ক্ষুধার্ত ছানার খাবারের খোঁজে মা

এক বাঘিনী বনের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছিল খাবারের সন্ধানে। ছানারা তার বড্ড ক্ষুধার্ত। সকাল থেকে দানা-পানি কিছুই পেটে পড়েনি।

সানজিদা সামরিনসানজিদা সামরিন
Published : 9 May 2020, 06:17 PM
Updated : 9 May 2020, 08:38 PM

যেতে যেতে বাঘিনী দেখলো ঘন ঘাসের ভেতর বাদামি রঙের কী যেন নড়ছে। খুব ধীরে ধীরে সেদিকেই এগোলো বাঘিনী। দেখলো ঘাসের ভেতর খুব কাতর অবস্থায় পড়ে আছে ছোট্ট এক হরিণ ছানা। পেছনের এক পায়ে ভীষণ আঘাত পেয়েছে সে, কোনোরকমে এক-আধটু নড়াচড়ার চেষ্টা করছে।

বাঘিনী মনে মনে খুশিই হলো, যাক! এবেলার খাবার বুঝি জুটে গেল। আশপাশ তাকিয়ে সে দেখলো, বেশ দূরে মা হরিণটি ঘাসে মুখ গুঁজে ছোট ছোট ফল কুড়িয়ে জমা করছে। এই সুযোগ চুপিচুপি হরিণ শাবককে নিয়ে যাওয়ার। কাতর ছানাটি টু শব্দও করতে পারবে না, আর মা হরিণ টেরও পাবে না।

এই ভেবে বাঘিনী ছোট্ট হরিণ ছানাকে মুখে তুলে বনের পথ ধরে দ্রুত এগিয়ে যেতে লাগলো। সে একটু বেশিই বেগে যাচ্ছিল, তাই মুখ থেকে খসে মাটিতে পড়ে গেল ছানাটি। যেই না বাঘিনী তাকে তুলতে যাবে অমন সময় খেয়াল করলো, হরিণ ছানা তার দিকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। কী মায়াময় সে দৃষ্টি, কী নিষ্পাপ!

মুখ না ফুটেই যেন সে দৃষ্টি বলছে, ‘আমায় নিয়ো নাগো, দেখছো না কত ব্যথা পেয়েছি। আমার মা আমায় খুঁজবে। না পেলে কাঁদবে।’ বাঘিনীর মনটা কেমন যেন করে উঠলো। সত্যিই হরিণ ছানার পা থেকে অনেক রক্ত ঝরছে। কী করে ব্যথা পেয়েছে কে জানে? তার মা-ও বুঝি টের পায়নি। তার সারা শরীর ধীরে ধীরে আসাড় হয়ে পড়ছে, চোখ আধখানি বন্ধ হয়ে গেছে।

বাঘিনীর চোখে ভেসে উঠলো নিজের সন্তানদের কথা। এত বেলায়ও যারা না খেয়ে বসে আছে। পথ চেয়ে আছে মা কখন তাদের জন্য খাবার নিয়ে আসবে। তারাও নিষ্পাপ ঠিক এই হরিণ ছানাটির মতোই! বিপদে পড়লে তারাও মা ছাড়া অসহায়।

বাঘিনীর এবার খুব মায়া হলো হরিণ ছানার জন্য। আহারে! কত ছোটই না সে! আহত অবস্থায় এভাবে তাকে তুলে আনা বড় অন্যায় বলে মনে হলো তার। নিশ্চয়ই তার মা এতক্ষণে হন্যে হয়ে খুঁজছে তার ছানাকে। না পেয়ে কাঁদছে। বাঘিনীও যে মা, মায়ের কষ্ট, অনুভূতি তার তো অজানা নয়। তড়িঘড়ি করে মাটি থেকে প্রায় নিস্তেজ হয়ে আসা হরিণ ছানাকে আলতো করে মুখে তুলে নিলো যেন সে ব্যথা না পায়। তারপর ফিরে গেল সেই স্থানে যেখান থেকে সে হরিণ ছানাকে তুলে নিয়ে এসেছিল।

গিয়ে দেখলো ছানাটির মা অস্থির হয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে মুখে ডুবিয়ে খুঁজছে ছানাকে। চোখে জল তার। বাঘিনী হরিণ ছানাকে ঘাসের ওপর রেখে মা হরিণকে ডাকলো। মা হরিণ মাথা তুলেই ভয়ে আঁতকে উঠলো! বুক কেঁপে উঠলো তার- ‘এই বুঝি সব শেষ হলো! আমার ছানাকে বুঝি এই বাঘিনীই শেষ করেছে!’

কিন্তু না, বাঘিনী হরিণ মাকে অবাক করেই বলে উঠলো, আমার ছানারা বড্ড ক্ষুধার্ত ছিল। সকাল থেকেই খাবারের খোঁজে বেরিয়েছি, কিন্তু পাইনি। পরে এসে দেখি তোমার ছানা মাটিতে পড়ে আছে। খুশিমনেই ওকে নিয়ে যাচ্ছিলাম আমার ছানাদের জন্য। কিন্তু পারলাম না গো। আমিও তো মা, কোনো মায়ের কোল থোকে তার ছানাকে কেড়ে নেয়া অন্যায় হবে। এই নাও তোমার ছানা। ও বুঝি বড্ড ব্যথা পেয়েছে, সারিয়ে দিও। আর আমায় ক্ষমা করো।

একথা বলে বাঘিনী ফিরে যেতে লাগলে হরিণ মা বললো, তোমায় ধন্যবাদ। আর তোমার ছানাদের কী হবে? তারা যে ক্ষুধার্ত! বাঘিনী মৃদু হেসে উত্তর দিলো, সে আমি খুঁজে নেব। তুমি তোমার ছানাকে বাঁচাও। মা হরিণ কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলো।

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!