বৃষ্টি হয়ে ঝরতে কেমন লাগে

তিনজন মেঘ আকাশের এক কোণে চুপটি করে বসে আছে। ওদের মন ভার।

সানজিদা সামরিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2020, 06:47 AM
Updated : 4 Nov 2020, 06:59 AM

তিনজনের রঙই ধূসর-কালো হয়ে এসেছে। আকাশের কোলে ভেসে বেড়ানোর আজই শেষ দিন। বৃষ্টির নামে ঝরে যেতে হবে এইতো কিছুক্ষণ পরই।

খানিক আগে ঝড়ো হাওয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে গেছে- তৈরি হও, সময় হয়ে এসেছে। নিজের মধ্যে সবটা শীতল জলকণা ধারণ করো। সংকেত পেলেই বৃষ্টি হয়ে গলে পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করবে।

তিন মেঘের মধ্যে সবচেয়ে ছোটজন বললো, দিনগুলো কতই না ভালো ছিল। আমরা তিনে মিলে কত কি-ই না হয়ে উঠেছিলাম। কখনো পাহাড়ের মতো, কখনো সন্ধ্যেবেলায় সূর্যদেবের কাছে গোলাপি রঙ নিয়ে হয়ে উঠতাম হাওয়াই মিঠাই। আর রাতে চাঁদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে কি-ই না ভালো লাগতো বলো!

মুচকি হেসে বড়জন বললো, হ্যাঁ রে। কিন্তু বৃষ্টি তো হতে হবেই। এটাই নিয়ম।

ছোটজন বললো, কিন্তু কেন বৃষ্টি হতে হয়! মেঘ আছি এটাই তো ভালো।

এমন সময় মেজোজন বললো, তুই এত মন খারাপ করছিস কেন রে! আমরা তো শেষ হয়ে যাচ্ছি না। কেবল মেঘ থেকে বৃষ্টির রূপ নিচ্ছি। এতদিন আকাশে থেকেছি এবার পৃথিবীতে যাব। আমাদের স্পর্শে পৃথিবীর ঘাস, লতাপাতা, গাছ সব সতেজ হয়ে উঠবে। ফসল ফলবে। প্রাণীরা অসহ্য গরম থেকে বাঁচবে। নদ-নদী, খাল-বিল নতুন জলে ভরে উঠবে। জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ নতুন করে বাঁচার আনন্দ পাবে।

ছোট মেঘ ভ্রু কুঁচকে বললো, তো? সব ওরাই পাবে? আমাদের কি নিজেদের কেবল বিলিয়েই যাব? আচ্ছা বৃষ্টি হতে কেমন লাগে?

বড়জন ছোটমেঘকে কোলের কাছে আগলে নিয়ে বললো, বৃষ্টি হতে ভালো লাগে সোনা। আর আমরা কী পাব? আমরা পাব আনন্দ আর শান্তি। নিজেকে বিলিয়ে না দিলে কি আর আনন্দ পাওয়া যায়!

এমন সময় হাওয়ার দূত এসে জানান দিলো, তৈরি হও তোমরা। সবাই একত্রিত হও। সময় হয়ে গেছে। হাওয়ার বেগ বাড়লেই তোমরা বয়ে যেতে শুরু করবে। পৃথিবীর মানুষ ও প্রাণীরা বৃষ্টির অপেক্ষায়।

একথা শুনে তিনজন মেঘ হাত ধরাধরি করে চোখ বন্ধ করলো। পাঠ করলো সেই পবিত্র বাণী-

‘আমরা মেঘদল, শীতল আর কোমল

কাউরে না হানি, রোদ্দুরে ছায়া আনি

খরা-জরা কেটে যাক, ধরা আজ শান্তি পাক

হচ্ছি আজ বৃষ্টি, হবে সুখসৃষ্টি।’

অলঙ্করণ: আয়ুষ্মান রুদ্র মজুমদার, শ্রেণি প্লে, ব্রিলিয়ান্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল

এরপর তারা হলো গাঢ় থেকে গাঢ়তর। মিশে গেলো একে অপরের সঙ্গে। ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে সজোরে উড়ে যেতে লাগলো। যেতে যেতে বোধ করলো তারা গলে যেতে শুরু করেছে। গা বেয়ে টপ টপ করে নামছে ঘামের মতো বিন্দু। যতই নিচের দিকে নামছে জলবিন্দু ততই বাড়ছে। এভাবে যখন আকাশের শেষ সীমায় নেমে এলো তখন তারা বৃষ্টিতে রূপান্তর হয়ে ঝরতে শুরু করলো।

দেখলো তাদের আগমনে মানুষ কত্ত খুশি। কেউ বাড়ির দাওয়ায় বসে আঁচল দিয়ে ঘাম মুছছে, তবে ঠোঁটে হাসি ফুটেছে। শিশুরা উঠোনে হাত ধরাধরি করে গোল হয়ে নাচছে। তাদের মুখে ছড়া ফুটেছে- ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান।’ গাছপালা মাথা দুলিয়ে পাতার সুর তুলেছে। মাটি স্পর্শ করতেই সদ্য বৃষ্টি হয়ে নামা মেঘেরা দেখলো পদ্মপাতার ওপর ব্যাঙেরা লাফিয়ে লাফিয়ে গান করছে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ।

এতগুলো আনন্দ দেখে কি আর মন খারাপ থাকে? বৃষ্টি হয়ে যাওয়া ছোটমেঘও এবার মাটিতে টুপুস টাপুস লাফিয়ে নাচতে শুরু করলো।

লেখক পরিচিতি: প্রকাশিত বই ‘ব্রাজিলের রূপকথা’, ‘কল্পকাহিনী দেশে দেশে’ ও ‘আফ্রিকার রূপকথা’। বইগুলো প্রকাশ করেছে ‘ইকরিমিকরি’। বর্তমানে ‘ইকরিমিকরি’ থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকায় প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছেন।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!