ধরিদাদুর মুরগি পালন

সুখানন্দ গ্রামের এক কাঠের বাড়িতে থাকত এক বুড়ো, নাম তার হরিধরি। এই গ্রামে আর একটাও কাঠের বাড়ি পাওয়া যাবে না শুধু হরিধরির বাড়ি  ছাড়া। বন থেকে কাঠ কেটে এনে নিজেই তৈরি করেছে তার এই প্রিয় বাড়ি।

ফাহমিদা হাফছাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2020, 03:58 PM
Updated : 6 May 2020, 03:58 PM

বাড়িতে একাই থাকে হরিধরি। ভীষণ কিপটে সে। ছোট্ট একটা দোকান আছে তার। দোকান ভাড়ার টাকা দিয়েই তার একার সংসার চলে যায়। তার দুটো শখের মুরগিও আছে। সে মুরগির ডিম বিক্রি করে সেই টাকা জমিয়ে রাখত আর অবসর সময়ে টাকা গুণত।

গ্রামের ছেলেমেয়েরা তাকে ধরিদাদু বলে ডাকত। তারা রোজ গল্প শুনতে আসে ধরির কাছে। ধরি কোনো কাল্পনিক গল্প বলত না। নিজের জীবনের ঘটনাগুলোই বলত। প্রতিদিনের মতো আজও হরিধরি গল্প বলা শুরু করল। সবাইকে বলল, চুপটি করে বসে শুনবি। আমার দুই মূল্যবান মুরগির কথা বলব আজ।

একদিন জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে বাড়ি ফেরার পথে আয় বাড়ানোর কথা ভাবতে ভাবতে মুরগি পালার কথা মাথায় এলো। কিন্তু মুরগি যে কিনব, তাতে যদি ক্ষতি হয়? টাকাগুলো যদি জলে যায়? পরে এক বুদ্ধি বের করলাম। ফেলে দেওয়া কতগুলো টুকরো কাঠ জুড়ে দিয়ে একটা ছোট্ট ঘর আর একটা পালঙ্ক তৈরি করে রাজা মশাইয়ের কাছে নিয়ে গেলাম। কাঠের ঘর আর পালঙ্ক দেখিয়ে বললাম, রাজা মশাই, আমি এক গরিব কাঠুরিয়া। এই দুটো উপহার রাজকুমারী মিথিনির জন্য।

রাজকুমারী মিথিনি এরকম উপহার পেয়ে খুব খুশি। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার নতুন আবদার, তাকে কাঠের তৈরি কথা বলা পাখি এনে দিতে হবে। রাজাও তাই হুকুম করলেন। তার জন্য এক মাস সময়ও বেঁধে দিলেন। আর যদি না পারি তাহলে আমাকে কারাগারে বন্দি করে রাখবেন। কি মুশকিলেই যে পড়েছিলাম আমি! এমন পাখি আমি কেমন করে বানাই?

শেষে বাড়ি এসে কাঠের পাখি তো বানালাম, কিন্তু তাতে এরকম অদ্ভুত শক্তি কোত্থেকে দিব! ভীষণ চিন্তায় অস্থির হয়ে পায়চারি করছি, এমন সময় শুনলাম এক অট্টহাসি। চমকে উঠে বললাম, কে? তখন এক বিরাট আকারের দৈত্য আমার সামনে এসে হাজির! হাসি থামিয়ে বলল, আমি তিতিবিরি। এক সপ্তাহ আগে তুমি জঙ্গলের ধারের বড় তেঁতুল গাছটা কেটে আমাকে মুক্তি দিয়েছ। তাই আমি তোমার উপকার করতে চাই। বল, কী চাও?

আমি সব খুলে বললাম দৈত্যকে। সে বলল, এই ব্যাপার! চিন্তা করো না। এই বলে সে পাখিটিতে আজব এক শক্তি ঢুকিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে কাঠের পাখিটা মিষ্টি সুরে গান গাইতে শুরু করল। তারপর সেই দৈত্য হা হা করে হাসতে হাসতে হাওয়ায় মিশে গেল। সঙ্গে সঙ্গে আমি রওয়ানা দিলাম রাজার বাড়ির উদ্দেশ্যে।

পনের দিনের মাথায় রাজা মশাই আমাকে দেখে খুব অবাক হলেন। গান গাওয়া কাঠের পাখি দেখে রাজকুমারী মিথিনির আনন্দের আর শেষ নেই। রাজাও বেশ খুশি। তিনি বললেন, কাঠুরিয়া, এর বিনিময়ে তুমি কী চাও? আমি বললাম, দুটো ডিম পাড়া মুরগি। শুধু দুটি ডিম পাড়া মুরগি! রাজা অবাক হয়ে বললেন। আমি বললাম, জ্বী হুজুর। দুটো মুরগি পেলেই আমি খুশি।

রাজার আদেশে একটু পরই আনা হল দুটো ডিম পাড়া মুরগি। রাজা মশাই হাসতে হাসতে বললেন, এই নাও, তোমার দামি মুরগি! আমি খুশিতে রাজাকে কুর্নিশ জানিয়ে মুরগি দুটো নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।

আমার গল্প শেষ। এবার তোরা যা, বাড়ি গিয়ে পড়তে বস। আর আমিও ডিম বিক্রির টাকা গুণতে থাকি।

লেখক পরিচিতি: শিক্ষার্থী, শহিদ আসাদ কলেজিয়েট গার্লস হাই স্কুল, শিবপুর, নরসিংদী

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা  kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!