ফেলনা দিয়ে তৈরি প্যারাসুট ও যুদ্ধ ট্যাংক

করোনাভাইরাসের প্রকোপে স্কুল বন্ধের অবসরে একটানা এতোদিন ঘরে বসে থাকতে কার ভালো লাগে। এসময় হাতের কাছে থাকা টুকিটাকি জিনিস দিয়ে যদি কিছু একটা বানানো যায়, তাহলে তো ভারি মজা হয়, তাই না!

শেখ আনোয়ারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2020, 09:42 AM
Updated : 21 Sept 2020, 09:43 AM

তো আজ আমরা জানবো ঘরে বসে প্যারাসুট ও যুদ্ধ ট্যাংক বানানোর পদ্ধতি।

প্যারাসুট কীভাবে বানাতে হয়?

এক টুকরো বর্গাকৃতির টিস্যু পেপার নাও। টিস্যু পেপারটির চারদিকটা দশ ইঞ্চি সাইজের হলে ভালো হয়। এবার টিস্যু পেপারের চারকোণায় চারটি সুতা আটকিয়ে দাও স্কচ টেইপ অথবা পেপার টেইপ দিয়ে। সুতার টুকরোগুলো লম্বায় চার ইঞ্চি হলে ভালো মানানসই হবে।

এবার সুতার আলগা চারটি প্রান্ত একত্র করে শক্ত করে গিঠ দাও। এবার পরীক্ষা করে দেখো তো সুতাগুলো লম্বায় সমান সমান আছে কিনা। যদি থাকে তাহলেই কেবল দুটো পেপার ক্লিপ গিঠের সঙ্গে আটকিয়ে নেবে। এবার তোমার কাগজের প্যারাসুট আকাশ থেকে ধীরে ধীরে নিচে নামার জন্য প্রস্তুত।

ব্যস। এবার প্যারাসুটটি উঁচু স্থান থেকে ছেড়ে দাও। যদি দেখো যে, তোমার প্যারাসুটটি উল্টাপাল্টা ভাবে উড়ছে, তাহলে কি করবে! চিন্তা নেই। প্যারাসুটের মাথায় ছোট্ট একটি ছিদ্র করে নাও। এবার দেখা যাবে আর কোন সমস্যা নেই। অত্যান্ত চমৎকার উড়তে থাকবে তোমার হাতে বানানো প্যারাসুট।

তবে হ্যাঁ। তোমার হাতে বানানো প্যারাসুটে আকাশ থেকে মানুষ নামতে পারবে না তা সত্যি। তুমি যে অমন প্যারাসুট নিজ হাতে বানাতে পেরেছো তাতেই বা আনন্দ কম কিসে!

যুদ্ধ ট্যাংক কীভাবে বানাতে হবে?

উপরের চিত্রটির মতো করে নাটাইয়ের মাঝখানটা কেটে নাও। এখন কাটা নাটাইটির গায়ে সিন্থেটিক অ্যানামেল পেইন্ট দিয়ে ভালো করে রঙ করে নাও। এই রঙ সাধারণত আধা ঘণ্টার মধ্যে এমনিতেই শুকিয়ে যায়। তবে তুমি যদি আরও কম সময়ে শুকাতে চাও তাহলে রঙ করা বোতলটিকে কিছুক্ষণ রোদে  রেখে দাও। ব্যাস।

রঙ শুকানোর পর নাটাইয়ের নিচের অর্ধেক অংশে দুটো ছিদ্র করে নাও। ছিদ্র দুটোতে পেন্সিলের মত গোলাকার কাঠ, কিংবা বাঁশের কঞ্চি ঢুকিয়ে দাও। চিত্র দেখো। এবার নাটাইয়ের এই ছিদ্র দুটোর সমান্তরাল করে নাটাইয়ের অন্য প্রান্তে আরও দুটো ছিদ্র করো।

তাতে আরেকটি পেন্সিলের মতো গোলাকার কাঠি অথবা কাঠ, কিংবা কঞ্চি ঢোকাও। ছিদ্র দিয়ে বের হওয়া প্রতিটি কাঠির মাথার শেষ দিকে একটি করে সর্বমোট চারটি সুতার রিল (যা সুতা শেষ হবার পর ফেলনা হিসেবে এমনিতেই পড়ে থাকে) ঢোকাও। সুতার রিলগুলো খুব শক্ত আঠা দিয়ে কিংবা টেইপ দিয়ে আটকে নাও। মনে রাখবে এগুলো ট্যাংকের চারটি চাকার কাজ করবে।

আর হ্যাঁ। তোমাকে নিশ্চিত হতে হবে, সুতার রিলগুলো যেনো সহজেই ঘুরানো যায়। এবার দুই টুকরো মোটা ও শক্ত আর্ট পেপারকে ঢেউ খেলানোর মতো করে ভাঁজ করে সুতার রিল চারটি মুড়িয়ে দাও। অবশ্যই আর্ট পেপারের শেষ মাথা সমান্তরালভাবে আটকিয়ে দেবে টেইপ দিয়ে। এই আর্ট পেপার ট্যাংকের চেইন হিসেবে চাকা দুটোকে একসঙ্গে ঘুরাতে সহায়তা করবে।

এবার তোমার ইচ্ছে মতো রঙিন কাগজ দিয়ে ট্যাংকের হেডলাইট ও ট্যাংকের উপর সৈন্যদের বসার মতো আসন কিংবা ছাউনি নিজের ইচ্ছে মতো নকশা করে বানিয়ে নিতে পারো। ট্যাংক তৈরি হয়ে যাবার পর একটা লম্বা সুতা লাগিয়ে, সেটিকে যখন টেনে নিয়ে যাবে তখন গর্ব আর আনন্দে ভরে উঠবে তোমার বুক।

ফেলনা জিনিস দিয়ে এরকম অনেক কিছু বানাতে বানাতেই বিজ্ঞান বিষয়ক নানা মজার খেলা তৈরির হাত এসে যাবে তোমার।

লেখক পরিচিতি: শিশুদের মাঝে বিজ্ঞানকে সহজ ও জনপ্রিয়করণের কাজে নিবেদিত শেখ আনোয়ার। শিশুসাহিত্য ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নিয়ে লেখালেখি করছেন প্রায় দুই যুগ ধরে। শিশু অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কারজয়ী এ লেখকের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬৪।