ড্যানিয়েল এরিকোর গল্প: একটি নতুন তারকা

যখন এ মহাবিশ্ব ছোট ছিল তখন আকাশে গ্রহ, তারা, স্টারডাস্ট এবং অনেক পাথর বা শিলায় ভরা ছিল। এ পাথরগুলোর একটি ছিল বাকিগুলোর চেয়ে কিছুটা আলাদা।

রানাকুমার সিংহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2020, 07:03 AM
Updated : 23 Nov 2020, 07:03 AM

সে তার আগে আসা অন্য কোনোটির মতো ছিল না। পাথরটি দয়ালু এবং হাসিখুশি ছিলো, সবসময় একটি বড় নীল গ্রহের কাছাকাছি ভেসে বেড়াত। কখনো কখনো যখন আলো তাকে আঘাত করত তখন সে একটি উজ্জ্বল সবুজ রঙে আলো দিত।

আকাশ যেমন দিন দিন ও সপ্তাহে সপ্তাহে সরে যেত, শিলাটি দূর থেকে অনেক দূরে গ্রহ দেখতে পেত। সে ভাবতো যে, গ্রহদের কাছে যেতে পারলে কেমন হবে! সপ্তাহের পর সপ্তাহ এবং মাসের পর মাস সে অবাক হয়ে ভাবতে থাকে। শেষ পর্যন্ত একদিন সে গ্রহদের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

শিলাটি এর আগে কখনো কোথাও যায়নি এবং কীভাবে যেতে হবে তা নিশ্চিত ছিল না। সে পেছন ঝাঁকিয়ে দোলা শুরু করল। তারপর ঘুরতে শুরু করল। এভাবেই খুব তাড়াতাড়ি সে আকাশের মধ্য দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। সে চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে মেঘগুলো বড় নীল গ্রহে ঘুরে বেড়াল। কারণ তাকে যেতে দেখে মেঘেদের দুঃখ হয়েছিল এবং যখন গ্রহরা কাঁদে তখন সেখানে বৃষ্টিপাত বা ঝড় বয়ে যায়।

প্রথমে শিলাটি চলাচলে অভ্যস্ত ছিল না। সে ডান বা বাম দিকে খুব বেশি স্বচ্ছন্দে ঘুরতে পারত না। আস্তে আস্তে সে শিখে নিল কীভাবে যে কোন দিকে ঘুরে তার পছন্দমত ভ্রমণ করতে পারবে এবং নতুন জায়গা অন্বেষণ করাটা উপভোগ করবে।

সে একটি জলে ভরা গ্রহ দেখেছিল। কোনও মাটি দেখেনি। তারপর বালির তৈরি সৈকতসহ সবটাই শুকনো গ্রহ পেল। সে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে, এমন কোনো গ্রহের সঙ্গে সে সাক্ষাত করবে যেটি দেখতে তার মনমতো হবে। তারপর একটি গ্রহ দেখে তার ভালো লাগল, তবে গ্রহটির মন ভালো কিনা সে নিশ্চিত ছিল না।

সে একটি গ্রহে সবুজে তৈরি বন আবিষ্কার করল। অন্য একটি গ্রহ খুব লাজুক ছিল, তার সঙ্গে দেখা করার শখ ছিল না ওর। এরপর সে একটি হিমশীতল গ্রহ পেল। তারপর রত্ন ও সোনার তৈরি একটি গ্রহ দেখতে পেল।

সে লক্ষ্য করলো প্রতিটি গ্রহ আগেরটির চেয়ে উজ্জ্বল। তারা বৈচিত্র্যে আলাদা আলাদা এবং সুন্দর ছিল। তারপর সে কোথায় যাবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া তার পক্ষে কঠিন হয়ে যায়। সে যে গ্রহটি পরিদর্শন করছিল প্রতিটিই তার আগের চেয়ে সুন্দর ছিল। তাই সে কীভাবে এগোবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। কোথায় সে থিতু হবে সেটিও ঠিক করতে পারছিল না। তারপর সে ভ্রমণ অব্যাহত রেখেছিল, কোনো একটি গ্রহও সে না দেখে ফিরতে চায়নি।

অবশেষে সে বড় নীলগ্রহের কাছে ফিরে এসেছিল, যা সে একবার প্রদক্ষিণ করেছিল। কিন্তু সে দেখতে পায় যে এটি আগের মতো নেই। এটি এমনভাবে জ্বলজ্বল করছিল যা এর আগে কখনো ছিল না। এটি আগের তুলনায় আরো নীল এবং অবশ্যই আরও সুন্দর।

অলঙ্করণ: মাইশা মেহরি খান, তৃতীয় শ্রেণি

এটি তাকে মুহূর্তের জন্য থামিয়ে দিয়েছিল। ‘আমি জানি না আমার আর কোথায় যেতে হবে’ সে উচ্চস্বরে বলল। ‘প্রতিটি দিকই দুর্দান্ত গ্রহে পূর্ণ। আমি থামতে পারি না, যদি পরের গ্রহটি আরও সুন্দর হয়! এমনকি আমার বড় নীলগ্রহটি আমার অনুপস্থিতিতে প্রতিদিন আরও সুন্দর হয়ে উঠেছে।’

বড় নীলগ্রহটি এটি শুনেছিল। সে বলল, ‘আমি কেন উজ্জ্বল তা কি তুমি দেখতে পাচ্ছ না?’ শিলাটি বলল, ‘তোমার চেয়ে উজ্জ্বলতম গ্রহ আমি দেখেছি, কিন্তু আমি জানি না তোমাকে ছেড়ে চলে যাবার সময়ের চেয়ে আজ কেন বেশি  উজ্জ্বল লাগছে।’

‘তুমি আমাকে উজ্জ্বল করেছো’, নীলগ্রহ স্মিত হেসে বলল।

শিলা জবাব দিল, ‘আমি যে কেবল একটি পাথর!’

‘তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার দিনটির মতো এখন আর কোনও শিলা নও’, বলল বড় নীলগ্রহটি। ‘তুমি সাহসী এবং উজ্জ্বল হয়ে উঠেছ। এখন তুমি একটি তারকা এবং আমি চকমক করার কারণ তুমি। আর তুমি কোন দিকে যাবে তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার সময় এখন। মহাকাশের সব গ্রহ আশা করছে যে তুমি তাদের আলোকিত করার পথে আসবে।’

আর তাই নতুন তারকা, যে আর কেবল পাথর ছিল না, শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারল যে সে কোথায় গিয়েছে তাতে কিছুই যায় আসে না। আলোটি তার নিজের ছিল। তাই শিলাটি এক মুহূর্তের জন্য উজ্জ্বল নীলগ্রহটির পাশে বসল। ‘আমি কি ভ্রমণ চালিয়ে যাব, নাকি বড় নীলগ্রহের চারপাশে উড়ে প্রতিদিন তার সঙ্গে আরও উজ্জ্বল হওয়া উচিত’, ভাবল শিলাটি।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!