ফেরদৌসী মজুমদারের ‘পাথরের সুপ’

বই: পাথরের সুপ, ধরণ: সুইডেনের লোক-কাহিনি, অনুবাদক: ফেরদৌসী মজুমদার, প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ: রফিকুন নবী, প্রকাশক: সাহিত্য প্রকাশ, প্রথম প্রকাশ: ২০১৮, পৃষ্ঠা: ২৪, মূল্য: ৬০ টাকা

ফাহিমা কানিজ লাভাফাহিমা কানিজ লাভা
Published : 18 Dec 2020, 05:25 AM
Updated : 18 Dec 2020, 05:25 AM

এক ছিল ভবঘুরে বুড়ো। নানান জায়গায় ঘুরে বেড়াত সে। হেঁটে চলত লাঠির মাথায় একটা পুঁটলিতে চিড়েমুড়ি বেঁধে। কারণ বনে বাদাড়ে খিদে পেলে তখন খাবার পাবে কোথায়? ঘুরতে ঘুরতে যেখানে রাত সেখানেই হতো সে কাত। কোন রকমে শুয়ে বসে পার করে দিত রাতটা।

কিন্তু একবার সে মুশকিলে পড়ে গেল। ভবঘুরে বুড়ো হাঁটছিল একটা বনের ভেতর দিয়ে। হাঁটছে তো হাঁটছেই, বন আর শেষ হয় না। এক সময় সন্ধে হয়ে এল। বড় চিন্তায় পড়ল বুড়ো। চারদিকে আঁধার হয়ে আসছে- আর জায়গাটাও মনে হল বিশেষ সুবিধার নয়। ঘন বন। বাঘ ভাল্লুক সাপ খোপের ভয় আছে।

এখানে নিরাপদে কোথায় রাত কাটাবে? এতোসব বুনো জন্তু-জানোয়ারের মধ্যে রাত কাটান কি সম্ভব? বুড়োটা ভাবতে লাগলো, এ ঘন বনে কোথাও একটা ঘর যদি মিলত তবে কোনোভাবে রাতটা পার করে দেয়া যেত। বুড়ো ঘর খুঁজতে লাগল, কিন্তু যেদিকে তাকায় চারপাশে কেবল গাছ আর গাছ। শেষে কোন উপায় না দেখে ভবঘুরে বুড়ো ঘর পাওয়ার আশা ছেড়ে দিল। ঠিক করলো কোন একটা গাছের গোড়ায় হেলান দিয়ে রাতটা কাটিয়ে দেবে।

এই ভেবে বুড়ো জুতসই একটা গাছের খোঁজে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। পাশ ফিরে যেই তাকিয়েছে অমনি দেখতে পেল ছোট্ট এক বুড়িকে, তার টোপাটোপা গাল, চোখে চশমা, মাথায় স্কার্ফ বাঁধা। বুড়ি খুব মন দিয়ে চুলো জ্বালাবার জন্য শুকনো কাঠ কুড়োচ্ছিল। বুড়িকে দেখে ভবঘুরে লোকটা যেন কিছুটা ভরসা খুঁজে পেল। মনে মনে একটা বুদ্ধি আঁটল সে। চট করে মাথার টুপিটা খুলে এক গাল হেসে বুড়িকে অভিবাদন জানাল। বলল, ‘কেমন আছ গো বুড়িমা? এ বনের মধ্যে তুমি কী করছ?’

বুড়ি যেন বিরক্ত হল। বলল, ‘দেখছ না, আমি চুলো ধরাবার জন্য কাঠ কুড়োচ্ছি। কিন্তু তুমি এখানে কী করছ? কোত্থেকে এসেছ, আর কোথায়ই-বা যাবে?’

