হাবীবুর রহমানের উপন্যাস ‘বনমোরগের বাসা’

বই: বনমোরগের বাসা, ধরণ: ছোটদের উপন্যাস, লেখক: হাবীবুর রহমান (১৯২৩ - ১৯৭৬), প্রথম প্রকাশ: ‘মুক্তধারা’ ১৯৭৬, ‘সপ্তডিঙা’ থেকে প্রকাশ: ২০১৮, মূল্য: ২০০

আহমাদ মাযহারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2020, 07:28 AM
Updated : 3 July 2020, 07:28 AM

শহর থেকে একটু বাইরে গেলেই আমরা দেখতে পাই প্রচুর গাছপালা। হ্যাঁ, এখনও অবশ্য গ্রামে গ্রামে বাড়ি-ঘরের আশপাশে ছোট ছোট বনজঙ্গল দেখতে পাওয়া যায়। তবে এখন আর এমন ঘন প্রাকৃতিক বনজঙ্গল খুব কম যেখানে সূর্যের আলো প্রায় প্রবেশ করেই না।

অথচ আগে এরকমটাই ছিল স্বাভাবিক। ঘন বনজঙ্গলের পাশাপাশিই ছিল মানুষের বসবাস! ফলে একটা শিশুর বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে থাকত গাছপালা ও পশুপাখির সখ্য! গ্রামবাসীরা গাছপালা, পশুপাখিদের সঙ্গে থেকে থেকে তাদের সম্পর্কে জানত বুঝত। বই না পড়েও বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্যের সঙ্গে সঙ্গে গাছপালা ফুলফল সম্পর্কে জানতে দরকার পড়ে বইপড়া বিদ্যা!

তবে সত্যি বলতে কি বই পড়ে অনেক কিছু জানা গেলেও এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতির সবকিছুর সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়ে উঠতে পারে না। কারণ শিশুদের চেনা পৃথিবীর সঙ্গে তাদের যোগ থাকে না।

নাহ! অনেক কথা বলা হয়ে গেল আসল কথা বলার অগেই। আসল কথা হলো কবি হাবীবুর রহমানের ছোটদের উপন্যাস ‘বনমোরগের বাসা’ সম্পর্কে বুঝবার জন্য এই রচনাটি লিখতে বসেছি। এখানে দুটি খবর দেয়া হয়েছে। একটি খবরে আছে হাবীবুর রহমানের নাম, অন্যটিতে আমরা জেনেছি যে, তিনি কবি।

হ্যাঁ, হাবীবুর রহমান নামে একজন কবি ছিলেন আমাদের দেশে। নানা রকমের কবিতাই লিখতেন তিনি। কিন্তু সনেট নামের চৌদ্দ লাইনের এক ধরনের কবিতা লিখে সবার নজর কেড়েছিলেন। তবে সবচেয়ে বড় খবরটা এখনো দেয়াই হয়নি। সেটা হলো তিনি ছিলেন বাংলাদেশের শিশুকিশোরদের জন্য একজন নামকরা লেখক। তাঁরই একটি বইয়ের নাম ‘বনমোরগের বাসা’ (১৯৭৬)। বইটি তিনি লিখেছিলেন তাঁর তিপ্পান্ন বছরের জীবনের একেবারে শেষপ্রান্তে।

আরো অনেক বই লিখেছিলেন তিনি। দু-একটার নাম বলে নিই এখানে। ‘সাগরপারের রূপকথা’ (১৯৫৬), ‘বিজন বনের রাজকন্যা’ (১৯৫৯), ‘গল্পের ফুলঝুরি’ (১৯৬৩), ‘মন চলে মোর তেপান্তরে’ (১৯৬৪), ‘হীরা মোতি পান্না’ (১৯৬৭)- এগুলো প্রধানত রূপকথার বই! এছাড়াও তিনি লিখেছেন ‘ল্যাজ দিয়ে যায় চেনা’ (১৯৫৯) ও ‘বনে বাদাড়ে’ (১৯৬৩) নামের উপন্যাস। ‘পুতুলের মিউজিয়াম’ (১৯৬৩) নামে বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার একটি বই রয়েছে তাঁর।

