কনক নগরীর রাজা নবচন্দ্রের সমস্যা

কনক নগরীর রাজা নবচন্দ্রের সমস্যা ছিল একটাই। তিনি শোনা কথায় খুব বিশ্বাস করতেন আর সে অনুযায়ী কাজ করতেন।

সানজিদা সামরিনসানজিদা সামরিন
Published : 30 Nov 2020, 04:37 AM
Updated : 30 Nov 2020, 04:41 AM

আর এ সুযোগ নিয়ে রাজপ্রাসাদের অনেকেই নিজের সুবিধা করে নিতে দ্বিধা করতো না। রানি ও একমাত্র রাজকন্যা অনুপ্রিয়া রাজাকে এ ব্যাপারে বারবার বোঝানোর পরও রাজা কোনো কর্ণপাত করেননি। বরং হুংকার তুলে বলেছেন, রাজ্যের সবাই আমার বিশ্বাসী, ওরা নিশ্চয়ই আমার মন্দ চাইবে না।

এদিকে রাজার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দুষ্টু মন্ত্রী নিজের ছক কেটে ফেলেছে। রাজ কোষাগার থেকে অর্থ সরানো তার নিত্যকার কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ওপর মন্ত্রীর ইচ্ছে রাজকন্যা অনুপ্রিয়াকে বিয়ে করা। এতে করে ভবিষ্যতে সেই হবে কনক নগরীর রাজা! অনুপ্রিয়া কোথায় যায়, কী করে সবকিছুর খোঁজ-খবর সে রাজাকে দিত। এসব খবরের মধ্যে কিছু ভুল তথ্যও থাকতো। মন্ত্রী রাজাকে অনুপ্রিয়ার বিষয়ে এমন সব তথ্য দিত যেন রাজকন্যা বিপথে যাচ্ছে, তাকে এখনই সাবধান করা উচিত ও প্রয়োজনে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।

মন্ত্রীর প্রতিনিয়ত এসব কথা শুনে রাজা একদিন অনুপ্রিয়াকে ডেকে পাঠালেন। কঠোরভাবে তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন, এসব কি শুনছি তোমার নামে অনুপ্রিয়া! তুমি যখন তখন রাজ্যের সাধারণ মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা করছো। প্রাসাদের বাইরে সময় কাটাচ্ছো? এসব কি একজন রাজকন্যার আচরণ হতে পারে?

রাজকন্যা অবাক চোখে রাজার দিকে তাকালো, কী বলছেন বাবা? প্রাসাদের বাইরে আমি তো যাই না। আর গেলেও তো আপনার বা মহারানির অনুমতি নিয়ে তবেই বের হই।

রাজা কোনোভাবেই রাজকন্যার কথা বিশ্বাস করলেন না। বললেন, তুমি মিথ্যে কথা বলছো রাজকন্যা অনুপ্রিয়া। আমি মন্ত্রীর কাছ থেকে সব খবরাখবরই পাই। ভেবেছ আমি রোজসভায় কাজে ব্যস্ত থাকি বলে তোমার কোনো খোঁজখবর রাখি না? শোনো তুমি রাজকন্যা। তোমার কাছ থেকে নেতিবাচক আচরণ কাম্য নয়। অনুপ্রিয়া মাথা নিচু করে সব কথা শুনে বললো, বাবা বিশ্বাস করুন। যা শুনেছেন তা একদমই সত্য নয়। আমি আপনার মেয়ে আমাকে বিশ্বাস না করে আপনি মন্ত্রীর কথায় কান দিচ্ছেন?

রাজা হুংকার ছেড়ে বলে উঠলেন, একদম চুপ! মন্ত্রী এ রাজ্যের ভালো-মন্দ দেখার অধিকার রাখে। তার সম্পর্কে এভাবে কথা বলবে না। নিজেকে শোধরাও। আজ থেকে প্রাসাদের বাইরে বের হওয়া তোমার জন্য বারণ। দাসী ও দেহরক্ষী নিয়েও বের হতে পারবে না। তোমার দরজা থাকবে তালাবদ্ধ। শিঘ্রই তোমার বিয়ের ব্যবস্থা হবে। এখন যাও এখান থেকে!

