হাত ধুয়ে বিজ্ঞান খেলি, পর্ব ৩

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ হয়ে গেছে স্কুল। সময়টা এখন ঘরে থাকার। শিশুরা সবাই ঘরেই থাকো। কুড়ি সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নাও। এবার চলো, হাত ধুয়ে বিজ্ঞান খেলি। ঘরে থাকার সময়কে করি মজাদার।

শেখ আনোয়ারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2020, 10:00 AM
Updated : 25 June 2020, 10:00 AM

বোতলবন্দি ঘূর্ণিঝড় আম্পান

তোমাদের নিশ্চয় মনে আছে, ক’দিন আগের কথা। বঙ্গোপসাগরে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রলয়ঙ্করী অগ্নিচক্ষু সর্বোচ্চ মাত্রার শক্তিসম্পন্ন ও ভয়াবহ ছিল। তবে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার সময় এর গতি কিছুটা কমে ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ রূপ নিয়ে অন্যদিকে চলে যাওয়ায় আমাদের কিছুটা রক্ষা হয়েছে।

মনে প্রশ্ন জাগে, ঘূর্ণিঝড় কি? বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় কেন এত বেশি হয়?

সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় হলো ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রে সৃষ্টি হওয়া বৃষ্টি, বজ্র ও প্রচণ্ড ঘূর্ণি বাতাস সম্বলিত আবহাওয়ার একটা নিম্নচাপ প্রক্রিয়া। এটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে উৎপন্ন তাপকে মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত করে। এ ধরনের ঝড় বাতাস প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ছুটে চলে বলে এর নাম ঘূর্ণিঝড়।

ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণন উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে হয়ে থাকে। ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানলে দুর্যোগের সৃষ্টি হয় বটে। তবে এটা আবহাওয়ার একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যা পৃথিবীতে তাপের ভারসাম্য রক্ষা করে।

আমাদের বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগরের খুব নিকটবর্তী পাশাপাশি অংশ। অন্যান্য সাগরের বুকে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের তুলনায় বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা কিছুটা কম হলেও এর চারপাশের দেশগুলোতে জীবন ও সম্পদহানির পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে থাকে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের মানচিত্রে বঙ্গোপসাগরের উপকূল ফানেল আকৃতির। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে প্রতিবছর এ অঞ্চলকে ঘূর্ণিঝড় তার ‘চ্যানেল’ হিসেবে বেছে নেয়।

সমুদ্রের সোপান অগভীর, উচ্চ জ্যোতির্জোয়ার এবং উপকূলের চারপাশে রয়েছে সমতল নিম্নাঞ্চল। বাংলাদেশ ও আশপাশের এলাকায় উষ্ণমণ্ডলীয় সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় প্রধানত সৃষ্টি হয় বর্ষার শুরুতে, মধ্য-বর্ষা ও বর্ষা পরবর্তী মৌসুমে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু শুরুর সময় সাধারণত নিম্নচাপ ও গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় এবং এ মৌসুমে প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে। এর কারণ মৌসুমী বায়ুর সময় বায়ুমণ্ডলের বায়ুর উলম্ব প্রবাহ বেশি থাকে। এছাড়া বায়ুমণ্ডলে অস্থিরতার পরিমাণও কম থাকে। উষ্ণমণ্ডলীয় সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় একটা উষ্ণ অন্তস্তল বিশিষ্ট লঘুচাপ তন্ত্র, যার চারদিকে উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু উত্তর দিকে প্রচণ্ডভাবে আবর্তিত হয়।

এর ব্যস সাধারণত তিনশ কিলোমিটার থেকে পনেরশ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং এর কেন্দ্রাঞ্চল বা চোখ হালকা বাতাস ও হালকা মেঘ দ্বারা গঠিত। যার ব্যস কয়েক কিলোমিটার থেকে একশ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। কেন্দ্রের চারদিকে ঘূর্ণায়মান বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার থেকে ৩৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি সৃষ্টি হয় সমুদ্রের বিশালতায়। সমুদ্রের বিশাল জলরাশিই ঘূর্ণিঝড়ের শক্তির সিংহভাগ সরবরাহ করে।

সুপার ঘূর্ণিঝড় আম্পান ম্যাজিক খেলা

ঘূর্ণিঝড়ের নেপথ্য বিজ্ঞানকে বাস্তব জীবনে বুঝতে এবার চলো কিছু কাজ নিজের হাতে করে দেখা যাক। ফেলনা বোতল দিয়ে বাসায় বসে ঘূর্ণিঝড় আম্পান খেলা খেলে এবার হয়ে যাও ক্ষুদে আবহাওয়া বিজ্ঞানী।

খেলতে হলে কী কী লাগবে?

