বইটি পড়লে কিশোর-কিশোরীরা উপকার পাবে

বই: কিশোরসমগ্র, লেখক: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা, প্রকাশনী: চারুলিপি প্রকাশন, প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০১৫, পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৩৯২, মূল্য: ৩৭৫ টাকা

মাজহার সরকারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2020, 02:44 AM
Updated : 23 June 2020, 02:49 AM

কিশোর-কিশোরীদের উপযোগী করে লেখা শিক্ষক ও লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর (জন্ম ২৩ জুন, ১৯৩৬) রচনা সঙ্কলন ‘কিশোরসমগ্র’। এতে ৮টি গল্প, একটি উপন্যাস, একটি অনুবাদ ও বিভিন্ন বিষয়ে ১৫টি প্রবন্ধ আছে।

প্রতিটা লেখায় নতুন স্বপ্ন আছে, নতুন কিছু নির্মাণ করবার প্রেরণা আছে, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের প্রতি ভালোবাসা আছে। আর আছে আমাদের কী কী ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার সে প্রসঙ্গ, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের কথাও আছে। ভাববার বিষয় রয়েছে, জগতকে অনবরত আবিষ্কার করতে থাকা কিশোর-কিশোরীদের মনোজগতের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারে এ বই।

সঙ্কলন শুরু হয়েছে গল্প দিয়ে। ৮টি গল্প নিয়ে লেখকের বই ‘দরজাটা খোলো’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে। গল্পগুলো হলো ‘দরজাটা খোলো’, ‘আমেলার চিঠি’, ‘হারুনের মিথ্যে বলা’, ‘ছোট্ট একটি ভ্রমণ কাহিনী’, ‘আহসানদের পাতানো নানী’, ‘ভুলুর নতুন শহর’, ‘কে কত দূর’ ও ‘নীলুর সমুদ্র দেখা’। প্রতিটা গল্পের ভাষা মনোরম ও সব কটিতেই নানারকম অভিজ্ঞতা আছে কিশোর-কিশোরীদের।

সঙ্কলনের পরের বই ‘বাবুলের বেড়ে ওঠা’ নামে ছোট আকারের একটি কিশোর উপন্যাস। উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালে। উপন্যাসের নায়ক বাবুল বাংলাদেশের তিনটি শহরে বসবাস করেছে। তার বাবা কলেজ-শিক্ষক, মা পড়ান স্কুলে। বাবুল আবিষ্কার করে সে বড় হচ্ছে, তার চারপাশের জগৎটা নিয়মিত বদলে যাচ্ছে। একদিন সে ঠিক করে বাড়ি ছেড়ে পালাবে, কিন্তু কত দূর আর যাওয়া যায়? বাবুল ফিরে আসে বাড়িতে।

তারপর আছে হোমার-রচিত মহাকাব্য ‘অডিসি’ অনুবাদ। এ মহাকাব্যটির খ্যাতি জগৎজোড়া। মহাকাব্যের কাহিনীকে কিশোরদের উপযোগী করে অসাধারণ দক্ষতায় লেখা হয়েছে ‘হোমারের অডিসি’ বইটিতে। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯০ সালে। এর আগে এটি ধারাবাহিকভাবে পাক্ষিক ‘কিশোর বাংলা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

তারপর আছে প্রবন্ধ। এগুলো হলো ‘ছোটদের উইলিয়াম শেক্সপিয়র’, ‘রবীন্দ্রনাথ অত বড় কেন’, ‘নজরুলকে আবার দেখা’, ‘বীর কে, কার হাওয়া উচিত’, ‘মহাকাব্যের জগৎ’, ‘নাটকের কথা’, ‘উপন্যাসের নিজস্বতা’, ‘প্রবন্ধের সংজ্ঞা’, ‘কথায় কথায়’, ‘ভাষা, আমার মাতৃভাষা’, ‘নিষেধটা কোথায়’, ‘আমাদের পহেলা বৈশাখ’, ‘স্বাধীনতার ব্যাপার’, ‘ছোটদের নাটক: কেন ও কেমন’ ও ‘খুঁতখুঁতে হতে নেই’।

