মা ও মেয়ের দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প ‘ত্রাতিনা’

বই: ত্রাতিনা, ধরন: বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, লেখক: মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ, প্রকাশনী: সময়, প্রথম প্রকাশ: বইমেলা ২০১৮, মূল্য: ২৬০ টাকা

মো. ইয়াকুব আলীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2020, 03:39 AM
Updated : 7 June 2020, 03:39 AM

বহুদিন বাদে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পড়লাম। কিন্তু সেই একই রকম উত্তেজনা অনুভব করলাম। অস্ট্রেলিয়ার যান্ত্রিক জীবনে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে এক বসায় কোন বই শেষ করার মতো অবসর নেই। আর ট্রেনে বাসে চলার সময় ফেইসবুকের মতো একটা নেশার পিছনে সময় নষ্ট করে ফেলি। তবুও এই বইটা পড়া শুরু করার পর ফেইসবুক থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখলাম। কারণ কখন শেষ হবে সেটা নিয়ে ভাবনায় ছিলাম।

এভাবে পড়তে পড়তে শনিবার চলে আসলো। শনিবার সকালে রায়ানের সাঁতারের প্রশিক্ষণ ছিলো। সুইমিংপুলেও বইটা নিয়ে গেলাম। সুইমিংপুলের পাড়ে বসে বইটা পড়া চালিয়ে গেলাম। বাচ্চারা ঝাঁপিয়ে ঝাঁপিয়ে জলে নামছিলো আর পানি ছিটে এসে বইটা ভিজিয়ে দিচ্ছিলো। তবুও পড়া চালিয়ে গেলাম।

বইয়ের মূল চরিত্র ত্রাতিনা, তার মা রায়ীনা আর বাবা গ্রাহা। এছাড়া আছে বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক রিহা। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান কমান্ডার লী। এছাড়া আছে অনাথ আশ্রমের পরিচালক ক্লারা। দুজন এন্ড্রয়েড রুখ এবং খীসা।

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখা নিয়ে একবার হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, আমার লেখা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলো শেষমেশ মানবীয় গল্প হয়ে দাঁড়ায় আর আমার ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল অনেক সুন্দর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখে। তাই ভাবছি এগুলো লেখা ছেড়ে দিবো৷

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী যতদূর পড়েছি জুল ভার্ন থেকে শুরু করে আইজ্যাক আসিমভ সবার লেখাতেই একটা বিষয় খুবই সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। সেটা হলো মানুষের মানবিক গুণাবলির উপরে পৃথিবীতে কিছু নেই। প্রকৃতি এবং মহাবিশ্বকে অনুভব করার মানুষের যে ক্ষমতা এবং রাগ ক্রোধের মতো অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোই মানুষকে যন্ত্রের উপর শ্রেষ্ঠত্ব বা কর্তৃত্ব স্থাপনে সাহায্য করেছে। তাই অনেক বুদ্ধিমান যন্ত্রও শেষমেশ মানুষের কাছে হার মানে।

পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব টের পেয়ে যায় মহাজাগতিক একটি অতি বুদ্ধিমান সত্তা। তারপর থেকেই একটা একটা করে পরীক্ষা চালাতে থাকে পৃথিবীর উপর। তারই ধারাবাহিকতায় একটা গ্রহকণাকে পাঠিয়ে দেয় পৃথিবীর দিকে যার আঘাতে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব লোপ পেয়ে যাবার কথা। কিন্তু ত্রাতিনার মায়ের অসীম সাহসিকতার ফলে মানবজাতির কোন প্রকার ক্ষতি না করেই সে যাত্রা পৃথিবী রক্ষা পায়। এরপর মানুষেরা অভিযানে বের হয় সেই মহাজাগতিক অস্তিত্বের সন্ধানে। তার জন্য তাদেরকে যেতে হবে সৌরজগতের একেবারে বাইরে। সেই অভিযানের বিস্তারিত কাহিনীই এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য।

মানুষেরা শেষমেশ কী পায় সেই অস্তিত্বের সন্ধান আর সেই অস্তিত্বও কি মানুষকে মুক্তি দেয় তার কর্তৃত্ব থেকে? পাশাপাশি মানবীয় সম্পর্কগুলো এসেছে স্বমহিমায়। প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসার প্রকাশও রয়েছে এখানে। বদলে যাওয়া বিশ্বের স্বপ্ন দেখানো হয়েছে যেখানে বিভিন্ন দেশের সীমারেখা লোপ পেয়ে সমগ্র পৃথিবী একটা রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিবিদদের কালো থাবা থেকে পৃথিবী মুক্ত হয়ে বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে যারা শুধু মানবজাতির কল্যাণই কামনা করেন।

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী বইগুলো সবসময়ই সব বয়সের পাঠকের উপযোগী। তাই আমি সেই কিশোর বয়সে ‘কপোট্রনিক সুখ দুঃখ’ পড়ে যতখানি রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম ‘ত্রাতিনা’ পড়তে গিয়েও একই রকম অনুভূতি হলো। সময় থাকলে আপনিও পড়ে দেখতে পারেন।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!