ছোটগল্প: বোনের মোবাইল

অপুর বড় বোন প্রায় পাগল হয়ে গেছে। সে এতক্ষণ চিৎকার করেছে আর এখন গোমড়া মুখে বসে আছে। কারণ হলো তার মোবাইল চুরি হয়েছে।

আইনুন নাহার বুশরাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2020, 04:01 AM
Updated : 15 Sept 2020, 04:13 AM

সবাই এখন এক রুমে বসে মোবাইল চুরির ঘটনাটা নিয়ে আলোচনা করছে। অপু এ ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী। অপুর ভাষ্যমতে সে যখন তার আপুর রুমে গেলো তখন দেখল জানালার গ্রিল ধরে সুপারহিরোদের পোশাক পড়া একজন মানুষ ঝুলে আছে। সে হাত বাড়িয়ে আপুর মোবাইলটা নিয়ে উড়ে গেল।

অপু তার মুখ দেখতে পারেনি, কারণ তার মুখেও হিরোদের মতো মাস্ক ছিল। এ কাহিনি বিশ্বাসযোগ্য না হলেও প্রায় সবাই বিশ্বাস করল। আব্বু বলছে, কেউ নিশ্চয়ই অন্য কোনোভাবে চুরি করেছে, কিন্তু অপু বেশি বেশি গল্পের বই পড়ায় এরকম কাহিনি কল্পনা করে নিয়েছে।

ছোট মামা অবশ্য এতে একমত না। তার ধারণা চোরেরা হিরোর ছদ্মবেশে উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে চুরি করতে। মামা এর থেকে পরিত্রাণের উপায় ইতিমধ্যে কয়েকটা বেরও করে ফেলেছে। আর আম্মু নিশ্চিত এটা জ্বিনের কাজ। আম্মু নাকি আগেই সন্দেহ করেছিল এ বাসায় জ্বিন আছে। এখন তো সেটা প্রমাণই হয়ে গেল! দশতলার জানালা দিয়ে মোবাইল নিতে শুধু জ্বিনেরাই পারে। আম্মু ভাবছে আজই বড় কোনো হুজুরের সন্ধানে নামবে।

কিন্তু আপুর ধারণা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আপু বলছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ফ্যান ফলোয়ার দেখে কারো হিংসা হয়েছে বলেই এ কাজ করেছে। আপুর বান্ধবীদের কেউ হওয়ার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ। ছোটমামা নাকি মোবাইল বের করার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে। মামা আশা করছে মোবাইল কালকের মধ্যেই পাওয়া যাবে। কিন্তু এগুলো বলে আপুকে মোটেও খুশি করা যাচ্ছে না। কারণ এ মোবাইলটা আপু এসএসসিতে বৃত্তি পাওয়ায় বড় মামা দিয়েছিল বিদেশ থেকে।

কিন্তু আপুর অপব্যবহারের কারণে আম্মু-আব্বু বলেছে আপুকে মেডিকেলে চান্স না পাওয়ার আগে আর মোবাইল কিনে দেওয়া হবে না। এখন এ মোবাইল যেহেতু শেষ, আপু এখন থেকে সম্পূর্ণ মোবাইলহীন। মোবাইল পাওয়ার পর পড়ালেখাকে বিদায় জানিয়ে এতদিন আপু সারাদিন একেকবার একেক রকম জামা পড়ে সেজেগুজে ছবি তুলতো আর ভিডিও বানাতো। তাই সবাই মনে মনে একটু খুশিও। মোবাইলের বাইরেও যে একটা জগৎ আছে সেটা আবার দেখতে শিখবে আপু!

২.

প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে মোবাইল চুরি যাওয়ার পর। মোবাইলের কোনো হদিস এখনো পায়নি। যদিও ছোটমামা এখনো আশাবাদী। বাসার সবাই আজ বাইরে। অপু শরীর খারাপ বলে বাসায় একা রয়ে গিয়েছে। অপু টেবিলের ড্রয়ার থেকে আপুর মোবাইলটা বের করল। এটা মোটেও নিরাপদ জায়গা নয়। অপু এতদিনে খুঁজে খুঁজে একটা নিরাপদ জায়গা বের করেছে। আজকের এ সুবর্ণ সুযোগটা সে ফেলে দিতে পারে না।

সে মোবাইলটাকে পলিথিন দিয়ে প্যাঁচিয়ে একটা মুখবন্ধ বাক্সে ভরে স্টোররুমে কিছু পুরনো জিনিসের সঙ্গে রেখে দিল। এখানে আম্মুর কথিত জ্বিনেরা বাদে কেউ যাবে না। অপু একা একাই হাসলো। হিরোর গল্পটা সে ভালোই বানিয়েছে! অপু কিন্তু চিন্তা-ভাবনা করেই সব করেছে। অপু হচ্ছে হিরো। অপুর হয়তো ডানা নেই। কিন্তু হিরোদের কাজ হলো সবাইকে বাঁচানো। অপুও কিন্তু তার আপুকে বাঁচিয়েছে।

কিন্তু কারণটা এখন বললে আপু বুঝবে না। তাই আপু যখন মেডিকেলে চান্স পাবে, তখন সে আপুকে মোবাইলটা দিয়ে বলবে যে অপুই হলো সেই হিরো আর আপুর ডাক্তার হওয়ার পেছনে অপুর অবদান অনস্বীকার্য।

লেখক পরিচিতি: শিক্ষার্থী, দ্বাদশ শ্রেণি, উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!