বই: লিলিপুটরা বড় হবে, ধরণ: কিশোর উপন্যাস, লেখক: মঈনুল আহসান সাবের, প্রথম প্রকাশ: ১৯৯০, প্রকাশনী: দিব্য প্রকাশ, মূল্য: ১০০ টাকা
গল্পটি একদল কিশোরের। কিশোর পাঁচজন হলো বাবু, আসিফ, ইশতিয়াক, শামীম আর গল্পের বক্তা অমি। তারা একে অপরের বন্ধু।
এখন সবাই এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে গ্রীষ্মের ছুটিতে আছে। পরীক্ষার আগে প্ল্যান করেছিল অনেক জায়গায় ঘুরবে, বেড়াতে যাবে। কিন্তু যাওয়া হয়নি। এই দোষ একে অপরের উপর চাপাতে থাকে যে ওর-এর জন্য যাওয়া হয়নি।
তারা মল্লিকদের বাগানে বসে ছিল। সেখান থেকে একটু দূরে শহরের ঠিক মাঝখানে একটা বাজার। ওখানে হেঁটে যাওয়ার সময় হৈচৈ শুনতে পায়। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে কিছু মানুষ জটলা পাকিয়ে আছে। তারা দেখতে পায় টাকা চুরির অপরাধে এক দোকানের কর্মচারীকে তার ম্যানেজার মারধর করছে।
কিন্তু কর্মচারী বলে তখন সে বাইরে ছিল। কিশোরের দল ছেলেটার উপর অমানবিক অত্যাচার দেখে ব্যথিত হয়, তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ করতে থাকে যে ছেলেটা নির্দোষ, ম্যানেজার টাকা চুরি করেছে। কিন্তু এটা বলে ছেলেটাকে তারা কিভাবে উদ্ধার করবে ভেবে পাচ্ছে না। কখনো পুলিশে নালিশ, কখনো বাজার সমিতির কথা ভাবছে।
এমন সময় দুজন রিকশাচালক তাদেরকে বিচার করার কথা বলে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। কিশোররা ভাবে কাজটি তাদের করার দরকার ছিল। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতার কারণে করতে পারলো না। তাদের ব্যর্থতার দৃশ্যে করিম স্যারের কথা মনে পড়ে গেল। অমি জানায় করিম স্যার পাগল হয়ে গেছেন। স্যারকে পাবনা মেন্টাল হসপিটাল থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তারা আফসোস করতে থাকে তাদের ব্যর্থতার কথা ভেবে। তারা কেবল স্মৃতিচারণ করতে থাকে।
কিশোররা তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। স্কুলটি এইট থেকে টেন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এতে স্কুলের সবই খুশি, মিলাদও হয়। নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। তার মধ্যে ছিলেন করিম স্যার। করিম স্যার ইংরেজি পড়ান। প্রথমদিন এসে তিনি সবার পরিচয় নিয়ে ইংরেজি বইয়ের গ্যালিভার্স ট্রাভেলস পড়ানো শুরু করেন। লেখক জোনাথান সুইফটের পরিচিতি দিয়ে পরে গল্প বলা শুরু করেন।
স্যারের পড়ানোর মধ্যে একটা মাধুর্য মেশানো। পরদিন স্যার লেসন শুরু করেন। তিনি বলেন সমাজে তিন ধরনের মানুষ আছে। গরীব, মধ্যবিত্ত ও ধনী। গরীবদের তিনি লিলিপুট, মধ্যবিত্তদের গ্যালিভার, ধনীদের ব্রবডিংনাগ বলেন। লেখক জোনাথান সুইফট প্রতীকী অর্থে উচ্চতায় ছোট মানুষকে লিলিপুট, স্বাভাবিককে গ্যালিভার আর বড়দের ব্রবডিংনাগ আখ্যায়িত করেন।
ছুটির ঘণ্টা বেজে যায়। স্যারের ছেলে অরুপ অনেক আদুরে। তাকে অনেক সময় দেন স্যার। খেলাধুলা করেন, গা করেন, গল্প করেন। স্যার বাসায় খবরের কাগজে দেখতে পান এলাকার আফতাব মোল্লা মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দ্বিগুণ টাকা দিচ্ছে। স্যার অত্যন্ত আদর্শবান একজন মানুষ। স্যারের খটকা হয় যে সে কিছুদিন কয়েকজনকে দ্বিগুণ টাকা দিবে, পরে টাকা আত্মসাৎ করবে।
