে ভাগে একটু জেনে নিতে দোষ কী?

তোমার যাত্রা শুরু হবে এক ধরনের ফেরি রকেটে। পুরো সফরের তুলনায় এটা তোমাকে নিয়ে যাবে সামান্য পথ। পৃথিবী থেকে কাছেই একটা মহাকাশ স্টেশন। স্টেশনটা পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে চাঁদের মতো। তবে ফেরি রকেটটিকে অবশ্য খুব শক্তিশালী হতে হবে, পৃথিবীর টানটুকু কাটানো চাইতো, তাই না?

এতে এসে বসতেই আসনের সঙ্গে বেল্ট দিয়ে তোমাকে ভাল করে বাঁধা হবে। যাতে কিছুতেই না ছিটকে যেতে পারো। এবার রকেটের দরজা বন্ধ হতেই, মহাগর্জনে প্রচণ্ড বেগে উপরে ওঠার পালা। ওঠার শক্তিটা এমন বেশি হবে যে, তা তোমাকে আসনের ওপর একদম চেপে রাখতে চাইবে। অবশ্য বেগ একবার বেড়ে যাবার পর আর ততো খারাপ লাগবে না। মহাকাশ স্টেশনের কাছাকাছি আসলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বেশ মজার জিনিস দেখতে পাবে।

ওমা! ওই বিরাট বলের মতো ওটা কি? চিনতে মোটেই ভুল হবে না। নীল সবুজ রঙের ওই বলটিই তো আমাদের পৃথিবী! ওখানেই আমাদের সবুজ বাংলাদেশ। মহাদেশ আর মহাসাগরগুলো যেখানে বেশ আলাদা চোখে পড়বে। ঠিক স্কুলের বড় গ্লোবটির মতো। অবশ্য এর ওপরের মেঘগুলো কিছু গোলমাল করতে পারে। ঘাটে লঞ্চ ভিড়াবার মতোই একটু কায়দা কসরত করে তোমার ফেরি রকেটটি গিয়ে লাগবে মহাকাশ স্টেশনের সঙ্গে। তুমি যদি আরও দূরের যাত্রী হও তবে স্টেশনে তোমাকে গাড়ি বদলাতে হবে। চড়তে হবে আর একটা দূর পাল্লার রকেট জাহাজে।

কত বড় সেই রকেট জাহাজ? তা নির্ভর করবে কত দূরে তুমি যাচ্ছো তার ওপর। যদি কাছেই চাঁদে যেতে হয়, তাহলে জাহাজটি ছোটই হবে। তবে অন্যান্য গ্রহ যদি হয় তোমার গন্তব্য, তাহলে রকেট জাহাজটিকে হতে হবে যথেষ্ট বড়। তবে যেখানেই যাও, মহাকাশ স্টেশন থেকে যাত্রা করায় আগুনের ছটা আর তর্জন গর্জন তেমন কিছুই হবে না। যেমনটি হয়েছিলো পৃথিবী ছাড়ার সময়।

কারণ পৃথিবীর মতো বিরাট টানটুকু না থাকাতে ওটা কাটাবার ঝামেলাও সেখানে নেই। তাই অনায়াসে প্রচণ্ড গতিতে পৌঁছে যাবে তোমার রকেট জাহাজ। হয়তো বা ঘণ্টায় লাখ মাইল বেগে। তুমি অবশ্য এই প্রচণ্ড বেগের কিছুই টের পাবে না। শুধু বেগ বাড়া বা কমার সময়টিতে ছাড়া। অবাক হচ্ছো? না, অবাক হবার কিছু নেই। আমাদের পৃথিবী যে আমাদেরকে নিয়ে প্রচণ্ড বেগে সূর্যের চারদিকে ছুটছে, তা কি আমরা টের পাই?

