প্রকৃত মানুষ সম্পর্কে জানলে পাবে সঠিক দিশা

বই: গ্যালিলেও, ধরন: জীবনীগ্রন্থ, লেখক: ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা, প্রকাশনী: বাতিঘর, প্রথম প্রকাশ: ২০১৮, পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৭০, মূল্য: ১২৫ টাকা

কিডস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2020, 11:43 AM
Updated : 25 June 2020, 11:43 AM

প্রায় দুই বছর আগে ছোটদের জন্য মহামানবদের জীবনকথা সিরিজ প্রকাশ করেছিল প্রকাশনা সংস্থা ‘বাতিঘর’। সেই সিরিজের একটি বই শিক্ষক ও লেখক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীর ‘গ্যালিলেও’। এতে আলোচনা করা হয়েছে পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের বরপুত্র গ্যালিলেও গ্যালিলিকে নিয়ে।

মানুষের নাগালে এখন বিশ্বজগৎ। অথচ একালে বিশ্বমানবের দেখা মেলা ভার। মানুষের মনোজগৎ বুঝি ছোট হয়ে আসছে। নয়তো কেন এতো হানাহানি, কেনই না হিংসা ও সন্ত্রাস, ঘৃণা ও প্রতিশোধের আগুনে বিপন্ন হবে মানবতা! এসময়ে প্রকৃত মানুষের সঙ্গে পরিচিত হলে পথ চলার সঠিক দিশা মিলতে পারে। সেই ভাবনা থেকেই এ বই।

গ্যালিলেও নামটা শুনলেই আমাদের মনে পড়ে চার্চের রোষানলে পড়েও মিথ্যা বরণ করতে অস্বীকৃতি জানানো এক সত্যান্বেষী বিজ্ঞানীর কথা। মনে পড়ে দূরবীক্ষণ যন্ত্র, পেন্ডুলাম ঘড়ি আবিষ্কার, পড়ন্ত বস্তুর গতির তিনটি সূত্র ও ইতালির পিসা প্রদেশের হেলানো টাওয়ারের কথা। মানুষের বিশ্বভাবনাকে কল্পলোকের আকাশচারিতা থেকে বিজ্ঞানচেতনার যুক্তি বিশ্লেষণের ভূমিতে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করে দিয়েছেন গ্যালিলেও। অন্ধবিশ্বাস ও সনাতন ক্ষমতা-কাঠামোর প্রতাপে তাঁর ব্যক্তিজীবন কারা নিগ্রহ ও নিঃসঙ্গতায় কাটলেও উত্তরকালে তাঁর ভাবমূর্তি উত্তরোত্তর চিরসূর্যালোকে ভাস্বর ভাস্বরতর হয়েছে। এসবকিছুই বইতে উঠে এসেছে।

বইটি সম্পর্কে লেখক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী বলেন, “এই বইটি লিখতে যেমন পড়তে হয়েছে অনেক, তেমনি জানতে পেরেছিও অনেক। জীবনী লেখার সমস্যাটা হলো নির্দিষ্ট পৃষ্ঠার বা বইয়ের সীমানার ভেতরে একটা বিখ্যাত মানুষকে তাঁর সব বর্ণিল কর্মকাণ্ডকে ধরা। কিন্তু সেটা কী করে সম্ভব! তাই আমার কৌশল ছিল এই জীবনীটি এমন হবে যাতে গ্যালিলেওর কর্মজীবনের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে।

“তাঁর জীবনী পড়তে গিয়ে দেখলাম তিনি যে সুদক্ষ এক্সপেরিমেন্টালিস্ট ছিলেন, সেটার প্রাথমিক ট্রেনিং তিনি পেয়েছিলেন তাঁর বাবার কাছ। পাপা-গ্যালিলেই ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ, সঙ্গীতের নানা উপসঙ্গ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তিনি নতুন কিছু খুঁজে পেতেন। এই খুঁজে দেখার ভেতরেই নিহিত ছিল গ্যালিলেওর সারা জীবনী। এটা আবিষ্কারই বলতে গেলে এই জীবনীর প্রধান আকর্ষণ। যেমন ভিনসেনযো, গ্যালিলেওর বাবা, বলছেন, ‘আমার মনে হয় কোনো কিছু প্রমাণ করতে গিয়ে যারা কেবল সূত্রের নির্ভরযোগ্যতার ওপর গুরুত্ব দেন, প্রমাণের সপক্ষের যুক্তিতর্ক না খুঁজেই, (অর্থাৎ অমুক বলেছেন তাই সত্য) তারা ভুল করেন। আমি খোলামনে প্রশ্ন করতে চাই এবং খোলামনেই তার জবাব দিতে চাই, কোনোরকম স্তাবকতার মধ্য দিয়ে না গিয়েই।”

ফারসীম মান্নান আরও বলেন, “ফ্লোরেন্সের মতো নাবিক ও বন্দর অধ্যুষিত অঞ্চলে ব্যবহারিক জ্ঞানের কদর যে অত্যধিক ছিল তা আর বলতে। আর গ্যালিলেও ছিলেন ব্যবহারিক যন্ত্রপাতির উৎকর্ষ বিধানে ওস্তাদ। এটাই তাঁকে দিয়ে অনেক পুঙ্খানুপুঙ্খ এক্সপেরিমেন্ট ডিজাইন করিয়ে নিয়েছে। তাই তিনি বলেছেন, ‘অন্ধ হলেই কেবল পথপ্রদর্শকের দরকার হয়। যাদের খোলা চোখ আর তাজা মন আছে, তাদের জন্য এগুলোই যথেষ্ট’।”

বইটি শুরু হয়েছে দুজন কবির দুটো অনুপ্রেরণামূলক বাণী দিয়ে। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়- “চোখ রাঙালে না হয়/ গ্যালিলেও লিখে দিলেন/ ‘পৃথিবী ঘুরছে না’/ তবু পৃথিবী ঘুরছে, ঘুরবেও/ যতই তাকে চোখ রাঙাও না।” জার্মান কবি ও নাটকার বের্টোল্ট ব্রেখট- “জানুয়ারি টেন, সিক্সটিন টেন/ গ্যালিলেও গ্যালিলেই অ্যাবোলিশেস হ্যাভেন।”

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!