পুজোর গল্প: ঢাকের স্বাগত সুরে

গুনগুনের বয়স ছয়। করোনাভাইরাসের জন্য অনেকদিন থেকে স্কুল বন্ধ। বাইরে খেলতে যাওয়াও মানা। তাই প্রায় সময়ই ওর মুখটা ভার থাকে।

রানাকুমার সিংহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2020, 07:49 AM
Updated : 24 Oct 2020, 07:49 AM

এবার করোনাভাইরাস প্রকোপের মধ্যে শারদীয় দুর্গাপুজো। বাবা গুনগুনের জন্য সুন্দর জামা-জুতো এনেছেন। কিন্তু বাবা বলেছেন- এবার পুজোয় আগের মতো ঘোরা হবে না। কিছু সময়ের জন্য বাড়ির পাশের পুজোয় শুধু যাওয়া হবে। মাস্ক পড়ে যেতে হবে। সময় সময় হাতে স্যানিটাইজার মাখতে হবে।

গুনগুনের মন খারাপ। ও টিভিতে কার্টুন দেখছে। বাবা এটা দেখে বললেন- গল্প শুনবি?

কীসের গল্প বাবা? গুনগুন জানতে চায়।

দুর্গাপুজোর গল্প। গুনগুনের মুখটা উজ্জ্বল হয়। সে বলে- শুনবো বাবা।

বাবা সোফায় বসে গুনগুনের মাথা কোলে নিয়ে বলতে শুরু করেন- বুঝলি, দুর্গাপূজার ইতিহাস দীর্ঘকালের। হিন্দুপুরাণে দুর্গাপূজার শুরু নিয়ে বিভিন্ন কাহিনি পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে কোথাও কোথাও কথিত আছে, পুরাকালে রাজা সুরথ তার হারিয়ে যাওয়া রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য দেবী দুর্গার পূজা করেন।

তখন এই পূজা হতো বসন্তকালে। সেজন্য এই পূজাকে ‘বাসন্তী পূজা’ বলা হত। এখনও বাসন্তী পূজা হয়ে থাকে। কৃত্তিবাসী রামায়ণ অনুসারে রামচন্দ্র শরৎকালে সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পূর্বে একশ আটটি নীলপদ্ম সহযোগে দেবী দুর্গার পূজার আয়োজন করেছিলেন। শরৎকাল দেবতাদের নিদ্রাকাল হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কারণে রামচন্দ্রের আয়োজিত এই পূজাকে ‘অকালবোধন’ বলা হয়।

এই উপমহাদেশে সেই প্রাচীন যুগ থেকে নানারূপে দেবী দুর্গার আরাধনা হয়ে আসছে। আমরা এর মধ্যে মূলত কৃত্তিবাসী রামায়ণ বর্ণিত রামচন্দ্রের অকালবোধনকেই নিজেদের শারদীয় দুর্গোৎসব হিসেবে বেছে নিয়েছি। দুর্গোৎসবের পটভূমি অপূর্ব সুন্দর। বর্ষাঋতু বিদায় নেওয়ার পর নীলাকাশ ঝকঝকে রোদে সেজে থাকে। শিশিরভেজা দুর্বাঘাসে ঝরে পড়া শিউলি ফুলের গন্ধে মেতে ওঠে মন। তুলোর মতো সাদা কাশফুল ভরে ওঠে মাঠ-ঘাট আর নদীর পারে।

হয়ত এমনই এক মনোরম পরিবেশে সব অশুভ বিনাশের জন্য শরৎকালে দেবী দুর্গার অকালবোধনের আয়োজন করেছিলেন রামচন্দ্র। আমরা প্রতি শরতে মা দুর্গার বোধন করে সেই ঐতিহ্যকে আজও বহন করে চলছি।

গুনগুন বাবার কথা তন্ময় হয়ে শোনে। সে বলে- আচ্ছা বাবা, দুর্গা মায়ের দশ হাতে দশটি অস্ত্র থাকে কেন?

বাবা তার এ প্রশ্ন শোনে খুব খুশি হন। তিনি বলেন- তাহলে শোন্, এই দশটি অস্ত্রের অর্থ।

শঙ্খ: বরুনদেব দুর্গা মাকে শঙ্খ দিয়েছিলেন। পুরাণ মতে, শঙ্খের থেকে যে শব্দের উৎপত্তি হয় তার থেকেই জীব জগতের সমস্ত প্রাণের সৃষ্টি। সৃষ্টির প্রতীক এই শঙ্খ।

চক্র: মা দুর্গার হাতে যে চক্র ঘোরে তা দিয়েছিলেন বিষ্ণুদেব। চক্রের অর্থ হলো সমস্ত সৃষ্টির কেন্দ্রে দেবী দুর্গা।তাঁকে কেন্দ্র করে সমস্ত বিশ্ব আবর্তিত হচ্ছে।

পদ্ম: মায়ের হাতের পদ্ম সুন্দর একটি বার্তা দেয়। পদ্ম খারাপ জায়গায় জন্মালেও কত সুন্দর। তেমনই মায়ের আশীর্বাদে অসুরকুলও তাদের ভেতরের অন্ধকার থেকে যেন মুক্ত হয়, এই বার্তাই দেয় পদ্ম ফুল।

তলোয়ার: তলোয়ারের ধার যেন আসলে মানুষের বুদ্ধির ধার। এই ধার দিয়ে যেন সমাজের সমস্ত বৈষম্য মানুষ জয় করতে পারে।

গদা: গদা দিয়েছিলেন যমরাজ। দণ্ড আনুগত্য, ভালবাসা এবং ভক্তির প্রতীক।

অশনি: অশনি বা বজ্র দিয়েছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র। মায়ের হাতের বজ্র দৃঢ়তা ও সংহতির প্রতীক। এই দুটি গুণেই মানুষ জীবনে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হয়।

সাপ: নাগরাজ দেবী দুর্গাকে সাপ দিয়েছিলেন। সুন্দর চেতনার চিহ্ন এই সাপ।

অগ্নি: অগ্নিদেবের দেওয়া অগ্নি জ্ঞান এবং বিদ্যার প্রতীক।

তীর-ধনুক: বায়ুদেবের দেওয়া তীর-ধনুক। শক্তির চিহ্ন।

  ত্রিশূল: ত্রিশূল দিয়েছিলেন বাবা মহাদেব। ত্রিশূলের তিনটি তীক্ষ্ণ ফলার তিনটি আলাদা আলাদা অর্থ আছে। মানুষ তিনটি গুণের সমন্বয়ে তৈরি। ত্রিশূলের তিনটি ফলা এই তিনটি গুণকেই নির্দেশ করে।

বুঝলি কিছু মা-মণি! বাবা বললেন। কিন্তু বাবার মুখে এতো সুন্দর কথা শুনতে শুনতে গুনগুন যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে তা কেউ টেরই পায়নি।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!