সেই অফিসে (স্কুলে) কী কী করতে হবে সেটা বাসাতেই শেখানোর কথা বলে এক বছর বাসাতেই হলো তার প্রশিক্ষণ। তারপরের বছর ভর্তি হলো স্কুলে। আরাফের মনে খুব আনন্দ সেও যাবে অফিসে (স্কুলে) আব্বু আর চাচ্চুর মতো। তার জন্য কেনা হলো বই, খাতা, পেন্সিল, ইরেজার, টিফিন বক্স, পানির বোতল।
এগুলো স্কুলের ব্যাগে কীভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে হয় তার অনুশীলন চললো বেশ কয়েকবার। খুবই ভালোভাবে পারলো সেটা।
সন্ধ্যা হলে চাচ্চু ফিরে এলে দেখাতে নিয়ে এলো তার নতুন জিনিসপত্র।
চাচ্চু, দেখো, এগুলো নিয়ে আমি অফিস যাবো!
বাহ, ভালো তো! কিন্তু তোমার অফিসকে কি বলে জানো তো?
হুম, স্কুল।
তাহলে এখন থেকে স্কুল বলবে, ঠিক আছে?
আচ্ছা।
এখন বলো, এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় কোনটা তোমার কাছে?
বই।
কয়টা বই তোমার?
ছয়টা।
কীভাবে বুঝলে তোমার ছয়টা বই!
আমি গুণেছি তো!
কখন?
আগে, তুমি আসার আগে।
এখন আবার গুণে দেখো, দুয়েকটা অন্য কোথাও থাকতেও পারে।
আরাফ আবার এক, দুই করে গুণে দেখে ছয়টাই আছে। ওর মুখে বিশ্বজয়ের হাসি।
না, ছয়টা বই-ই আছে।
খুব ভালো, স্কুল থেকে আসার সময় প্রতিদিন এভাবে বই, খাতা সব আছে কিনা তা দেখে আনবে। কেমন?
গুণে গুণে?
গুণে গুণে। আচ্ছা তুমি জানো কীভাবে বইকে পোষ মানাতে হয়?
বইকে পোষ মানাতে হয়?
হু, বইকে পোষ মানাতে হয়। মিকাশাকে যেমন আমরা পোষ মানালাম না, তেমন।
বই কি মিকাশা যে বইকে পোষ মানাতে হয়?
মিকাশা হচ্ছে বিড়াল। মিকাশা জানে আমাদের খাওয়া দাওয়া কখন শেষ হয়। খাওয়া দাওয়ার পর ঠিক চলে আসে। আমরা তখন ওকে খেতে দেই। খেয়ে দেয়ে মিকাশা আবার টা টা দিয়ে চলে যায়। মন ভালো থাকলে আরাফ আর আমার সঙ্গে কিছু কথাবার্তাও বলে।
বই আর মিকাশার মধ্যে কী কী পার্থক্য আছে আর সেগুলো আরাফকে কীভাবে বুঝিয়ে বলবো তা ভাবতে ভাবতেই আরাফ বলে উঠলো, আর তুমি না বলেছো মিকাশার সঙ্গে আমরা বন্ধুত্ব করেছি। তবে যে এখন বলছো মিকাশাকে পোষ মানিয়েছি? পোষ মানানো আর বন্ধুত্ব কি এক হলো?
আমাকে স্বীকার করতেই হয় যে, বন্ধুত্ব আর পোষ মানানো মোটেও এক না। আর পোষ মানানো ব্যাপারটা তেমন ঠিক ব্যাপার না। বন্ধুত্ব ব্যাপারটা তার থেকে অনেক ভালো।
তারপর আমি বললাম, এখন বল তুই কি জানিস বইয়ের সঙ্গে কীভাবে বন্ধুত্ব করতে হয়?
খেতে দিয়ে?
তুই না বললি বই মিকাশা না, তাহলে বই কি খায় নাকি!
তবে?
অবশ্য তুই ঠিকই বলেছিস বইও খায়, তবে অন্যভাবে। যেমন মনে কর মিকাশা খায় কেন আনন্দের জন্য, খেলে ওর খুব আনন্দ হয়। তেমনি বইও আনন্দ পায় যদি ওকে কেউ পড়ে, যত্ন করে।
যত্ন করার নিয়মটা কী?
প্রথম দেখা মানে বাসায় আনার পর আস্তে আস্তে তাকে মনে হাতে নিতে হবে, একটু গায়ে বুলিয়ে একটার পর একটা পাতা উল্টাতে হবে...
পড়বো না?
পরে। প্রথমে হাত বুলিয়ে দিতে হবে, কোথায় লেখা আছে, কোথায় ছবি আছে দেখতে হবে। তারপর নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নিতে হবে।
তারপর?
