জিলাপি দাদু

রাইসা তখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। একদিন বাবার সঙ্গে ওর নানুবাড়ির মেলায় ঘুরতে গিয়েছে। মেলার বড় গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখে জিলাপির দোকান।

মাসুম মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2020, 04:07 AM
Updated : 17 May 2020, 04:07 AM

বুড়ো মতো করে একজন জিলাপি বানাচ্ছে। জিলাপি রাইসার খুব পছন্দ। গুড়ের জিলাপি খেতে ভীষণ ভালোবাসে ও। কত্তো খেয়েছে! কিন্তু বানাতে দেখেনি কখনো। সেদিন দেখতে পেয়ে কখন যে বাবার হাত ছেড়ে ওই বুড়োর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, বুঝতেই পারেনি। কীভাবে জিলাপি বানায় সেটা দেখে অনেক মজা পাচ্ছিল রাইসা।

হঠাৎ খেয়াল হয় বাবা নেই। অমনি কান্না করে দেয়। রাইসাকে কাঁদতে দেখে বুড়ো মানুষটা ওঠে তার কাছে যায়। মাথায় হাত রেখে বলে, ‘কাঁদছো কেন, দিদি ভাই?’

রাইসা বুড়োর হাত চেপে ধরে বলে, ‘বাবা হারিয়ে গেছে তাই।’

বুড়ো কোলে করে রাইসাকে দোকানের ভেতরে নিয়ে বসায়। জিলেপি খেতে দেয়। আদুরে কণ্ঠে বলে, ‘বাবা এখানেই হারিয়েছে তো? দেখো, এখানেই আবার চলে আসবে।’

‘কখন আসবে?’

‘আসবে দিদি ভাই। তুমি কান্না করো না। আর যদি না আসে আমি তোমায় বাড়ি পৌঁছে দেবো।’

‘তুমি চেনো আমাদের বাড়ি?’

‘তুমি চিনিয়ে নিয়ে যাবে।’

‘আমার যে পথ মনে নেই।’

‘তাতে কিচ্ছু অসুবিধে নেই। আমরা দুজনে মিলে পথ খুঁজে নেবো, কেমন?’

‘আচ্ছা, আমি তোমাকে কি বলে ডাকবো?’

‘আমাকে! দাদু বলে ডাকবে।’

তখনি মাইকে ভেসে আসা শব্দ শুনে রাইসার একটা বুদ্ধি আসে। বলে, আচ্ছা দাদু, মাইকে ওটা কিসের শব্দ?

‘ওইখানে পুতুল নাচ হচ্ছে। যাবা দেখতে?’

‘না, যাবো না। তুমি যাবে।’

‘আমি যাব পুতুলনাচ দেখতে? আমার দুষ্ট দিদি ভাই কি বলে!’

‘আরে! পুতুলনাচ দেখতে নয়। তুমি ওখানে যাবে মাইকে কথা বলতে।’

‘গিয়ে কী বলবো?’

‘বলবে, রাইসার বাবা, আপনি যেখানেই থাকেন ওর জিলাপি দাদুর দোকানে চলে আসুন। রাইসা ওখানেই আছে।’

রাইসার কথা শুনে বুড়ো হাসে। বলে, ‘জিলাপি দাদু! এইডা বড় মজার কথা কইছো, বইন। তোমার মাথায় দেহি মেলা বুদ্ধি।

‘হ্যাঁ, অনেক বুদ্ধি আমার। এখন যাও।’

‘আচ্ছা বেশ, যাচ্ছি। তুমি এইখানেই বসো। আমি ওই পুতুল নাচের ঘরে গিয়ে মাইকে বলে আসি রাইসা দিদি ভাই আমার ঘরেই আছে।’

বুড়ো চলে গেলে গুড়ের জিলাপি খেতে খেতে রাইসা ভাবে, বাবা ফিরে এলে বলবে, “সরি, বাবা। আর এমন হবে না। তোমার হাত ছেড়ে একা একা আর কোথাও যাবো না।”

ভাবতে ভাবতেই শুনতে পায় কেউ একজন মাইকে বলছে, রাইসার আব্বু, মেলার বড় গেইটের কাছে লালু মিয়ার জিলাপির দোকানে রাইসা জিলাপি খাচ্ছে আর আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি চলে আসুন।

কিন্তু গলাটা রাইসার জিলাপি দাদুর মতো নয়। ওর হাতের জিলাপি তখনো শেষ হয়নি, এরই মাঝে দাদু ফিরে আসে। তাকে দেখেই রাইসা বলে ‘তোমার নাম লালু মিয়া, দাদু?’