রাজকন্যা অশ্রুভরা চোখে বের হয়ে এলো সেখান থেকে। সেদিন সে মুহূর্ত থেকে রাজকন্যাকে ঘরবন্দি করে রাখা হলো। রাজকন্যার ঘরে মানুষ বা পিঁপড়ে তো দূরের কথা, সূর্য আলোও যাতে না পৌঁছায় সে নির্দেশ দেওয়া হলো। কেবল একজন দাসী অনুপ্রিয়ার দেখাশোনা করতো। এভাবে বন্দি থাকতে থাকতে রাজকন্যার স্বাস্থ্যহানি হলো, স্বর্ণঝরা রূপ হারালো সে। কিছুই খেতে চাইতো না। ভীষণ অভিমান হলো তার রাজার ওপর।

এদিকে মন্ত্রী নানাভাবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে রাজাকে রাজি করিয়ে ফেললো রাজকন্যাকে বিয়ে করার বিষয়ে। রাজপ্রাসাদের সবাই হয়ত খুশি হয়েছিল। কিন্তু খুশি হলো না কেবল রানি। সে মন্ত্রীর হাবভাব একটু করে টের পাচ্ছিল। কিন্তু এত করে বোঝানোর পরও বরাবরের মতো রাজা এবারও রানির কথা শুনলেন না। শেষে বিয়ের দিন ঠিক করা হলো। রাজকন্যা এ খবর পেয়ে কাঁদতে শুরু করলো। শেষবারের মতো রাজার কাছে প্রার্থনা করলো যেন এ বিয়ে বন্ধ করা হয়।

কিন্তু রাজা একরোখা, শুনলেন না তিনি অনুপ্রিয়ার কথা। তিনি বিয়ে দিয়ে দিলেন রাজকন্যাকে দুষ্টু মন্ত্রীর সঙ্গে। বিয়ের পরদিন মন্ত্রী রাজাকে প্রস্তাব দিলো শিকারে যাওয়ার। রাজা শুনে ভীষণ খুশি। বললেন, বেশ ভালো কথা বলেছ রাজজামাই। বহুদিন শিকারে যাওয়া হয় না। কিন্তু রাজা তো জানে না দুষ্টু মন্ত্রীর ফন্দির কথা। বনে একদল ডাকাতকে আগেই তৈরি করে রেখেছিল মন্ত্রী। রাজা বনে প্রবেশ করার পর যেন তারা রাজাকে আক্রমণ করে বন্দি করে ফেলে।

ঠিক তা-ই হলো। যখন ডাকাতদল রাজাকে বন্দি করলো তখন দুষ্টু মন্ত্রী অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। রাজা প্রায় বোকা হয়ে গেলেন। বললেন, কী ব্যাপার তুমি হাসছো? আমাকে বাঁচাও! মন্ত্র বললো, বাঁচাবো তবে একটা শর্তে, আমাকে রাজ্যের রাজা ঘোষণা করতে হবে। রাজা অবাক চোখে বলে উঠলেন, কী! বিশ্বাসঘাতক! আমি তোমায় এত বিশ্বাস করেছি আর তুমি কিনা আমাকে এভাবে…।

মন্ত্রী বললেন, আরে বোকা রাজা। তোমাকে কে বলেছিল আমায় বিশ্বাস করতে? রানি, রাজকন্যা কেউই তো আমাকে বিশ্বাস করেনি। তুমিই করেছ। তুমিই আমার সব কথায় উঠবস করেছ। তাহলে দোষটা তো তোমারই! দাও এবার গোটা রাজ্য আমার করে দাও তবেই প্রাণভিক্ষা পাবে, নয়ত এখানে তোমার রাজমুকুট পড়ে থাকবে।

রাজা মন্ত্রীর কথা শুনে ‍নিজের বোকামির কথা বুঝতে পারলো। সে বুঝলো লোকে যা বলে তার সবকিছুতেই কান দিতে নেই। বিশ্বাস করতে নেই। আপনজনকে অবিশ্বাস করে লোকের কথায় বিশ্বাস করলে বিপদে পড়তে হয়।

লেখক পরিচিতি: প্রকাশিত বই ‘ব্রাজিলের রূপকথা’, ‘কল্পকাহিনী দেশে দেশে’ ও ‘আফ্রিকার রূপকথা’। বইগুলো প্রকাশ করেছে ‘ইকরিমিকরি’। বর্তমানে ‘ইকরিমিকরি’ থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকায় প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছেন।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!