এরকম সবকটা বই করতে হবে। এরপর দেখতে হবে কোনটা মোটা কোনটা চিকন, কোনটা হালকা, কোনটা ভারি, কোনটাতে বেশি ছবি আছে, কোনটাতে বেশি লেখা আছে। সব সব সব দেখতে হবে, মনে রাখতে হবে। বন্ধু বানাতে হলে বন্ধুর সব খোঁজ-খবর রাখতে হবে না?
তাতো রাখতে হবেই।
তারপর সব বইগুলোতে মলাট দিতে হবে। মানে আরেকটা শক্ত ও সুন্দর কাগজ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। যেন গায়ে টায়ে ব্যথা ট্যথা না পায়। বন্ধু হয়ে বন্ধুর দেখভাল করা আর কি!
বই নাকি শুধু পড়তে হয়!
ওইটাতে সবাই ভুল করে। বন্ধুত্ব না হলে কোন কাজ ভালো হয়! তুমি শুধু পড়ার সময় ওকে ডেকে পড়বে তাহলে ওদের ভালো লাগে? মাঝে মাঝে গল্পও তো করতে হয়, তাই না?
হু, বইকে বন্ধু বানানোর এই নিয়ম?
মোটামুটি এরকমই। তবে তুমি মাথায় নতুন কিছু আসলে সেটাও যোগ করতে পারবে। আসছে তেমন কিছু?
হু, সবকিছু এদের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে।
যেমন?
এরা মনে করো আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকবে, আমার সঙ্গে ঘুমাবে, আমরা মাঝে মাঝে বেড়াতে যাই না, ওরাও আমার সঙ্গে যাবে।
কিন্তু বিছানায়ও এদের নিয়ে গেলে ছিঁড়ে যাবে না?
মাথার কাছে রেখে দেব।
সবচেয়ে ভালো হয় ওদের জন্য তুমি যদি একটা জায়গার ব্যবস্থা করতে পারো, বুঝছো?
সেখানেই ওরা থাকবে? সেটা কোথায়?
বইয়ের জন্য টেবিল, র্যাক, শেলফ এসব আগে থেকেই ঠিক করা আছে। ওরা ওখানেই থাকে। আপাতত ওখানে রাখতে পারো।
আর বেড়ানোরর ব্যাপারটা? বেড়াতে গেলে নিয়ে যেতে পারবো না?
পারবে, তবে বইকে তুমি এমন সময় দেবে যেন বই আর তুমিই থাকো। আরেকজন থাকলে তার এবং তোমার বই দুজনরই খারাপ লাগবে। তারা দুজনই তো তোমার সঙ্গে কথাবার্তা খেলাধুলা করতে চায় তাই না? সবচেয়ে ভালো হয়, সময় যদি ঠিক করে ফেল। কখন বইকে সময় দেবে আর কখন আব্বু, আম্মু, বু (দাদি), চাচ্চুকে সময় দেবে। আর বইয়ের সঙ্গে সময় কাটানোর সঙ্গে সঙ্গে একটু পড়াশোনাও করে নিতে পারো। যখন বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যাবে তখন আমার মনে হয় বই তাতে কিছু মনে করবে না।
তাহলে এখন কী করবো?
তুমি ভেবে বের করো!
কোনটা কেমন দেখি।
ঠিক আছে।
আরাফ সুন্দর করে ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার চলে এসে বললো, ওই ঘরে টেবিল নেই। বইকে রাখার জায়গা নেই। তোমার টেবিলে আমার বই একটু রাখি?
অবশ্যই।
ওকে ওর নতুন সঙ্গী বইয়ের সঙ্গে আপনমনে থাকতে দিয়ে আমিও আমার কাজের নাম করে কানখাড়া করে শুনছিলাম কথোপকথন।
রাতে খাওয়ার সময় ও সবাইকে ওর বইয়ের গল্প শোনাচ্ছিল। বাংলা বইটা সবচেয়ে মোটা। তারপরে ইংরেজি বই। সবচেয়ে রঙিন ইংরেজি বইটা। আর অংক বইয়ে কোন ছড়া-টড়া নেই। আরেকটা ইংরেজি বই আছে যেটাতে অনেক ছবি, কিন্তু কোন ছড়া নেই। সেটাতে সবকিছুর নাম ইংরেজিতে দেয়া আছে।
ওর বাবাও খেতে খেতে এটা-সেটা জিজ্ঞেস করছিল। আরো জানালো, আগামীকাল ওর চাচ্চু বইগুলোতে মলাট দিয়ে দেবে। যেন বইগুলো নষ্ট করতে না পারে কেউ। ওর মা বলল, আচ্ছা, সব তো বুঝলাম। কিন্তু তুই পড়তে শুরু করবি কবে থেকে?
আরাফ লাজুক হেসে বলল, এইতো, বইগুলোর সঙ্গে ঠিকঠাক বন্ধুত্ব হয়ে গেলেই। বন্ধুত্ব না হলে পড়াটাও ঠিকঠাক হবে না।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |