দাদিমাকে দেখেই সে গলা জড়িয়ে ধরে। দাদিমা হচ্ছে সানবির সবচেয়ে কাছের বন্ধু। দাদিকে কাছে পেলে ভেতরে জমে থাকা সব কথা সে দাদিমাকে জানায়। দাদিমাও সানবিকে খুব ভালোবাসেন। সানবিরা যখন গ্রামে থাকত তখন রাতে দাদিমার সঙ্গে ঘুমাত, রাতে তাদের সেকি গল্প!
দাদিমার গল্প ছাড়া তো সানবির ঘুমই আসত না। অনেকদিন পর দাদিকে কাছে পেয়ে আজ সারাদিন স্কুলে কী কী করল, বাগানের ফুলগুলো কত বড় হয়েছে এসব বকর বকর করতে করতে স্কুলের ড্রেস খুলতেই সে বেমালুম ভুলে গেছে।
মা রাশেদা খানম সানবিকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললেন। সানবি নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করে। স্কুলের পোশাক পরিবর্তন করে, গোসলটা সেরে চটজলদি দুপুরের খাবার খেয়ে নিল। খাবার শেষে দাদির রুমে গিয়ে দাদিমার গলা জড়িয়ে বসে থাকল। উদ্দেশ্য গল্প শোনা।
দাদিমা নাতনির এমন পাগলামি দেখে হাসেন। রাশেদা খানম এতে কিছু বলেন না, বরং তিনিও মুচকি হাসেন ছেলের দাদির প্রতি এমন ভালোবাসা দেখে। সানবির বাবা পেশায় সরকারি চাকরিজীবি, সে সূত্রে তারা শহরে থাকে। রাশেদা খানম গৃহিণী, সন্তানের দেখভাল করাই তার কাজ। বড় বোন ফারিহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে।
বড় বোন, মা-বাবাকে নিয়ে সানবিদের ছোট পরিবার। দাদি গ্রামের বাড়ি থাকেন। মাঝেমধ্যে এসে সানবিদের সঙ্গে থাকেন। যে কয়েকটাদিন এখানে থাকেন সানবি তার দাদিমাকে এটা ওটা বলে অতিষ্ঠ করে তোলেন। নাতনির এমন কর্মকাণ্ড তিনি বেশ উপভোগ করেন।
সানবি সেই তখন থেকে ‘গল্প বলো গল্প বলো’ বলেই যাচ্ছে। দাদি কোন উপায় না দেখে সানবিকে আরও কাছে টেনে গল্প বলা শুরু করলেন। বললেন- শোন তাহলে দাদু ভাই, এক গ্রামে সামি নামে এক ছোট লক্ষ্মীছেলে ছিলো। ছবি আঁকা তার ভীষণ পছন্দ। সে সময় পেলেই ছবি আকঁতে বসে যেত।
সানবি আবার প্রশ্ন করল, কেন দাদী মা? দাদিমা বললেন, কারণ সামির বাবা মনে করতেন সামি যদি ড্রইং এর প্রতি বেশি মনযোগী হয় তবে তার পড়ালেখার ক্ষতি হতে পারে।
ওহ। কিন্তু দাদিমা সামি তো ভালো ছাত্র ছিলো?
হ্যাঁ দাদু ভাই। সে তার ক্লাসের ফার্স্টবয় ছিলো।
তারপর? দাদিমা বলতে লাগলেন, সামিদের স্কুলে প্রতিবছর ‘যেমন খুশি তেমন আঁকো’ নামে একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা হতো। সে সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে প্রথম হলো। প্রধান শিক্ষক পুরস্কার তুলে দেওয়ার আগে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সামির আঁকা ছবিটি দেখিয়ে জানালেন যে সামি সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে এবছর প্রথম হয়েছে। তার আঁকার হাত খুব ভালো। আমাদের উচিত তাকে তার প্রতিভা বিকাশে সুযোগ করে দেওয়া।
বক্তব্য শেষে প্রধান শিক্ষক সামির হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন। সবাই করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানালো। অনুষ্ঠানে তার বাবাও উপস্থিত ছিলেন। ছেলের এমন কৃতিত্ব দেখে তিনি সামিকে নিয়ে গর্ব করলেন এবং জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলেন।
দাদিমার গল্প শেষ হতেই সানবির মনে পড়ল সামনে ওদের স্কুলে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা হবে। সানবিরও প্রিয় কাজ ছবি আঁকা। সানবির বড় বোন ফারিহা স্কুলে থাকাকালীন একবার চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলো। বোনের কাছ থেকেই সানবি ছবি আঁকা শেখে। একসময় ফারিহার সঙ্গে সে নিয়মিত ছবি আঁকত।
বন্ধুরা সানবিকে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বলে, কিন্তু সানবি কখনো কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায় না। তাই সে বন্ধুদের জানিয়ে দেয় সে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিবে না। কিন্তু দাদিমার গল্প শোনার পর তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে।
সানবি তার পড়ার টেবিলের ডেস্ক থেকে তার দশম জন্মদিনে বড় বোন থেকে পাওয়া গিফট প্রিয় রঙতুলি নিয়ে ছবি আঁকতে বসে পড়লো। তার এখন একটাই লক্ষ্য, এবার প্রতিযোগিতায় জিততে হবে।
লেখক পরিচিতি: শিক্ষার্থী, দ্বাদশ শ্রেণি, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |