ছোটদের প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ সবসময় প্রকৃতি ও ছোটদের ভালোবাসতেন। মিশে থাকতে চেয়েছিলেন ছোটদের মাঝে, প্রকৃতির মাঝে। তার ডাক নাম ছিল কাজল।

সাকিব জামালবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2020, 02:59 PM
Updated : 6 August 2020, 03:00 PM

লেখার জাদুতে ছোটদের কাছে প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। ছোটদের নিয়ে লিখতেও ভালোবাসতেন তিনি। তাই তিনি তোমাদের জন্য লিখেছেন বেশ কিছু মজার বই। ছোটদের জন্য লেখা তার গল্পের বইগুলো হচ্ছে রহস্যধর্মী ও ভূত বিষয়ক।

কয়েকটি বইয়ের নাম হলো ‘বোতল ভূত’, ‘ভূত ভূতং ভূতৌ’, ‘নুহাশ এবং আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগ’, ‘ভৌতিক অমনিবাস’, ‘ছোটদের সেরা গল্প’, ‘টগর অ্যান্ড জেরি’, ‘ব্যাঙ কন্যা এলেং’, ‘কাক ও কাঠগোলাপ’, ‘প্রিয় ভয়ংকর’, ‘হলুদ পরী’, ‘বনের রাজা’, ‘ভূতমন্ত্র’ ও ‘রাক্ষক খোক্কস এবং ভোক্ষস’ ইত্যাদি। তোমাদের যারা এখনো হুমায়ূন আহমেদের গল্পের বই পড়োনি, উল্লেখিত যে কোন একটি গল্পের বই পড়লেই বাকি সবগুলো বই পড়তেও ইচ্ছে হবে। তুমিও হয়ে যাবে একজন হুমায়ূনভক্ত বইপোকা।

ছোট বন্ধুরা, আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের পথিকৃৎ কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ। লিখেছেন বেশ কয়েকটি কল্পবিজ্ঞানের বই। নিজেকে বরাবরই রাশিয়ান সায়েন্স ফিকশন লেখকদের ভক্ত হিসেবে দাবি করা হুমায়ূন আহমেদ তার লেখায় বিজ্ঞানের সাথে অসাধারণ মিশেল ঘটিয়েছেন মানবিকতার। বিজ্ঞানের কাঠখোট্টা যুক্তিগুলোও তার সুনিপুণ লেখনিতে হয়ে গেছে সহজবোধ্য।

‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’ হুমায়ূন আহমেদের প্রথম প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি। ভবিষ্যতের কোনো এক সময়ের পৃথিবীর কাহিনি যেখানে সবচেয়ে ক্ষমতাধর হলেন বিজ্ঞানীরা। পদার্থবিদ মাথুর, পদার্থবিদ স্রুরা কিংবা গণিতবিদ ফিহার মতো বিজ্ঞানীদের কাঁধে ভর দিয়ে পৃথিবীর উন্নতি হয়েছে। সব বাধা জয় করে মহাকাশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে মানুষ। মানুষের তৈরি কৃত্রিম নিউরন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মানবিক আবেগসম্পন্ন কম্পিউটার সিডিসিকে।

আরেকটি বই ‘ওমেগা পয়েন্ট’। আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক গ্রামীণ পটভূমিতে সাজানো এ উপন্যাসটির মোড়ে মোড়ে কী দারুণ সব চমক উপহার করছে তা পাঠক পড়ামাত্রই টের পাবেন। ভবিষ্যতের পৃথিবী, ওমেগা পয়েন্ট, মহা শক্তিশালী কম্পিউটার, মানবীয় ক্ষমতাসম্পন্ন নবম মাত্রার রোবট কোনো কিছুই বাদ যায়নি। এছাড়া রয়েছে আরো কয়েকটি সায়েন্স ফিকশন যেমন ‘নি’, ‘ফিহা সমীকরণ’, ‘শূন্য’, ‘ইমা’, ‘ইরিনা’, ‘তারা তিনজন’, ‘দ্বিতীয় মানব’, ‘অনন্ত নক্ষত্র বিথী’, ‘অন্যভুবন’ ও ‘কুহক’ ইত্যাদি।

‘নুহাশ পল্লীর’ নামও নিশ্চয়ই তোমাদের জানা। হুমায়ূন আহমেদ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ‘নুহাশ পল্লী’ প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হোতাপাড়া বাজার। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে পিরুজালী গ্রাম। ওই গ্রামেই প্রায় ৪০ বিঘা জায়গা নিয়ে ‘নুহাশ পল্লী’ তৈরি করেন হুমায়ূন আহমেদ। ঢাকার ধানমণ্ডিতে তার বাসস্থান হলেও তিনি সুযোগ পেলেই ‘নুহাশ পল্লীতে’ চলে আসতেন সময় কাটাতে। কখনো আসতেন সপরিবারে, কখনো আসতেন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে রাতভর আড্ডা দিতে।

প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে ‘নুহাশ পল্লীতে’ বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হতো। এখানে নানা প্রকার গাছের গায়ে সাঁটা আছে পরিচিতি ফলক, পদ্মপুকুর, দীঘি লীলাবতী, সরোবরে পাথরের মৎসকন্যা, প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের অনুকীর্তি এবং বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন কক্ষ যেমন বৃষ্টি বিলাস, ভূত বিলাস ইত্যাদি। নুহাশ পল্লীতে ঢুকে মাঠ ধরে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই হাতের বাঁ-পাশে শেফালি গাছের ছায়ায় নামাজের ঘর। এর পাশেই তিনটি পুরনো লিচুগাছ নিয়ে একটি ছোট্ট বাগান।

লিচু বাগানের উত্তর পাশে জাম বাগান আর দক্ষিণে আম বাগান। ওই লিচুবাগের ছায়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। নুহাশ পল্লী বেশ সুন্দর করে সাজানো। আমি গিয়েছিলাম বেড়াতে, তোমরাও যেতে পারো, ভালো লাগবে। হুমায়ূন আহমেদের নানা স্মৃতি দেখতে পারবে।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!