পুটি

বাড়িতে লবণদানীতে লবণ তোলা থেকে শুরু করে বিয়ের আয়োজন সবকিছুতেই পুটি চাই। না পুঁটি মাছের কথা বলছি না। বলছি বাড়ির ছোট মেয়ে পুটির কথা।

সানজিদা সামরিনসানজিদা সামরিন
Published : 28 Dec 2020, 03:52 AM
Updated : 29 Dec 2020, 03:09 AM

পুটির বয়স মোটে ১৫। কিন্তু পুরোই যেন গিন্নী মা। নিজের স্কুল আর কোচিংয়ের পড়া তো রয়েছেই। তার মধ্যে ঘরের কাজ যেমন- ঘর গোছানো, পর্দা লাগানো, ঝাড়ু দেয়া , মোছামুছি, দাদির ডাক্তার দেখিয়ে মেডিকেল টেস্ট করিয়ে আনা, ওষুধ খাওয়ানো, বাবার ফতুয়ার বোতাম লাগানো বা মায়ের শাড়ির কুচি গুছিয়ে আঁচলে সেফটিপিন লাগানো, শসার খোসা ছাড়ানো, বাসন মাজা, দেয়ালের ছবিগুলো মুছে লাগানো থেকে শুরু করে বড়দার বিয়ের সময় খাটের চার তক্তা এক করে লাগানোর সময়ও পুটির প্রয়োজন ছিল।

কিন্তু এইটুকু মেয়েকে কী করে বাড়ির এতগুলো কাজে লাগায় ওরা? বোধবুদ্ধি কি নেই একেবারেই? তাও সেই আরও ছোট বয়স থেকেই সে এসব করছে! কীভাবে তা বলছি এখন।

পুটি তখন কোচিংয়ে, বড় বোন গুটি বিছানায় শুয়ে ম্যাগাজিন পড়ছে। ঠিক তখনই পুটির খোঁজ করলো বড়দা, দাদিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। একা অত বয়স্ক মানুষকে নিয়ে যাওয়া যায় বুঝি? তাছাড়া সঙ্গে একটা মেয়ে মানুষ থাকা ভালো, চটপটে। গুটির ওসব হসপিটাল টসপিটাল ভালো লাগে না। তার কথা, পুটি গেলেই তো পারে! কী আর অমন কাজ, কোচিং থেকে ফিরে যাবে বড়দা, দাদির সঙ্গে। কোচিং থেকে বাড়ি ফিরতে সময় লাগে এক দেড় ঘণ্টার মতো। পুটি আসে আর যায়।

পুটির পরীক্ষা কাল। কিন্তু কালই গুটিকে দেখতে আসবে। বাড়ি ভর্তি লোক এমনিতেই আছে। ভাই, ভাইয়ের বৌ, দু’দুটো কাজের লোক। কিন্তু পাপস বদলানো, টেবিল ক্লথ পাল্টানো, বালিশের কভার আর পর্দা লাগানোর লোক পাওয়া যাচ্ছে না। কী কাণ্ড, পুটি কোথায়? আয় পুটি পর্দা লাগা, বালিশের কভার লাগা, চাদরখানা পেতে দে তো বিছানায়। আর শোন ঘরটা ঝাঁট দিয়ে দিস।

আর হ্যাঁ, নতুন প্লেট বাসনগুলো নামিয়ে ধুয়ে টেবিলে উপুড় করে রেখে দিস। রাতে পড়ে নিস পরীক্ষার জন্য। আর অতিথি আসার আগে আগে গুটিকে উপটান লাগিয়ে দিস। কী কী পরবে ঠিকঠাক করে সাজিয়ে রাখিস ওকে। পুটি ঘাড় নেড়ে যা যা ছিল সব মিলিয়ে করে নেয়।

এমনি করেই একদিন হুট করে পুটি বড় হয়ে গেল। এখন তার ২২ বছর বয়স। এক সপ্তাহ বাদে পুটির বিয়ে! ভীষণ ব্যস্ত পুটি। কেন ব্যস্ত? ওরই না বিয়ে? কনের আবার কাজ কী! নতুন ঘর নিয়েছে পুটি আর ওর হবু বর। নতুন ঘর সাজাতে কত্ত কী কেনা লাগে। সেসব কিনবে কে? কেন পুটি! ভার্সিটির ক্লাস সেরে টিউশন করায় সে।

বিয়ের অজুহাতে ছুটি নিতে পারতো, কিন্তু নেয়নি। ছাত্রীর পরীক্ষা চলছে। টিউশন শেষে কেনাকাটা করতে যায় সে, তখনও হবু বর সঙ্গে যায়। খাট, ওয়্যারড্রব, ফ্রিজ, বিছানার চাদর, পর্দা, বাসন-কোসন, বালিশ, ঝাড়ু আর যা যা আছে সব কিনছে সে রোজ একটু করে। এমনি করেই বিয়ের দিন এগিয়ে এল। বরের বাড়ি তত্ত্ব যাবে, কে সাজাবে ওগুলো? বাড়িতে বাবা, মা, ভাই, ভাইয়ের বৌ, দু’দুটো কাজের লোক। কিন্তু কারো সময় নেই।

আর পুটির তো কোনো কাজই নেই। পুটি তুইই সাজিয়ে ফেল। পুটি সাজায়। শুধু কি তাই? বিয়ে বাড়ির কত্ত কাজ- এত লোক আসবে গ্লাস প্লেট ধুয়ে উপুর করবে কে? মায়ের শাড়ির কুচি দেবে কে? বাবার পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করবে কে? সালাদ কাটবে কে? ফার্নিচার মুছবে কে? ঘর ঝাঁট দেবে কে? পুটির গায়ে উপটান মাখাবে কে? পুটির শাড়ি, চুড়ি, গয়না পরাবে কে? চুল বেঁধে দেবে কে? কেন-পুটি!

ওমা, কনে বুঝি এসব করে? কী বলে, বাড়ির সবাই ব্যস্ত না? পুটির কোনো কাজ আছে নাকি, এটুকু করতে কী লাগে! বাড়িতেই ছোট্ট করে বিয়ে হলো ছোট মেয়ে পুটির। সবাই নিজ নিজ ফোনে পুটি আর ওর বরের ছবি তুললো। এমন সময় বড়দা বলে উঠলেন- কিরে পুটি ক্যামেরায় চার্জ দিসনি? পুটি চোখ পিটপিট করে বললো- না রে দাদা ভুলে গেছি। বড়দা বিরক্ত হয়ে বললেন- ধুর, এই কাজটা অন্তত করতে পারলি না! পুটি কোনো উত্তর খুঁজে পেল না। ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো শুধু।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!