বুড়ো বলল, ‘আমি ভবঘুরে। এ জগতটাকে ঘুরে ঘুরে দেখাই আমার কাজ। তবে এখন আমি বড় ক্লান্ত। একটা ঘুর খুঁজছি, যেখানে রাতটা কাটাতে পারি। সেই সকাল থেকে খুঁজছি, কিন্তু তেমন একটা জায়গা পেলাম না।

একথা শুনে বুড়ি ঘাবড়ে গেল। সে ভাবল, বুড়োটা বোধ হয় তার ঘাড়ে চড়াও হওয়ার মতলব করছে। সে ভবঘুরে বুড়োকে বলল, ‘ও তাহলে এই ব্যাপার! তুমি থাকার জন্য একটা ঘর খুঁজছো তো? ঠিক আছে বাপু, খুঁজতে থাকো। কিন্তু খবরদার, আমার পেছন পেছন আসবে না। তোমার মতিগতি বিশেষ ভালো ঠেকছে না। এ বনে আমার বাড়ি ছাড়া আর কোনো বাড়ি নেই। মনে হচ্ছে তুমি সেখানেই উঠতে চাইছ। তবে সেটা কিছুতেই হওয়ার নয়। তাই বলছি, তুমি তোমার পথ দেখ, আর তা না হলে এই বনের মধ্যেই কোনোভাবে রাতটা পার করে দাও।’

অনেক কাকুতি-মিনতি করার পর কোনোমতে থাকতে দিতে রাজি হলেও ক্ষুধার্ত বুড়োকে কিছু খেতে দিতে রাজি নয় কিপটে বুড়ি। কিন্তু বুড়োটাও বেশ একটা বুদ্ধি বের করে। তার কাছে থাকা একটা সাধারণ পাথরকে জাদুর দাবি করে সে কিপটে বুড়ির কাছ থেকে কৌশলে মজাদার সুপ আদায় করে ফেলে। কী সেই বুদ্ধি জানতে চাইলে বইটা পড়ে ফেলতে পারো তোমরা।

‘পাথরের সুপ’ এই লোক-কাহিনিটা সুদূর সুইডেনের। গল্পে মাত্র দুটি চরিত্র- এক ভবঘুরে বুড়ো আর এক কিপটে বুড়ি। অথচ গল্পটা কি দারুণ!

লোককথার আবেদন ছাড়িয়ে যায় দেশ ও কালের সীমানা। ‘পাথরের সুপ’ লোক-কাহিনির বাংলা রূপান্তর সেই সত্য আবারও নতুনভাবে মেলে ধরলো। দূর দেশ সুইডেনের প্রচলিত এই কাহিনি ছোটদের মনে বয়ে আনে আনন্দ হিল্লোল আর এভাবেই দূর হয়ে ওঠে কাছের, পর হয়ে পড়ে আপন। দেশ বিদেশের লোককথার সঙ্গে পরিচিত হয়ে জীবনের এমনি অনুরণন অনুভব করতে পারে শিশুরা।

অবশ্য সেই কাজে নিছক ভাষান্তর নয়, দরকার কাহিনির দক্ষ রূপান্তর, যেন এক ভাষা ও এক দেশের কাহিনি আরেক ভাষা ও আরেক দেশের হয়ে উঠতে পারে সজীব, প্রাণময়। জননন্দিত সৃজনশীল অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার এক্ষেত্রে দেখিয়েছেন বিশেষ কুশলতা। অভিনয়ের পাশাপাশি শিক্ষকতায় রয়েছে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। একদিকে তিনি জানেন গল্প বলার অন্তরঙ্গ ভঙ্গি, অন্যদিকে তার আয়ত্তে রয়েছে গল্পের ভাষাকে সহজিয়া ও আকর্ষণীয় করে তোলার দক্ষতা। ফলে তার রূপান্তরে সুইডেনের লোকগল্প হয়ে উঠেছে বাংলার শিশুদের জন্য মজাদার আরেক কাহিনি।

এই বই যেমন শিশুদেরকে পড়ে শোনাবার জন্য, তেননি তাদের নিজেদের পড়বার। সুন্দর এই লোক-কাহিনির সঙ্গে মিলিয়ে চমৎকার সব ছবি এঁকেছেন রফিকুন নবী, ছোটদের মনের মতো করে ছবি আঁকায় যার জুড়ি মেলা ভার। পাতায় পাতায় ছড়ানো এইসব ছবি গল্পের রঙকে আরো রাঙিয়ে দিয়ে ছোটদেরকে জোগাবে বইপড়ার মজা। এখানেই এই বইয়ের সার্থকতা।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!