মহামারীর গল্প: চার দেয়াল
মাহবুব এ রহমান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 01 Nov 2020 10:02 PM BdST Updated: 01 Nov 2020 11:58 PM BdST
-
-
অলঙ্করণ: মুহতাসিন ফুয়াদ মাশফি, পঞ্চম শ্রেণি, বিএএফ শাহীন কলেজ
ক্রিং ক্রিং। কলিংবেল বাজছে অনবরত। কিন্তু দরজা খুলছে না কেউ। নিশুতি শুনছ, কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছে না। ভয়ে। আম্মুর ভয়ে।
আম্মুর কড়া নিষেধ কেউ কলিংবেল চাপলে কোনোভাবেই যাতে সে দরজা খুলতে না যায়৷ আম্মু ওয়াশরুমে ঢুকেছেন মাত্র। তাই চুপিচুপি পায়ে এগিয়ে যায় নিশুতি। এক পা আগায় একবার পেছনে ফিরে তাকায় আম্মু বের হচ্ছেন কিনা!
এক পর্যায়ে দরজা পর্যন্ত পৌঁছায় সে। আব্বু বাইরে দাঁড়িয়ে। মুখে মাস্ক হাতে গ্লাভস। মাস্কসহ আব্বুকে চিনতে ভুল করেনি নিশুতি। কিন্তু দরজা খোলার সাহস পায় না। গুটিগুটি পায়ে ফিরে এসে বসে পড়ে বসার ঘরের সোফায়।
ততক্ষণে হন্তদন্ত হয়ে বের হয়েছেন আম্মু। সতর্কতার সঙ্গে দরজা খুলে দিয়ে সরে গেলেন নিরাপদ দূরত্বে৷ ভেতরে প্রবেশ করেই কিছুটা রাগের স্বরে আব্বুর প্রশ্ন- এতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে? মিনমিনিয়ে আম্মুর জবাব- ওয়াশরুমে ছিলাম, সরি!
দূর থেকে চেয়ে চেয়ে দেখছে নিশুতি। কেমন অসহায় অসহায় চেহারা তার। যে নিশুতি সারাদিন অপেক্ষায় থাকতো কখন রাত নয়টা হবে আর আব্বু কলিংবেল চাপবেন। দরজা খুলেই জড়িয়ে ধরবেন তাকে। আদর করতে করতে নিয়ে আসবেন নিজের রুমে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেই দৃশ্য আজ কল্পনাতীত।
প্রতিদিনের মতো রীতিমতো আব্বু বাসায় ঢুকে সোজা বাথরুমে চলে গেলেন। বাবাকে একটু ছুঁয়ে দেখার সাহস পর্যন্ত করতে পারছে না নিশুতি। সদ্য হাঁটতে শেখা ছোটভাই বাবলুটাও কেমন বাবার আগমন বুঝে যায়। দরজা খোলার শব্দ পেলে পিলপিল করে ছুটে আসে। কিন্তু তাকে বাবার কাছে ঘেঁষতে দেয় না নিশুতি। বাবলু হয়তো বুঝে, হয়তো বুঝে না। কিন্তু কেনো যেনো সেও আর বিদ্রোহ করে না আপুর সঙ্গে।

অলঙ্করণ: মুহতাসিন ফুয়াদ মাশফি, পঞ্চম শ্রেণি, বিএএফ শাহীন কলেজ
জাতীয় শোক দিবসে স্কুলের অনলাইন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা পড়ে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে নিশুতি। কিন্তু এতসবের মধ্যেও এভাবে আর ভাল্লাগছে না তার। দাদুরাও বাসায় আসেন না অনেকদিন। এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসাটা উনাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
কেমন হাহাকার জমছে মনের ঘরে। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে নিশুতি। বিকেলে একটু করে ছাদে ওঠে। চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অপেক্ষা করে স্বাভাবিক দিনে ফিরে যাওয়ার।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!
সর্বাধিক পঠিত
- গল্প শোন বাঘের
- এ পি জে আবদুল কালামের ৩০টি অমিয় বাণী
- শিশুর হঠাৎ জ্বর, ওমিক্রন হলেও দুশ্চিন্তা নেই
- জালাল উদ্দিন রুমির ৩০টি অমিয় পংক্তি
- একটি ভূতের গল্প লেখার পরের ঘটনা
- টিকটিকির টিক্ টিক্
- মানুষের মাংস পিঁপড়ার পছন্দ
- শিশু খেতে চায় না, সত্যিই কি এটা কোন রোগ
- চারটি মজার গল্প
- শরৎচন্দ্রের ছোটগল্প: জীবনের বৃহৎ ইঙ্গিত