‘আগডুম বাগডুম’ নামে দুই খণ্ডে একটি ছড়ার বই বেরিয়েছিল ১৯৬২ সালে। ‘কালেরপুতুল’ ও ‘বিড়ম্বনা’ নামে দুটি নাটকের বইও প্রকাশিত হয়েছিল। তবে ছোটদের জন্য তাঁর দুটি নাটক ‘মায়াকানন’ ও ‘আলোর ফুল’ খুবই বিখ্যাত। আমাদের কথা শুধু ‘বনমোরগের বাসা’ নিয়ে, তাই অন্যসব লেখার নামগুলো শুধু মনে করলাম।

‘বনমোরগের বাসা’ যে ছোটদের উপন্যাস সে কথাতো বলা হয়েছে, কিন্তু কেমন উপন্যাস সেটা তাতো বলা হয়নি। নামের মধ্যেই একটা আভাস পাওয়া যায়। বোঝা যাচ্ছে বনজঙ্গলের কথা এখানে আছে, সঙ্গে আছে পশু-পাখির কথা। আর হ্যাঁ, একটি বনমোরগের মনের কথাতো আছেই! একটি বনমোরগের জীবন নিয়ে গড়ে উঠেছে এই উপন্যাসটির কাহিনি। খুব বড় নয় এর গল্পটা। ছোটদের উপন্যাসের আকার সাধারণত খুব বড় হয় না।

কিন্তু ছোটরাও কত কিছুইনা বোঝে! ছোটদের যাঁরা বড় লেখক সে কথাটা ঠিক জানেন। তাইতো ‘বনমোরগের বাসা’ উপন্যাসের মধ্য দিয়ে লেখক জ্ঞানী ছোটদের মনের কত কথাই না আলোচনা করেছেন। তাই এই উপন্যাসটি পড়তে গেলে দেখি বনের কোন প্রাণীটি দেখতে কেমন, কোন পশুর আচরণ কেমন সে কথা আমরা বুঝে নিতে পারি। লেখক ছোটদের সামনে প্রাণীদের কথা এমনভাবে হাজির করেছেন যেভাবে প্রাণিবিজ্ঞানীরা করেন। কিন্তু মনেই হবে না যে এরকম কোনো উদ্দেশ্য লেখকের ছিল।

সকালে ঘুম ভাঙার পর বনমোরগের মনে হয়, দুনিয়ার কজনেরই-বা আছে এমন বাসা! তার মনে পড়ে সে যদি জেগে না ওঠে তাহলে রূপকথার মায়াপুরীর মতো সারা বন নিঝুম হয়ে থাকবে। ‘যারা কাজ করে, তাদের আর কাজ হবে না, যারা হাতে-পায়ে খেটে উদরপূর্তির ব্যবস্থা করে, তাদের খাওয়া জুটবে না।’ মানে পৃথিবীর সবার জন্য কী মায়া বনমোরগটির!

ঘুম ভাঙার পরে বনের মধ্যে বনমোরগটির চলাফেরা, নানা ঘটনার মধ্যে পড়ে তার আনন্দ আর উৎকণ্ঠার কথা বলা হয়েছে এর গল্পের মধ্যে। এমনভাবে কাহিনি বলা হয়েছে যে বনমোরগটি বা বনের আরো যে-সব পশুপাখির কথা এসেছে তারা যেন মানুষেরই মতো সুখ-দুঃখ ও আনন্দের কথা ভাবে। কাঠঠোকরা, কাঠবেড়াল, হাঁস, চিল, বাজ, শিয়াল এমনি আরো অনেক পশু-পাখির কথা আছে। বনমোরগটির মনে সকলের জন্য ভালোবাসা।

বনে পশুপাখিদের একটা সভারও বর্ণনা আছে যাতে এখানকার নানা প্রাণীর সুখ-দুঃখের কথা ফুটে ওঠে। পাশের গ্রাম থেকে ডালকুত্তা নিয়ে কেউ বনের দিকে শিকারে বের হওয়ায় ভেঙে যায় সভাটা। তখনই আমাদের মনে তাদের সকলের জন্য জন্মে মায়া!

বনমোরগ ও তার সঙ্গী সাথী পশুপাখিদের গল্প করতে করতে এই যে আমাদের মনে মায়া জাগিয়ে তুলতে পেরেছেন লেখক এখানেই লেখকের সত্যিকারের জাদু। ছোটদের জন্য এইরকম জাদু দেখাতে পারার মতো লেখক খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যায় না।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!