স’তে সেন্টু: এক কিশোরের বাধা পেরোনোর গল্প

বই: স’তে সেন্টু, লেখক: মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ, প্রকাশনী: সময়, প্রথম প্রকাশ: বইমেলা ২০১৬, মূল্য: ২০০ টাকা

মো. ইয়াকুব আলীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2020, 08:03 AM
Updated : 27 May 2020, 08:11 AM

অনেক দিন পর স্যারের একটা কিশোর উপন্যাস পড়লাম। সেই কবে ‘হাতকাটা রবিন’ দিয়ে শুরু, তারপর ‘রাজু ও আগুনালির ভূত’ ছাড়াও আরো কত কিশোর উপন্যাস পড়া হয়েছে।

কিন্তু এখনও স্যারের কোন কিশোর উপন্যাস পড়তে গেলে নিজের কিশোর বয়সটাকে আবার নতুনভাবে আবিষ্কার করি। কিশোর উপন্যাস পড়তে পড়তে হেসে কুটিকুটি হওয়া থেকে শুরু করে গড়িয়ে খাটের উপর থেকে নিচে পড়ে যাওয়া ছিলো একেবারে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। শুরুর দিকে মা কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাতেন।

‘স’তে সেন্টু’ পড়তে গিয়েও সেই একই অবস্থা হলো। ট্রেনের মধ্যে বই পড়তে পড়তে হাসি আটকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবুও হঠাৎ করে হেসে ফেলছি। বাসায় বসে যেটুকু পড়েছি আমার হাসি শুনে আমার দশ বছরের মেয়ে তাহিয়া এসে আমার মায়ের ভঙ্গিতে সন্দেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়েছে।

আগে এক বসাতে উপন্যাসগুলো শেষ করতাম, কিন্তু এখন কয়েকদিন এমনকি মাস লেগে যায় একটা ছোট বই শেষ করতে। যাই হোক, উপন্যাসটা শেষ পর্যন্ত শেষ করতে পেরেছি। আর আমি যেহেতু ধীরে ধীরে পড়ি তাই উপন্যাসের ঘটনাগুলো মনে হয় আমার চোখের সামনে ঘটতে থাকে।

সেন্টুর ভালো নাম খায়রুল হাসান। একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় মা মারা গিয়েছেন। তার নিজেরও স্পাইনাল কডে আঘাত লাগে। মাসখানেক কোমায় থাকার পর সুস্থতা ফিরে পায়। কিন্তু শরীরের নিচের অংশ অবশ হয়ে যায় বলে তাকে হুইল চেয়ারে বসে চলাফেরা করতে হয়। এতে তেমন কোন সমস্যা সে অনুভব করে না। বরং সেটাতে সে দ্রুতই অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আর মানুষ স্বাভাবিক কৌতূহল থেকেই তাকে যেহেতু হুইল চেয়ারে বসার কারণ জিজ্ঞেস করে তাই সে তার হুইল চেয়ারের সঙ্গে ঝুলানো ব্যাগে কারণগুলো লিখে ফটোকপি করে রেখেছে। কেউ জানতে চাইলেই সে সেখান থেকে কাগজগুলো বের করে দেয়।

কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এক একটা কাগজে এক একটা আলাদা কারণ লেখা, তাই হুইল চেয়ারে ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপারটা একেবারে তুচ্ছ একটা ঘটনা বলে প্রতীয়মান হতে শুরু করে। সে ইবুদের স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়, কারণ এই স্কুলটার অষ্টম শ্রেণির ক্লাস হয় নিচ তলায়। যার ফলে হুইল চেয়ার নিয়ে চলাফেরা করতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। সেখানে ভর্তি হয়ে মানিয়ে নেওয়ার গল্পটাই উপন্যাসের মূল উপজীব্য।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে একজন মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে বা মেয়েকে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। দৃঢ় মনোবল না থাকলে সেইসব প্রতিকূলতা পার করা প্রায় অসম্ভব। সেন্টুও প্রচণ্ড রকমের জেদি এবং দৃঢ় মনোবল নিয়ে এক একটা বাধা অতিক্রম করে।

শুধু তাই নয়, সে হুইল চেয়ারে বসেই ফুটবল খেলায় গোলকিপারেরও দায়িত্ব পালন করে। তার খুব ইচ্ছা ছিলো বড় কোন ফোরামে একজন হুইল চেয়ারে বসা মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরার। সুস্মিতার মাধ্যমে সেই সুযোগটা সে পেয়ে যায়। পুরস্কার ঘোষণার সময় যখন তার নাম বলা হয় তখন সে মঞ্চের সামনে গিয়ে সবাইকে অবাক করে দেয়। কারণ বাংলাদেশের বেশিরভাগ আয়োজনে হুইল চেয়ার চলাচলের ব্যবস্থা থাকে না।

নানা মজার মজার কাণ্ড-কারখানার মাধ্যমে উপন্যাসের কাহিনী এগুতে থাকে৷ ইংরেজির স্যারকে জব্দ করা, ক্লাসের আদুভাই বকরকে শায়েস্তা করা সবই অনেক হাসির। এছাড়া ক্যান্সার আক্রান্ত টোটোর মাথার চুল পরে গেলে তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য সবাই একযোগে মাথা কামিয়ে ফেলা সেন্টুর অনুভূতিপ্রবণ মনেরই পরিচয় বহন করে। তবে শেষে এসে সে আটকে যায়, কারণ পরবর্তী ক্লাস নবম শ্রেণির ক্লাস থেকে শুরু করে ল্যাবরেটরি সবই দোতলায়। তাই সেন্টুর লেখাপড়া আবারো থেমে যাবার উপক্রম হয়।

তখন আবারো এগিয়ে আসে তার বন্ধুরা। স্কুল প্রাঙ্গণে শুধু হুইল চেয়ারে দোতলায় ওঠার একটা সহজ লিফট স্থাপনের অনুমতি যোগাড় করে ফেলে। আসলে সবাই মিলে চেষ্টা করলে যে কোনো সৎ উদ্দেশ্য সফল করা সম্ভব।

স্যারের অন্যান্য কিশোর উপন্যাসের মতো এই উপন্যাসটাও একইসঙ্গে অনেক মজার ও মজার ছলে শিক্ষণীয় কথা বলা হয়েছে। আপনারাও আপনার শিশুদেরকে পড়তে দিতে পারেন।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!