কোথা থেকে যে তারা দুষ্টুমিগুলো শেখে কেউ তা জানে না। এমনকি তাদের মা-বাবাও না। তারা কোনদিন সকালে নাস্তা খেয়ে স্কুলে যেতে পারে না। কোন রকমে ঢুলতে ঢুলতে স্কুলে যায়। ক্লাসে শুধু টিচারদের নানা রকম প্রশ্ন করে যা টিচারদের একেবারেই পছন্দ নয়।
স্কুলে থাকাকালীন শুধু টিফিন পিরিয়ডটাই তাদের ভালো লাগে। তবে তারা কখনো বাসায় বানানো মায়ের দেয়া টিফিন খায় না। ক্যান্টিন থেকে নিয়ে কোক, পেপসি আর চিপস খায়। ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পর খুব কমই তারা পড়তে বসে। মাংস থাকলে ভাত খায়, আর না থাকলে দুপুরে খায়ই না।
তারা শুধু ঘড়ি দেখে কখন বিকেল হবে আর তারা খেলার মাঠে যাবে। তারা দুজন প্রতিদিন দুই ঘণ্টা খেলাধুলা করে। গুড্ডু আর বুড্ডুর কাছে এসময়টা দিনের সবচেয়ে প্রিয়। ফুটবল তাদের পছন্দের খেলা। একেক দিন একেক জার্সি পরে তারা খেলার মাঠে যায়। তারা সবসময় খেলায় স্ট্রাইকার হতে চায়। ফুটবল খেলার সময় তারা নাকি মেসিকে ফলো করে!
কিন্তু তাদের বয়স কম দেখে বড় ভাইয়ারা তাদেরকে দলের ক্যাপ্টেন করে না। কি আর করা! তারা দুজনই অবশ্য বিষয়টা মেনে নিয়েছে। খেলার মাঠের দুই ঘণ্টা সময় যেন দুই মিনিটেই ফুরিয়ে যায়! কী যে রাগ লাগে, যখন তাদের মা চিৎকার দিতে দিতে খেলার মাঠে আসেন আর বলেন সময় কখন ফুরিয়েছে খেয়াল আছে! শুধু খেলা আর খেলা। এ ছেলে দুটিকে নিয়ে আমি যে কী করি!
এভাবেই গুড্ডু-বুড্ডুর দিনগুলো চলে যাচ্ছিল। একদিন স্কুল থেকে ফিরে গুড্ডু-ব্ড্ডু তাদের মাকে খুব চিন্তিত দেখে। তারা ভিতরে ভিতরে খুব ভয় পেয়ে যায়। তারা ভাবে স্কুল থেকে কেউ আবার তাদের নামে কোন নালিশ দিল কি? ভয়ে ভয়ে তারা মাকে জিজ্ঞেস করে, মা কী হয়েছে? মা বলে কাল থেকে তোমাদের আর স্কুলে যেতে হবে না।
গুড্ডু-বুড্ডু মনে মনে ভীষণ খুশি হয়ে মাকে বলে, কেন মা?
মা বলে, পৃথিবীতে খুব খারাপ একটা ভাইরাস এসেছে। তার নাম করোনাভাইরাস। তাই তোমাদের আর স্কুলে যেতে হবে না।
গুড্ডু-বুড্ডু ভাবে এ আবার খারাপ ভাইরাস হলো কোথা থেকে! স্কুলে যখন যেতে হবে না, তাহলে তো এটা খুবই ভাল ভাইরাস। মনে মনে দুজনই খুব খুশি হয়।
কিছুক্ষণ পর মা বলেন, বিকেলে আর খেলার মাঠেও যাওয়া যাবে না।
গুড্ডু-বুড্ডু কাঁপতে কাঁপতে বলে, কেন? মাঠে যাবো না কেন?