এই ভাবতে ভাবতেই একজন মুরুব্বি করে লোক আফতাব মোল্লাকে টাকা দেবে কিনা জানতে এসেছে। স্যার লোকটিকে বুঝিয়ে বলে, আফতাব মোল্লা কিছুদিন কয়েকজনকে দ্বিগুণ টাকা দিবে, পরে টাকা আত্মসাৎ করতে পারে। কষ্টে অর্জিত টাকাকে লোভে নষ্ট করতে নিষেধ করলেন স্যার। এই কথা আফতাব মোল্লার চ্যালাপ্যালাদের কানে যায় যে স্যার মানুষকে টাকা দিতে বাধা দিচ্ছেন। ওই স্কুলেরই ঢ্যাঙা বাবুল রাস্তায় অমি ও ইশতিয়াককে নাজেহাল করে এবং স্যারকে ‘লিলিপুট স্যার’ বলে হুমকি দেয়।
স্যার একদিন ক্লাসে এসে মনমরা হয়ে বলে তাকে নাকি সবাই ‘লিলিপুট’ বলে ডাকছে। তিনি বলেন- সত্যিকার অর্থে আমি তো লিলিপুটই, কারণ আমি গরিব মানুষ। এসব নিয়ে কিশোররা আলোচনা করে যে স্যারকে লিলিপুট বলা নিয়ে কী করা যায়। ঠিক তখন আসিফ দৌড়ে হাপাতে হাপাতে এসে বলে করিম স্যার অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন। স্যার অরুপকে নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছিলেন, আফতাব মোল্লার গাড়ি পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে। স্যারের তেমন কিছু হয়নি, তবে অরুপের অবস্থা ভালো না।
তারা সবাই দৌড়ে হাসপাতালে যায়। ডাক্তার বের হয়ে স্যারকে দ্রুত ঢাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বলেন, এখানে অভিজ্ঞ ডাক্তার ও উন্নত চিকিৎসা যন্ত্রপাতি নেই। অরুপকে রহমান স্যার ও একজন ডাক্তারের সঙ্গে মাইক্রোবাসে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। অমির বাবা আফতাব মোল্লার কাছে অরুপের চিকিৎসা খরচ চাইলে আফতাব মোল্লা অস্বীকার করে বলে সে তখন এলাকায় ছিল না।
অরুপের লাশ ঢাকা থেকে ফেরত আসে। আফতাব মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও সঠিক প্রমাণের অভাবে ন্যায়বিচার হয় না। করিম স্যার ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন। নিজেকে অরুপের কাছে অক্ষম ভাবতে থাকেন। স্যার কিশোরদের একটা মিটিং আয়োজন করতে বলেন। স্যার সেখানে সাধারণ মানুষের কাছে বিচার চান, কিন্তু ব্যর্থ হন।
কিশোররা এই অন্যায়ের প্রতিবাদে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। তাদের ভীরুতা ও সিদ্ধান্তহীনতা তাদের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা একসঙ্গে স্যারকে দেখতে গেলে স্যার তাদের চিনতে পারেন না।। কারণ তিনি সদ্য পাবনা মেন্টাল হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন। এখন করিম স্যার নিজেকে জোনাথান সুইফট ভাবেন এবং নতুন লিলিপুটদের কথা লিখতে চান।
যারা ভীতু হবে না, অন্যায়কে প্রতিহত করবে, সাহসী হবে, লিলিপুটরা গ্যালিভারদের সাহায্য ছাড়াই ব্রবডিংনাগদের মুখোমুখি হবে। করিম স্যার প্রশ্ন তোলেন, লিলিপুটরা কবে বড় হবে?
লেখক: ছাত্র, দ্বাদশ শ্রেণি, বিজ্ঞান বিভাগ, বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!