এবার রকেট জাহাজের ভেতরে তোমার কেবিনের অবস্থাটা কেমন দেখে নেওয়া যাক। যদিও বাইরে জোরালো রকেট ইঞ্জিন চলছে তার শব্দ মোটেই তোমার কানে আসবে না। কারণ ওখানে শব্দ বয়ে আনার জন্য বাতাস নেই। শুধু মহাশূন্যযানের ভেতরের ছোটখাটো যন্ত্রগুলোর শব্দই তুমি কানে টের পাবে। ওখানে একটা বড় অসুবিধা তুমি বোধ করবে। তা হলো-তোমার ওজন বলতে কিছুই থাকবে না।

আসনের বেল্ট থেকে নিজেকে মুক্ত করলেই দেখবে- তুমি পালকের মতো ভাসতে চাইছো। একটু ঠেলা খেলে তো চললে ক্যাবিনের ছাদের দিকে, কিংবা দেয়ালের দিকে খেলে একটা ধাক্কা। বড় বিচ্ছিরি অভিজ্ঞতা ওটা। বিশেষ ধরনের জুতো তোমাকে পরতে হবে হাঁটাচলার জন্য। চুম্বকের টানে হয়তো জুতোটা মেঝের সঙ্গে লেগে থাকতে চাইবে। অথবা চটচটে কোন আঠার টানে লেগে থাকবে।

বেশতো! এবার জেনে নেওয়া যাক, খাবার-দাবারের কী হবে? হ্যাঁ। বিমানে ভ্রমণের সময় যেমন ট্রেতে খাবার তোমার সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, ওখানে কিন্তু তেমনটি হবার জো নেই। তাহলে খাবারগুলো ট্রে থেকে উঠে এদিক-ওদিক চলে যাবার আশংকা রয়েছে। পানিটাও যে গ্লাসে থাকবে এমন নিশ্চয়তা নেই। তুমি তো আর সারা ঘর তাড়িয়ে বেড়িয়ে খাবার খেতে চাইবে না। তাই বিশেষভাবে তৈরি খাবার টুথপেস্টের টিউবের মতো জিনিসের মধ্যে পরিবেশন করা হবে। ওটা টিপে টিপে খাবার বের করে তারপর তুমি মুখে পুরবে। কিংবা পকেট থেকে একটা ট্যাবলেট বের করে মুখে পুরবে। ব্যস।

খাবার ব্যপারটা না হয় মানা গেলো। আরও একটা অসুবিধার ব্যাপার ঘটবে কিছু একটা ঘোরাতে গেলে। যেমন ধরো, দরজার হাতলটা ডান দিকে ঘোরাতে চাইলে আর অমনি ওর প্রতিক্রিয়ায় তোমার পুরো শরীরটা বাম দিকে ঘুরতে শুরু করে দিলো চাকার মতো। তোমাকে খাড়া রাখার জন্য ওখানে তো আর পৃথিবীর টান নেই। ওই চটচটা জুতো ছাড়া তোমার কোন গতি নেই।

এতোসব হাঙ্গামার মধ্যেই তোমাকে মহাকাশ জাহাজে কাটাবার অভ্যাস করে নিতে হবে। গন্তব্য সন্ধানে এ জাহাজ তোমাকে সরাসরি পৌঁছে দেবে না। চাঁদ বা অন্য গ্রহের কাছাকাছি যখন পৌঁছে যাবে, তখন তোমাকে আবার জাহাজ বদল করে আরেকটা ফেরি রকেট ধরতে হবে। এই বদলা-বদলির জন্য ওখানেও রয়েছে একটা মহাকাশ স্টেশন। ফেরি রকেট তোমাকে নিয়ে আস্তে গিয়ে নামবে চাঁদের বুকে, কিংবা গ্রহের বুকে কোন এক নির্দিষ্ট জায়গায়।

ওই জায়গায় তখন হয়তো থাকবে কিছু মানুষের বসতি। অন্তত কিছু বিজ্ঞানীর বসতি তো রয়েছেই। অদ্ভুত এই সফরের পর ওখানে শুরু হবে তোমার আরো বহু মজার মজার অভিজ্ঞতার। এ সফরের শেষে গিয়ে আকাশে তাকিয়ে দেখে চমকে উঠে বলবে- ওই যে পৃথিবী গ্রহ! বাহ! আমাদের পৃথিবী।

আর হ্যাঁ। পৃথিবী গ্রহটা এখন তোমার কাছ থেকে কতো দূরে? অনেক অনেক দূর। আর আকাশ? রোজ ওটা তোমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে সুন্দর একখানি গোলকের আকারে। তুমি দেখবে আর বলবে ওই তো ওইখানে আমার বাড়ি। ওই সুন্দর আলো বাতাস পানিতে ভরা গ্রহটিই আমার গ্রহ! আমার পৃথিবী। আমার বাংলাদেশ।

লেখক পরিচিতি: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!