মা বলেন, স্কুলে গেলে যেমন ভাইরাস তোমাকে ধরতে পারে তেমনি খেলার মাঠেও ধরতে পারে।
গুড্ডু-বুড্ডু ভ্যা করে কেঁদে ফেলে।
তার পরদিন সকাল। গুড্ডু-বুড্ডুর মা সকালেই তাদের ঘুম থেকে উঠিয়ে দেন।
গুড্ডু-বুড্ডু বলে, মা এত সকালে কেন? আজ থেকে তো আর স্কুলে যেতে হবে না।
মা বলে, স্কুলে যেতে হবে না ঠিক আছে, তাই বলে শুয়ে থাকাও চলবে না। ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে নাও।
নাস্তার টেবিলে গিয়ে তারা দেখে ডিম আর পরোটা খেতে হবে তাদের। কিন্তু তারা তো ডিম খায়ই না। তারা ভাবে মা কি সব ভুলে গেল?
তারা সমস্বরে মা বলে ডাক দেয়।
মা বলে, চিৎকার কেন?
তারা বলে, জানো না আমরা পাউরুটি, জেলি, সসেজ এসব নাস্তায় খাই।
মা বলে, ওসব চলবে না আর, খুব বাজে ভাইরাস চারপাশে ঘুরছে। তাই এখন থেকে ডিম, দুধ, ভাত, লেবুপানি এসব খেতে হবে। বার্গার, পিজ্জা এখন থেকে আর খাওয়া চলবে না।
গুড্ডু-বুড্ডু তো হা। বলে কি মা! এখন থেকে এসব স্বাদহীন খাবার খেতে হবে?
মা আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যান।
তাদের দুজনের পেটের ভেতর ইঁদুর দৌড়াচ্ছিল তখন। কী আর করা। অনেক কষ্ট করে ডিম আর পরোটা খেয়ে নেয়।
খাওয়া শেষ হতেই মা হাজির। মা বলে এখন তোমরা রান্নাঘরে গিয়ে তোমাদের প্লেট দুটো ধুয়ে ফেল। এখন থেকে নিজের প্লেট, নিজের কাপড় সব নিজেরাই ধোবে। কারণ কাল থেকে আর বুয়া আসবে না।
গুড্ডু-বুড্ডুর মাথা ঘুরতে থাকে। মা কী বলে? মা-ই তো তাদের আগে পানি নাড়তে দিতো না। তবে এখন?
কিছুক্ষণ পর গুড্ডু-বুড্ডু দেখে অনেক বেলা হয়েছে, কিন্তু তাদের বাবা এখনো অফিসে যাচ্ছে না। তারা ভাবে তবে কী এ ভাইরাস বড়দেরকেও ধরে? ভাইারাস জিনিসটা যে কী তা তারা ঠিক বুঝতে পারে না।
গুড্ডু-বুড্ডু মনে মনে ভাবে, তাহলে করোনাভাইরাস তো খুব দুষ্টু। বড়রা এদেরকে পিটিয়ে মারতে পারে না! না জানি কত বড় মোটা আর বিরাট হয় এরা!
ওমা, বাবা কী করছে বাসায়? ঘর মুছছে? জীবনেও তো বাবাকে গ্লাসে পানি ঢেলে খেতে দেখেনি তারা, তবে আজ কী হল? গুড্ডু-বুড্ডু বুঝেছে এটা নিশ্চয়ই সেই ভাইরাসের অর্ডার। করোনাভাইরাস যে কত ডেঞ্জারাস তা গুড্ডু-বুড্ডুর বোঝা হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর মা বলেন, গুড্ডু-বুড্ডু ক্লাস করতে আসো?
তারা তো অবাক? বাসায় আবার ক্লাস এলো কোত্থেকে?
