ঠাকুরদার বাঘ শিকার
অদিতি মুখার্জী, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 04 Jan 2021 11:12 AM BdST Updated: 04 Jan 2021 11:12 AM BdST
-
কোলাজে ব্যবহৃত অলঙ্করণ: সাইরা আফরা, দ্বিতীয় শ্রেণি, সিভিল অ্যাভিয়েশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
আমার ছোটবেলা বাবার চাকরিসূত্রে রাউরকেল্লায় কেটেছে। ঠাকুমা-ঠাকুরদার বা দাদামশাই-দিদিমার সান্নিধ্য পেতাম খুউব কম।
সারা বছর অপেক্ষা করে থাকতাম কখন স্কুলে গ্রীষ্মের বা শীতের ছুটি পরবে আর আমি অনেক মাইল পেরিয়ে আসব ঠাকুরদার কাছে আর খুউব আনন্দে কাটাব। পড়াশোনা নেই, মায়ের শাসন নেই, কেবল খেলা আর ঠাকুরদার নানা রকমের অভিজ্ঞতার গল্প শোনা।
ঠাকুরদাকে আমি দাদুভাই ডাকতাম। যখন তিনি নিজের গল্পের ঝুলি নিয়ে বসতেন, আমি দাদুভাইয়ের কোল ঘেঁষে বসে গোল-গোল চোখ করে গল্পগুলো গিলতাম। দাদুভাইয়ের গল্পের ঝুলিটি ছিল অনেক রহস্যময়, মজাদার গল্পের সম্ভারে পূর্ণ।
একবার শীতের ছুটিতে গিয়ে যখন দাদুভাইয়ের কাছে গল্প বলার বায়না ধরলাম, তখন বললেন, “আচ্ছা, চল তোদের আজ আমার বাঘ শিকারের গল্প শোনাই।”
আমি উৎফুল্ল হয়ে বললাম, “বল, বল, কিভাবে বাঘটাকে মেরেছিলে।”
তখন দাদুভাই বলা আরম্ভ করলেন, “তখন আমি কোয়েটাতে, মানে বালুচিস্তানে পোস্টেড।”
আচ্ছা বলে রাখি আমার দাদুভাই রেলে চাকরির সূত্রে অনেক জায়গায় বদলি হয়ে যেতেন।
তো আবার গল্পে ফেরা যাক।
দাদুভাই আর তার এক বন্ধু একবার ঠিক করলেন তারা শিকারে যাবেন। যে সে শিকারে নয় একেবারে বাঘ শিকারে। দাদুভাই বললেন, জানিসই তো আমি কত সাহসী। আমার বুকের পাটার কত জোর তাও তোদের অজানা নয়। তা আমি ও আমার বন্ধু শুনেছিলাম যে একটা মানুষখেকো কাছেই গ্রামে খুউব উপদ্রব করছে। শুনে আমার রক্ত টগবগ করে ফুটতে লাগল।
একদিন রাতে আমরা দূরে একটা নিরালা জায়গাতে একটা গাছে মাচা বানিয়ে বসে শিকারের অপেক্ষা করতে লাগলাম। নিচে গাছের গুড়ির সঙ্গে একটা ছাগলকে বেঁধে রেখেছিলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর কাছের ঝোপে একটা খস খস আওয়াজ শুনতে পেলাম। খুউব সতর্ক হয়ে পিঠ টানটান করে বসলাম।
তখনই দুটো জ্বলজ্বলে চোখ দেখতে পেলাম। বন্দুকের নলের থেকে গুলি বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে বাঘটা খুউব জোরে গর্জন করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আমি আর রথীন, মানে আমার বন্ধু গাছ থেকে নেমে এলাম বিজয় গৌরবে।
গ্রামের সবাই আমাদের মালা পরিয়ে বরণ করল। আমি এবার ঠিক করলাম, বাঘের ছালটা ছাড়িয়ে কলকাতায় ফিরে বৈঠকখানার দেয়ালে টাঙিয়ে রাখব। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বাঘের ছাল ছাড়াতে আরম্ভ করলাম।
কিন্তু একি! গলদঘর্ম হওয়ার বদলে শীতে কাঁপতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর তোদের ঠাকুরমার ধাক্কায় ঘুম ভাঙলে দেখি, বাঘের ছাল নয়, আমি তো লেপের খোল খুলছিলাম।
বলেই হা হা হা করে হাসতে লাগলেন দাদুভাই।
আমাদের হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে, দাদুভাই দ্বিগুণ হেসে বলে উঠলেন, “কী রে কেমন স্বপ্ন দেখেছিলাম?”
আমরাও হো হো করে হেসে উঠেছিলাম।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |
সর্বাধিক পঠিত
- তোমার নামের অর্থ কী?
- পিঁপড়া ও ডায়নোসরের গল্প
- জালাল উদ্দিন রুমির ৩০টি অমিয় পংক্তি
- এ পি জে আবদুল কালামের ৩০টি অমিয় বাণী
- চারটি মজার গল্প
- পথশিশুদের নিয়ে অভিনব ‘পথের ইশকুল’
- অংক, সংখ্যা আর গণিতের খেলা
- উড়ুক্কু সাপ ও পিরামিড রহস্য: শেষ কিস্তি
- একটি ভূতের গল্প লেখার পরের ঘটনা
- বঙ্গবন্ধুর বাংলা জন্ম তারিখ কি আমরা জানি!