হাত ধুয়ে বিজ্ঞান খেলি, পর্ব ২

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ হয়ে গেছে স্কুল। সময়টা এখন ঘরে থাকার। শিশুরা সবাই ঘরেই থাকো। কুড়ি সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নাও। এবার চলো, হাত ধুয়ে বিজ্ঞান খেলি। ঘরে থাকার সময়কে করি মজাদার।

শেখ আনোয়ারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2020, 02:41 AM
Updated : 22 June 2020, 02:37 PM

পানি অপচয় রোধে সুতো মেশিন

পানি ঢালতে ব্যবহৃত হয় চোঙ্গা বা নল। এছাড়া পানি বা তরল ঢালার সময় কিছু তরল ছিটকে বাইরে পড়ে যায়। অপচয় বেশি হয়। তাই পানি বা পানির মতো অন্যান্য তরল পদার্থ যেমন হ্যান্ডওয়াশ, হ্যাক্সিসল, স্যাভলন, ডেটল, তেল, দুধ, জুস, কোক ইত্যাদি স্বাভাবিকভাবে ঢালতে তোমাদের সবার প্রায়ই সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে তুমি যদি নিচের বিজ্ঞান খেলা বা কৌশলটা প্রয়োগ কর তাহলে এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে পারো।

কেমন করে খেলতে হবে?

তোমাদের নিশ্চয় জানা রয়েছে, সুতো, ফিতা, দড়ি বা টিউব বেয়ে পরিবাহিত হতে পারে পানি বা তরল পদার্থ। এখানে পরীক্ষার জন্য একটা লম্বা সুতো নিয়ে পানিতে ভিজাও। এবার একটা জগ দিয়ে অর্ধেক পানি ভরো। এখন ভিজানো সুতোটার এক প্রান্ত স্কচটেইপ দিয়ে শক্ত করে জগের মুখে লাগাও। তারপর সুতোর অপর প্রান্তটা একটা গ্লাসের মধ্যে স্কচটেইপ দিয়ে একইভাবে শক্ত করে লাগাও। প্রথমে হালকাভাবে টেনে নিশ্চিত হয়ে নাও যে, সুতোর প্রান্ত দুটো স্কচটেইপ দিয়ে সত্যিই শক্ত করে লাগানো রয়েছে কিনা।

এবার খুব ধীরে ধীরে চিত্রের মতো করে জগের মুখটা সুতোর দিকে অল্প করে কাত করো। দেখতে পাবে জগ থেকে সুতো বেয়ে কি সুন্দরভাবে তরল পানি বের হয়ে গ্লাসের মধ্যে দরদর করে গড়িয়ে পড়ছে। ম্যাজিকের মতো দারুণ মজার বিজ্ঞান খেলা, তাই না?

এমন কেন হয়?

সাধারণত পানি বা তরল পদার্থের মধ্যে থাকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাগুলো পরস্পর শক্তভাবে অবস্থান করে থাকে। যখন জগের মুখ দিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে পানি ঢালা হয় তখন পানি ঢালার স্বাভাবিক টাপুর-টুপুর শব্দ হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় পানি প্রবাহের সময় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুকণাগুলো আপেক্ষিক শক্তির দিকে প্রবাহিত হয় এবং সবসময় সরাসরি নিচের দিকেই ধাবিত হয়ে থাকে।

এখন যদি ভেজা সুতো দিয়ে ধীরে ধীরে পানি ঢালো সেক্ষেত্রে বিস্ময়কর এই কৌশলে সুতো দিয়ে নিচে নেমে আসে পানি। একটুও বাইরে পড়ে না। এমনকি পানি পড়ার টাপুর-টুপুর কোন শব্দও হয় না। এরকম হবার কারণ হচ্ছে পানির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুকণাগুলোর পারস্পরিক টান আপেক্ষিক শক্তির চেয়েও বেশি। আর এক্ষেত্রে পানি সরাসরি সোজা গতিতে নিচের দিকে নেমে আসে। কারণ এখানে সুতোর মধ্যে থাকা আঁশগুলো পানির প্রবাহের জন্য ফাঁক তৈরি করে দিয়েছে।