মা বলেন, আজ থেকে কম্পিউটারে ক্লাস করবে। এর নাম ‘অনলাইন ক্লাস’।
অনলাইন ক্লাসে তাদের অবশ্য বেশ ভালোই লাগে। তাদের মিসদের কম্পিউটারে দেখে তারা মজা পায়। ভাবে ভালই হয়েছে, কম্পিউটারে ক্লাস হলে মিসরা তো তাদের কান ধরতে পারবে না। সকাল সকাল স্কুলেও যেতে হবে না। ১১টার সময় কম্পিউটার খুলে বসলেই হবে।
দুপুর গড়িয়ে যেই না বিকেল আসে গুড্ডু-বুড্ডুর আর ভাল লাগে না। শুধু ইচ্ছে হয় খেলার মাঠে যেতে। ইচ্ছে হয় মাকে ফাঁকি দিয়ে দৌড়ে নিচে চলে যেতে।
তারা দুইজন বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। বারান্দা থেকে খেলার মাঠটা দেখা যায়। কেউ নেই মাঠে। একসময় এ মাঠে বিকেলবেলায় তারা খেলতো, কত্তগুলো করে গোল দিতো। আর আজ সব ফাঁকা।
দুই ভাই মায়ের কাছে আসে। মা বোঝেন তাদের মনটা খুব খারাপ।
মা বলেন, কিছু হয়েছে?
গুড্ডু-বুড্ডু বলে, মা করোনাভাইরাস দেখতে কেমন? এটা কখন যাবে?
মা বলেন, চল টিভিতে দেখি।
গুড্ডু-বুড্ডু দেখে করোনাভাইরাস বলের মধ্যে খোঁচা খোঁচা লাঠির মতন। দেখেই তাদের মুখটা শুকিয়ে যায়।
মাকে তারা বলে, মা এই ভাইরাস কাউকে ধরলে কী হয়?
মা মুখটা শুকনো করে বলেন, খুব খারাপ এ ভাইরাস। ভাইরাসটা মানুষদের মেরে ফেলে।
গুড্ডু-বুড্ডু তো ভয়ে শেষ। তারা যতটুকু বোঝে তাতে মরে যাওয়া খুব খারাপ। মরে গেলে তাকে অনেক দূরে সবাই রেখে আসে। সেখানে কেউ আর যায় না।
গুড্ডু বুড্ডু তাদের মাকে জড়িয়ে ধরে।
মা বলে, এখন থেকে বাসায় সবসময় বিশ সেকেন্ড ধরে হাত ধোবে। হাত না ধুয়ে চোখ মুখ ধরবে না।
তারা বলে, কেন মা?
মা বলে, করোনাভাইরাস হাত থেকে ছড়ায়।
গুড্ডু-বুড্ডু দৌড়ে বাথরুমে যায় হাত ধুতে।
হাত ধুয়ে এসে মাকে বলে, মা, কেউ কি করোনাভাইরাসকে মারতে পারে না?
মা বলে, বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন, তবে পারছেন না।
গুড্ডু-বুড্ডু বলে, মা কেন পৃথিবীতে করোনাভাইরাস এলো?
সে অনেক কারণ। তোমরা ওতো বুঝবে না। তবে ইদানিং প্রকৃতির ওপর মানুষ খুব বেশি টর্চার করা করেছে।
কীভাবে মা?
মা বলে কীভাবে যে তোমাদের বোঝাই! এই যেমন সবাই গাছ কেটে ফেলছে, কিন্তু আর নতুন করে গাছ লাগাচ্ছে না। প্রকৃতি গরম হয়ে গেছে। গরমকালে গরম পড়ে না, শীতকালে শীত নেই। আবার কখনো বা দুটোই খুব বেশি হচ্ছে। গাড়ির কালো ধোঁয়ায় বাতাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জানো কারো তাতে খেয়াল নেই। তাই প্রকৃতি মানুষের ওপর খুব রাগ করেছে।
চলবে...
লেখক পরিচিতি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। পেশায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কর্মকর্তা। তার প্রকাশিত বইগুলো ‘হুমায়ুন আজাদ আমার বাবা’, ‘রূপালি জোছনায় ভেজা জীবন’, ‘রক্তজবাদের কেউ ভালোবাসেনি’, ‘বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে’, ‘যেখানে জীবন সেখানেই আইন’।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |