সত্যিকারের পরীর সঙ্গে সুন্দরবনে

প্রিয় বন্ধুরা, তোমরা কি কখনো কেউ আয়না ছাড়া নিজেকে দেখতে পারো? আমরা পারি। কারণ আমরা দুই যমজ ভাই। শেখ তাহমিদ হাসান তাসিন ও শেখ তাওহিদ হাসান তাজিম।

শেখ তাহমিদ ও শেখ তাওহিদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2020, 04:18 AM
Updated : 2 August 2020, 10:01 AM

দেখতে আমরা দুজন একই রকম। একজনকে দেখলেই মনে হয় অন্যজন। সেই ছোটবেলা থেকেই আমাদের নিয়ে কত্ত যে মজার ঘটনা ঘটেছে তা বলে শেষ হবে না। দেখা গেলো একজনের ক্ষুধা লেগেছে আম্মু অন্যজনকে খাইয়ে দিচ্ছে। একজনের অসুখ করেছে তো অন্যজনকে ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছে! ক্লাসে একজন পড়া পারেনি তো অন্যজন বকা খেয়েছে এমনও হয়েছে।

সেই সব মজার গল্প না হয় অন্য একদিন তোমাদের শোনাবো। আমরা দুই ভাই পড়াশোনা করছি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে। বাবা-মাকে ঘিরে আমাদের সুন্দর সাজানো গোছানো পরিবার। পড়াশোনার বাইরে আমাদের সব থেকে বেশি ভালো লাগে ছবি আঁকতে। ছবি আঁকার পাশাপাশি আমরা দুজন মিলে আবৃত্তি করি, অভিনয়ও করি। কিছুদিন আগেই মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের গল্প অবলম্বনে রায়হান জুয়েল পরিচালিত ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রে আমরা দুই ভাই অভিনয় করেছি।

তোমরাতো বিভিন্ন সময় কত রকম গল্প বলেছ এবং শুনেছ। আমরা বরং তোমাদেরকে অন্য রকম গল্প বলবো। আমরা তখন তোমাদের থেকে অনেক দূরে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্যে সিনেমার শুটিং করছি। পত্রিকা নেই, টেলিভিশন নেই, ইন্টারনেটও খুব একটা নেই বলা চলে। একটা বিরাট লঞ্চে আমরা ১৪ জন শিশু-কিশোর আর বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ অন্যান্যদের নিয়ে চলছে সিনেমার শুটিং। আমাদের সঙ্গে একটা সত্যিকারের পরী ছিলো! বুঝেছি তোমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না যে সত্যিকারের পরী কি করে আমাদের সঙ্গে সুন্দরবনে গেলো? আরে সত্যিকারের পরীর নাম পরীমনি। এবার নিশ্চই বিশ্বাস করেছ!

সেই সঙ্গে ছিলো অভিনেতা সিয়াম। শিশুতোষ সিনেমা বলে কথা, তাই সবার মধ্যে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে। হঠাৎ একদিন ফোন এলো। জানতে পারলাম পৃথিবীতে হানা দিয়েছে করোনাভাইরাস নামে এক ঘাতক। সেই ভাইরাস বাংলাদেশেও হাজির হয়েছে এবং ছোবল দিয়েছে বিষাক্ত সাপের মতো। চারদিক থেকে সবার কাছে ফোন আসছে তোমরা দ্রুত ফিরে আসো। আমাদের পরিচালক রায়হান জুয়েল এবং অন্যান্যদের দ্রুত সিদ্ধান্তে ফিরে এলাম। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী আমাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। মানে বাইরে থেকে এসেছি তাই আগামী ১৪ দিন কোত্থাও যাওয়া যাবে না।

আমরা দুই ভাই মনে মনে ভাবলাম চৌদ্দ দিন কী করে গৃহবন্দি থাকবো? অবশ্য আমরা যমজ হওয়ায় ঘরে থাকলেও দুজন বেশ আনন্দ করতে পারি। গল্প করতে সঙ্গী চাই? আছে আমার যমজ ভাই। মারামারি করতে দুষ্টুমি করতে সঙ্গী চাই? আছে আমার যমজ ভাই। আমরা দুই ভাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম আগামী ১৪ দিন যেহেতু কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে তাই এই সময়টা কীভাবে ভালোভাবে পার করা যায় তার পরিকল্পনা করলাম। আমরা বরাবরই ছবি আঁকতে ভালোবাসি। এই সময়ে পরিকল্পনা করে অনেক অনেক ছবি আঁকার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং সত্যি সত্যিই ছবি আঁকতে শুরু করলাম।

কিন্তু আমাদের কোয়ারেন্টাইন আর শেষ হলো না। ১৪ দিন কাটানোর পর আরও কত ১৪ দিন পেরিয়ে গেলো পৃথিবীর অসুখ ভালো হলো না। এর মাঝে আমাদের জন্মদিন চলে আসলো। এবারের মতো জন্মদিন আগে কোনদিন পালন করিনি। জন্মদিন মানে বন্ধুরা আসবে, কেক কাটবো, বেলুন ফোটাবো, বন্ধুদের মুখে ক্রিম মেখে দিবো কত্ত আনন্দ। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের কারণে তা হলো না। ঘরেই নিরানন্দের জন্মদিন পালন করলাম। এক ভাই অন্য ভাইয়ের মুখে কেকের ক্রিম মেখে দিলাম, কেক খাইয়ে দিলাম আর রাত বারটায় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললাম, ‘হ্যাপি বার্থ ডে!’

আমাদের একটা ভূত বন্ধু আছে, সে আমাদের জন্মদিনে একটা কবিতা লিখে দিলো। ভূত বন্ধু বলছি এ কারণে যে সেই বন্ধুকে দেখা যায় না। তার কণ্ঠও শোনা যায় না। মানে সে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। তো আমরা সেই ভূতুড়ে কবিতাটি দুই ভাই মিলে আবৃত্তি করলাম এবং ভিডিও করে সেটা ফেইসবুকে শেয়ার করলাম। কত্ত মানুষ যে সেটা দেখলো, শুনলো আর আমাদের শুভেচ্ছা জানালো। এর আগে কোনদিন আমাদের জন্মদিনে এত্তো মানুষ শুভেচ্ছা জানায়নি।

গৃহবন্দি থেকে আমরা প্রায় ৫০টা ছবি এঁকেছি। আমাদের খুব ইচ্ছে করোনাভাইরাস চলে গেলে আমাদের আঁকা ছবিগুলো নিয়ে একটা এক্সবিশন করবো। তোমরা কিন্তু অবশ্যই সেই এক্সিবিশনে আসবে। আর আমাদের খুব স্বপ্ন সেই এক্সিবিশন থেকে আমাদের যে ছবিগুলো বিক্রি হবে তার অর্থ থেকে আমরা অসহায় মানুষদের সাহায্য করবো।

স্কুল বন্ধ তাই আমাদেরও মন খারাপ হয়, কিন্তু পৃথিবীরই যেখানে মন খারাপ সেখানেতো কিছু করার নেই। তাই রং-তুলি আর পেন্সিল নিয়ে পৃথিবীর বর্তমান অবস্থা আর আগের অবস্থা আঁকতে চেষ্টা করি। আমরা চাই পৃথিবীটা নিরাপদ হয়ে উঠুক।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!