পানি বশীকরণ ম্যাজিক

একটি স্বচ্ছ কাচের গ্লাস নিয়ে পানিতে কানায় কানায় ভর্তি করো। তারপর এই ভরা গ্লাসের মুখে একটা ভিউকার্ড রাখো। এবার এই ভিউকার্ডের নিচে এক হাতের তালু রেখে অন্য হাতে গ্লাসটা ধরো। এবার গ্লাসটা নিচের দিকে উল্টাও বা উপুড় করো। এবার সাবধানে ধীরে ধীরে ভিউকার্ডের নিচ থেকে তোমার হাতটা সরাও। ব্যস।

ভয় পেয়ো না। দেখবে ভিউকার্ডটা তখনো গ্লাসের মুখের সঙ্গে শক্ত আঠার মতো আটকে ঝুলে থাকবে। আর গ্লাস থেকে এইটুকুন পানিও এদিক ওদিক পড়বে না। সাধারণ উষ্ণতার একটা গ্লাস এবং তার ভেতরের পানির ওজন কতইবা হবে? এই পানির গ্লাসের সঙ্গে লাগোয়া কার্ডের প্রতিবর্গ ইঞ্চিতে বড়জোর আড়াইশ গ্রাম হবে! ঠিক এই পরিমাণ চাপ প্রয়োগ করছে। এর বেশি তো নয়, তাই না? এবার লক্ষ্য করো, উল্টানো গ্লাসটায় কার্ডটা শক্তভাবে আটকে রয়েছে।

এমন কেন হয়?

এই ভিউকার্ডের নিচে থাকা বায়ুর চাপ উপরের চাপের চেয়ে প্রতিবর্গ ইঞ্চিতে শতগুণে বেশি হয়ে থাকে। নিচের বায়ুর এই চাপ এতোটাই প্রবল হয়ে থাকে যে কার্ডটাকে দৃঢ়ভাবে গ্লাসের সঙ্গে আটকে থাকতে বাধ্য করে। যার ফলে পানি নিচে পড়ে যেতে পারে না।

পানিতে ভাঙা পেন্সিল

একটা কাচের বয়াম বা গ্লাসের ভেতরে অর্ধেক দ্রবীভূত লবণের পানি দাও। তারপর একই গ্লাসে চামচের সাহায্যে ধীরে ধীরে গ্লাসের উপরে সাধারণ বিশুদ্ধ বা সুপেয় পানি ঢালো। এখন এই গ্লাসের ভেতরের দিকে যদি তুমি একটা পেন্সিল খাড়াভাবে ধরে রাখতে পারো, তাহলে দেখা যাবে, পেন্সিলটা ভেঙে যেনো তিন টুকরো হয়ে গেছে। সত্যিই এটা এক আজব ধাঁধার মতো বৈকি!

এমন কেন হয়?

পানিতে ডুবিয়ে রাখা পেন্সিল থেকে যে আলোকরশ্মি প্রতিফলিত হচ্ছে সেই রশ্মিটা পানির উপরিতলে গ্লাসের পাশে বাঁকা হয়ে গেছে। তুলনামূলকভাবে লবণের দ্রবণ, সাধারণ পানির চেয়ে একটু ভিন্ন ধরণের মিশ্রণ। তাই এই দ্রবণের আলোকরশ্মির প্রতিসরণ কোণটাও ভিন্নরকম হয়ে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, যখন আলাকরশ্মি একটা মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন কতোটা বাঁকা হয়ে প্রবেশ করে? এ বিষয়টা অবশ্য নির্ভর করে বিভিন্ন আলোক মাধ্যমের অপটিক্যাল ডেনসিটির উপর।

লেখক পরিচিতি: শিশু-কিশোরদের মাঝে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার কাজে নিবেদিত শেখ আনোয়ার। শিশুদের জন্য বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি করছেন প্রায় দেড় যুগ। পেয়েছেন অগ্রণী ব্যাংক-বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমি পুরস্কার, প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬৪।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!