‘হ্যাঁ। কি করে লালু মিয়া হলো, শুনবে? শোনো তাহলে, আমাদের গ্রামে একজন পাগল ছিল নাম লালু মিয়া। পাগল হলেও সে কারো অসুবিধে করতো না। সুযোগ পেলে উল্টো উপকার করতো। সে কারণে গ্রামের মানুষ লালু মিয়াকে খুব ভালবাসতো। আমার বাবাও তাকে অনেক আদর করতো। লালু মিয়া অসুখে যেদিন মারা গেলেন, সেইদিনই আমার জন্ম। তার কথা মনে করে বাবা আমার নাম রেখেছেন লালু মিয়া।’

‘খুব ভালো, খুব ভালো। এখন বলো, আমার বাবা কোথায়, দাদু? আর মাইকে তুমি কথা না বলে আরেকজন কেন বলছিল?’

‘মাইকে কথা বলতে পারি না, দিদি ভাই। ওই যে কি একটা থাকে না! লাঠির মতো! ওইটা মুখের সামনে ধরলেই আমার ভয় ভয় লাগে।’

দাদুর কথা শুনে রাইসা তখন হাসে। বলে, ‘ওটা লাঠি নয়। মাউথ পিস। আমি যখন স্কুলের অনুষ্ঠানে ছড়া পড়ি, তখন আমার মুখের সামনেও ওটা ধরা হয়।’

‘তুমি বুঝি ছড়া পারো? আহারে! কত গুণ আমার দিদি ভাইটার।’

ওদের কথার মাঝেই রাইসার বাবা চলে আসে। দেখে রাইসা এক লাফে বাবার কোলে উঠে। কানে কানে বলে, ‘সরি, বাবা।’

তারপার ওর জিলাপি দাদুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। বলে, ‘এই দাদু আমাকে এত্তগুলা জিলাপি খেতে দিয়েছে। দাদুটা অনেক ভাল।’

মেয়েকে সুন্দরভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য রাইসার বাবা লালু মিয়াকে ধন্যবাদ জানায়। দাওয়াত দিয়ে বলে, ‘আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবেন, লালু কাকা।’

তারপর মাঝে মাঝেই জিলেপি নিয়ে রাইসাকে দেখতে ওদের বাড়ি যায় জিলাপি দাদু। রাইসাও মেলায় গিয়ে আর কখনো হারাইনি। বাবার হাতই ছাড়েনি আর।

ও হ্যাঁ! ভাবছো গল্পটা জানি কীভাবে? শোনো কানে কানে বলছি, আমিই তো রাইসার সেই জিলাপি দাদু। প্রথমবার জিলাপি নিয়ে রাইসাদের বাড়ি যাওয়ার পথে নিজেও হারিয়ে গিয়েছিলাম, হাহাহা।

এই লেখকের আরও লেখা

লেখক পরিচিতি: জন্ম কিশোরগঞ্জে। প্রকাশিত বই: শব্দেরঘ্রাণ (পত্রগল্প), সপ্তর্ষিরমুখ (নাটক), সুদূরে গভীরে (উপন্যাস), আলোর অন্তর্জলি (অণুগল্প), ভেতর ছড়িয়ে পড়ে, (মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস), কাহারো জীবনে নাহি সুখ (অণুগল্প), যেভাবে ভালো থাকি (অণুগল্প), শিশুতোষ গ্রন্থ ইফারবন্ধু। সম্পাদনা করেন ‘বায়োস্কোপ’ (অণুগল্পের কাগজ)। পেশাগত জীবনে শিশুতোষ প্রকাশনা ‘ইকরিমিকরি’তে প্রজেক্ট কো অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা  kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!