ছোটগল্প: ভূতেদের ভয়

মিমির অনেক ভয় করছে। এ কয়দিন হলো সে একা একা ঘুমাচ্ছে। আর এখনি এই ভৌতিক কাণ্ড!

আইনুন নাহার বুশরাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2020, 04:31 AM
Updated : 4 Sept 2020, 04:31 AM

মিমি এই গরমেও কাঁথাটা আরো ভালোভাবে জড়িয়ে নিল। সে কি করবে বুঝতে পারছে না। আব্বু আম্মু ঘুমাচ্ছে। তাদের কে ডেকে ঘুম ভাঙানোর কোনো মানে হয় না। এদিকে এই অবস্থায় মিমি ঘুমাতেও পারছে না। এইতো! আবার হচ্ছে আওয়াজ! ঠিক মিমির খাটের নিচ থেকেই।

তাদের বাসায় তো ইঁদুর নেই! তাহলে আওয়াজ করছে কিসে? এটা নিশ্চিত ভূতের কাজ। মিমি কখনো ভূত না দেখলেও ভূতের অনেক কাহিনি শুনেছে। ভূতকে একবার ধরতে পারলে কেমন হবে? মিমি শুয়ে শুয়ে একটা বুদ্ধি বের করল। সে ভয় পাবে না। ভয় তো পায় বোকারা!

সে নেমে গিয়ে লাইট জ্বালালো। খেলনার ঝুড়ি থেকে কাঠের ব্যাটটা হাতে নিয়ে সাহস করে খাটের নিচে তাকালো। ভূতের বাচ্চাকে পিটিয়ে চ্যাপ্টা করে দিবে একেবারে! কিন্তু কই? ভূত কোথায়? খাটের নিচে এক ইঁদুর ছানা! মিমি ভূত দেখলেও এত অবাক হত না। ইঁদুর এল কোথেকে? আর ইঁদুর এমন আওয়াজই করল কীভাবে? মিমিকে দেখেই ইঁদুর দৌড়ে পালাল। মিমি নিজের মনে হাসল। আব্বু আম্মু তো ঠিকই বলে, ভূত আবার কি জিনিস? মিমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে গেল।

২.

গভীর জঙ্গলে ভূতেদের সভা বসেছে। ভূতেদের সর্দার গিবাগিবা প্রতিদিন সভায় সব ভূতেদের থেকে হাজিরা নেয়। ভূতেরা একজন একজন করে বলছে কে কীভাবে বাচ্চাদের ভয় দেখিয়েছে।

একজন বলছে আর বাকি সবাই হেসে কুটিকুটি! কে কার আগে বলবে এ নিয়ে রীতিমত এক প্রতিযোগিতা চলছে। শুধু চুপ করে এক কোণায় ভীত মুখে বসে আছে টোটো। ভূতেরা বাচ্চাদের ভয় দেখায়। কিন্তু ভূতকে কে ভয় দেখাতে পারে যে টোটো ভয় পেয়ে আছে?

সবার বলা শেষ হলে টোটোকে গিবাগিবা বলল- টোটো আজকে এত চুপচাপ কেন? তুমি নিশ্চয়ই আজকে অনেক বেশি ভয় দেখাতে পেরেছ? তাই চুপ করে বসে আছ যাতে সবার শেষে বলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে পারো?

সবাই হাততালি দিয়ে উঠলো। টোটো কাচুমাচু মুখে বলল- মহান গিবাগিবা! আমায় ক্ষমা করবেন। আজ আমি বিফল হয়েছি।

গিবাগিবা প্রথমে ঠিক বুঝলো না। ভয় দেখানোতে বিফল হওয়ার কী আছে? বাচ্চাদের তো কাজই শুধু শুধু ভয় পাওয়া। গিবাগিবা বলল- তুমি পরিষ্কার করে বল টোটো। তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি না।

টোটো আবার বলতে শুরু করল- মিমি নামের ছোট্ট এক মেয়েকে ভয় দেখাতে গিয়েছিলাম। ওর খাটের নিচে বসে আওয়াজ করছিলাম। সে প্রথমে ভয় পেলেও পরে ব্যাট নিয়ে আমাকে মারতে আসে। আমি উপায় বুদ্ধি না পেয়ে ইঁদুর সেজে কোনোমতে জীবন নিয়ে ফিরে এসেছি।

গিবাগিবা অবাক হয়ে গেল। কি শুনছে সে? সে তার এই জীবনে কখনো বাচ্চাদের এতো সাহসের কথা শুনেনি। অন্য ভূতেরাও ভয় পেয়ে গেল। বাচ্চারা কি তাহলে এখন বুদ্ধিমান হয়ে যাচ্ছে নাকি? গিবাগিবা বলল- এমন কথা আমি কখনো শুনিনি। কিন্তু সব শুনে আমার মনে হচ্ছে আমাদের উচিত সতর্ক থাকা। ভূতেরা,তোমরা এখন থেকে সাহসী বাচ্চাদের আশপাশেও যাবে না। যারা ভয় পায় তাদেরকেই শুধু ভয় দেখাবে। তোমার যা করার তুমি করেছো টোটো। আমরা বাচ্চাদের ভয় দেখাই। কেউ সাহসী হয়ে গেলে তাকে ভয় পাই! এখন দেখা যায় সাহসী বাচ্চাও আছে।

আমি আবারো বলছি, তোমরা এখন থেকে সাবধান থাকবে ভূতেরা আমার।

সব ভূতেরা ভয়ে ভয়ে সভা ত্যাগ করল। বাচ্চারা এভাবে সাহসী হয়ে গেলে তারা ভয় দেখাবে কাকে?

লেখক পরিচিতি:  আইনুন নাহার বুশরা, দ্বাদশ শ্রেণি, উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!