প্রবন্ধগুলোতে শিক্ষা দেওয়ার কোনো চেষ্টা করা হয়নি, সবগুলো লেখা আলাপের ভঙ্গিতে। ভাষা নিয়ে বেশ কয়েকটা লেখা আছে। লেখক লিখেন, “১৯৪৭-এ বাঙালিরা ভাগ হয়ে গেছে দুটি রাষ্ট্রে। কিন্তু সেটা রাষ্ট্রের ভাগ, জাতির ভাগ নয়। বাঙালি জাতি পৃথিবীর অনেক দেশে বাস করে, সেসব দেশে রাষ্ট্র ভিন্ন, রাষ্ট্রের ভাষাও ভিন্ন, কিন্তু সেখানে বাঙালিরা যে বাঙালি তার কারণ তারা বাংলা ভাষা ব্যবহার করে। যারা করে না বা করতে পারে না তারা উৎপাটিত হয়ে যায়। উৎপাটিত হলে সুখে থাকা যায় না। আর দেশের ভেতরে থেকেও যারা বাংলা ভাষাকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না তাদেরকে আর যাই হোক শিক্ষিত বলা যাবে না।”

ভাষার সঙ্গে সাহিত্য আসে। তাও এসেছে এই বইতে। মহাকাব্য, উপন্যাস ও নাটক নিয়ে আলাপ করা হয়েছে। নাটকের ওপর দুটি প্রবন্ধ আছে, ‘নাটকের কথা’ ও ‘ছোটদের নাটক: কেন ও কেমন’। এ সম্পর্কে লেখক লিখেন, “নাটক নিয়ে দুটি প্রবন্ধ থাকার কারণ আছে। প্রথম কারণ নাটক সাহিত্যের একটা বড় শাখা, যদিও সেভাবে সবসময়ে দেখা হয় না। দ্বিতীয় কারণ গত শতাব্দীর সত্তর-আশির দশকে ঢাকাতে এবং ঢাকার বাইরেও কিশোরদের ভেতর নাটক করার ব্যাপারে বেশ একটা উৎসাহ দেখা দিয়েছিল। রীতিমতো একটা আন্দোলনই গড়ে উঠেছিল। আমার স্ত্রী, প্রয়াত নাজমা জেসমিন চৌধুরী ওই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ঢাকায় তখন পরপর দুটি কিশোর নাট্যোৎসব হয়। অনেক দল প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিল। ওই উপলক্ষে একটি স্মরণিকা প্রকাশিত হয়, ‘ছোটদের নাটক: কেন ও কেমন’ প্রবন্ধটি ওই স্মরণিকার জন্যই লেখা।”

ভাষার সঙ্গে সাহিত্যিকদের কথাও আসে। এ বইতে তাই রবীন্দ্রনাথ এসেছেন, এসেছেন নজরুল; আর এসেছেন শেক্সপিয়র। শেক্সপিয়রকেও জানা চাই। লেখক লিখেন, “বইয়ের প্রথম প্রবন্ধটি যে শেক্সপিয়রকে নিয়ে, তার পেছনে একটা ছোটখাটো ব্যাপার আছে। সেটা হলো কিশোরদের জন্য ওটাই আমার প্রথম লেখা। লেখাটা ছোট্ট একটি বই হিসেবে বের হয়েছিল ১৯৬২ সালে। ওটাই আমার প্রথম বই। ‘আহমদ পাবলিশিং হাউস’ ঠিক করেছিল একশ জন বিখ্যাত ব্যক্তির ওপর বত্রিশ পৃষ্ঠার আকারে একটি জীবনী-সিরিজ প্রকাশ করবে। তার জন্যই শেক্সপিয়রকে নিয়ে রচনাটি লেখা।”

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘কিশোরসমগ্র’ সঙ্কলনটি হাতে পেয়ে কিশোর-কিশোরী ও পাঠকেরা খুব খুশি হবে। কচি মনে নতুন চিন্তাসূত্র গড়ে দেবে এ বই। তাদের হাতে এটি তুলে দিয়ে বাবা-বাবা, শিক্ষক ও অভিভাককরাও আনন্দ পাবেন।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!