স্মার্টফোনের কথা কি নজরুলই প্রথম ভেবেছিলেন!

‘হাউই চড়ে চায় যেতে কে/ চন্দ্রলোকের অচিনপুরে/ শুনব আমি, ইঙ্গিত কোন/ মঙ্গল হতে আসছে উড়ে।/ পাতাল ফেড়ে নামব আমি/ উঠব আমি আকাশ ফুঁড়ে,/ বিশ্বজগৎ দেখব আমি/ আপন হাতের মুঠোয় পুরে’।

আবু আফজাল সালেহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2020, 09:00 AM
Updated : 27 August 2020, 09:00 AM

কবি কাজী নজরুল ইসলামের (১৮৯৯-১৯৭৬) ‘সংকল্প’ কবিতাটি কে না জানে! শিশুমনের ইচ্ছে-আকাঙ্খায় বিশ্বজয়ের কথা তুলে ধরেছেন তিনি এ কবিতায়। কবি বিশ্বকে মুঠোয় পুরে দেখতে চেয়েছেন। প্রায় একশ বছর আগে লেখা এ কবিতার প্রতিটি পঙক্তিতে আছে বর্তমান বিজ্ঞানের জয়গান। কবি লিখেন, ‘থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে,/ কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।’

বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। এক স্মার্টফোনে বিশ্ব ও আকাশ-পাতালের সবকিছুই সহজলভ্য। এখন কোনকিছুই দূরের নয়। কবি নজরুল সেই কবেই ভেবে রেখেছেন এমন। শিশুতোষ ‘সংকল্প’ কবিতায় তার প্রকাশ ঘটেছে। সত্যিই তাই। এখন স্যাটেলাইট, সাবমেরিন, ওয়াইফাই, মাইক্রোওয়েভ এমন নানা যোগাযোগ প্রযুক্তির কারণে ঘরে বসেই পৃথিবীর ওপ্রান্তের খবর জানা যায়।

এ কবিতায় কবি জানান তিনি বদ্ধঘরে থাকতে চান না। অজানাকে জানার ও অদেখাকে দেখার চিরন্তন কৌতূহল তার। কবি লিখেন, ‘কিসের নেশায় কেমন করে মরছে যে বীর লাখে লাখে,/ কিসের আশায় করছে তারা বরণ মরণ যন্ত্রণারে।’ কবি আরও লিখেন, ‘কোন বেদনার টিকিট কেটে চন্ডু-খোর এ চীনের জাতি/ এমন করে উদয়-বেলায় মরণ-খেলায় ওঠল মাতি।/ আয়ার্ল্যান্ড আজ কেমন করে স্বাধীন হতে চলছে ওরে/ তুরস্ক ভাই কেমন করে কাটল শিকল রাতারাতি!/ কেমন করে মাঝ গগনে নিবল গ্রিসের সূর্য-বাতি।’

কবি জগতের সব রহস্য জানতে চান। সারা বিশ্বের মানুষ যুগ যুগ ধরে কীভাবে নিত্য নতুন আবিষ্কারের নেশায় মৃত্যুভয়কে তুচ্ছজ্ঞান করে এগিয়ে চলছে তা তিনি জানতে চান। বদ্ধঘরে আবদ্ধ না থেকে রহস্যঘেরা অসীম বিশ্ব তথা বিশ্বজগৎকে হাতের মুঠোয় পুরে পরখ করে দেখতে চান। কবি লিখেন, ‘কেমন করে বীর ডুবুরি সিন্ধু সেচে মুক্তা আনে,/ কেমন করে দুঃসাহসী চলছে উড়ে স্বর্গ পানে।/ জাপটে ধরে ঢেউয়ের ঝুঁটি যুদ্ধ-জাহাজ চলছে ছুটি।’

গভীর পানিতে ডুব দিয়ে ডুবুরিরা নানা জিনিস উদ্ধার করে আনে। ‘সংকল্প’ কবিতায় কবি ডুবুরিদের বীর বলেছেন। কারণ তারা নদী বা সমুদ্রের তলদেশ থেকে মুক্তা সংগ্রহ করে। কবি চন্দ্রলোকের অচিনপুরে যেতে চান। চন্দ্রলোক মানে হলো চাঁদের দেশ।

‘সংকল্প’ কবিতায় কবি পাতাল ফেড়ে নামতে চেয়েছেন। পাতাল অর্থ হলো সাগরের তলদেশ বা ভূ-গর্ভের নিচের অংশ। মহাকাশের মতো পাতালপুরীও এক রহস্যময় অজানা জায়গা। অসীম বিশ্বকে জানার অদম্য কৌতূহলী কবি মাটির নিচে পাতালে কী আছে, তা জানার জন্য পাতাল ফেড়ে সেখানে নামতে চান। পাতালের অজানা রহস্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে কৌতূহল মেটাতে চান। তিনি লিখেন, ‘রইব না কো বদ্ধ খাঁচায়, দেখব এসব ভুবন ঘুরে/ আকাশ বাতাস চন্দ্র-তারায় সাগর-জলে পাহাড়-চুঁড়ে।/ আমার সীমার বাঁধন টুটে/ দশ দিকেতে পড়ব লুটে।’

ছোটদের জন্য বেশ কিছু ছড়া ও কিশোর-কবিতা ও গান লিখেছেন নজরুল। গ্রামের সাধারণ দৃশ্য ও শিশুদের পছন্দমতো বিষয় বেছে নিয়ে দারুণ ও সাবলীল এসব ছড়া-কবিতা। কবি লিখেন, ‘ভোর হল দোর খোল/ খুকুমনি ওঠরে/ ঐ ডাকে জুঁই শাখে/ ফুলখুকী ছোটরে।’ ছড়াটি কে শুনেনি! তার লেখা শিশুতোষ কবিতা-ছড়ায় ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে এনেছেন নতুনত্ব।

শুধু শিশুদের চঞ্চল মন মাতিয়ে রাখার পদ্যই লিখেননি নজরুল, শিশু-কিশোরদের মনে তাদের মতো করেই গভীর ভাব জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন এমন মহান কারিগর। নজরুল লিখলেন, ‘নতুন দিনের মানুষ তোরা/ আয় শিশুরা আয়!/নতুন চোখে নতুন লোকের/ নতুন ভরসায়।/ নতুন তারায় বেভুল পথিক/ আসলি ধরাতে/ ধরার পার আনন্দ-লোক/ দেখাস ইশারায়।/ খেলার সুখে মাখলি তোরা/ মাটির করুণা,/ এই মাটিতে স্বর্গ রচিস,/ তোদের মহিমায়।’

বাংলা কাব্য নজরুল এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হলো ইসলামি গান তথা গজল। ১৩৪৪ সালে মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন সম্পাদিত শিশু সওগাত এর প্রথম সংখ্যায় ‘শিশু সওগাত’ নামের কবিতায় তিনি লিখেন, ‘ওরে শিশু, ঘরে তোর এল সওগাত/ আলো পানে তুলে ধর ননী-মাখা হাত।/ নিয়ে আয় কচি মুখে আধো আধো বোল,/ তুলতুলে গালে ভরা টুলটুলে টোল।/ চকচকে চোখে আন আলো ঝিকমিক/ ডালে ডালে ঘুম-জাগা পাখিরা নীরব,/ তোর গান শুনে তবে ওরা গাবে সব।’

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!