এক লিটারের কোল্ড ড্রিংক্স বা সোডার দুটো খালি বোতল জোগাড় করতে হবে। দুই-তিন ইঞ্চি পরিমাণ শক্ত ধাতব ফয়েল পেপার সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া লাগবে খাবারে ব্যবহৃত নীল রঙ আর শক্ত আঠালো (স্কচটেইপ নয়) বাইন্ডিং টেপ।

কেমন করে আম্পান বানাতে হয়?

খালি বোতল দুটো বেসিনের উপর নিয়ে একটা বোতলের চারভাগের তিনভাগ পরিমাণ পানি দিয়ে ভরো। তারপর বোতলের পানিতে ৫-৬ ফোঁটা পরিমাণ খাবারের নীল রঙ ঢালো। এরপর বোতলের উপরের অংশটায় আগেই সংগ্রহ করা অন্য আরেকটা খালি বোতল উপুড় করে বোতল দুটোর মুখ (চিত্র দেখো) মুখোমুখি কর।

এবার বোতলের মুখ দুটো খুব শক্ত করে বন্ধ করার কাজ। একদম এয়ার টাইট করতে হবে। বোতলের মুখে যেনো এইটুকু পানিও না থাকে আগে খেয়াল করে পানি মুছে নাও। তারপর শক্ত ধাতব ফয়েল পেপার বোতলের মুখ দুটোতে ভালো মতো প্যাঁচাও। এখন শক্ত আঠালো টেপ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্যাঁচাও। ব্যস। হয়ে গেলো তোমার ঘূর্ণিঝড় আম্পান মডেল।

কেমন করে আম্পান খেলতে হয়?

ঘূর্ণিঝড় আম্পান মডেল এবার পরখ করার পালা। সেজন্য সবার আগে পানিভর্তি বোতলের তলায় একটা তোয়ালে বিছিয়ে নাও। কোন কারণে যদি পানি লিক করে পড়ে যায়, তাহলে এই তোয়ালে তা শুষে নেবে। ঘর নোংরা হবে না। এবার মুখোমুখি আটকে থাকা উপরের খালি বোতলটা নিচে (চিত্র দেখো) এবং পানি ভরা বোতলটা উপরে উঠাও। বলতে পারবে এবার কি দেখা যাচ্ছে?

এজন্য উপরের বোতলের গলার কাছে (চিত্র) ভালমতো খেয়াল করে দেখতে হবে। উপরের বোতল থেকে পানি নিচের বোতলে ঢকঢক করে নামার সময় উপরের বোতলের গলার কাছে ফানেলের মতো (চিত্র দেখ) স্থানটায় পানির ঘূর্ণন দেখা যাবে। কীভাবে পানি ক্ষিপ্র গতিতে ঘুরে ঘুরে চক্কর খেতে খেতে নিচের বোতলের মুখ দিয়ে নেমে যাচ্ছে। এটাই আম্পান ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রবিন্দু  বা চোখ। এবার নিশ্চয় বুঝেছো, আম্পানের মতো সুপার ঘূর্ণিঝড়ের ভেতরের চোখ কতটা গতিশীল হয়।

এবার তোমার হাতে বানানো আম্পান ঘূর্ণিঝড়ের বোতল মডেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বাড়ির সবাইকে দেখাও আর বুঝিয়ে বলো, কীভাবে হয় ঘূর্ণিঝড় আম্পান? কেনই বা আম্পানের এতো তীব্র শক্তি বা তেজ? আর হ্যাঁ, মনে রেখো, ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র শক্তি তেজ পরিমাপ করা বা ঘূর্ণিঝড়ের ধরণ বোঝা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আগাম নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয় ফুজিতা স্কেল, সংক্ষেপে এফ স্কেল। বড় হয়ে এফ স্কেলের ব্যবহার শিখে নিতে পারবে।

লেখক পরিচিতি: শিশু-কিশোরদের মাঝে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার কাজে নিবেদিত শেখ আনোয়ার। শিশুদের জন্য বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি করছেন প্রায় দেড় যুগ। পেয়েছেন অগ্রণী ব্যাংক-বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমি পুরস্কার, প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬৪।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!