রিন্তির স্কুলে ভর্তি হওয়ার গল্প

মায়ের ইচ্ছে রিন্তিকে একটি ভাল স্কুলে ভর্তি করবে। রিন্তিকে মা যে স্কুলে ভর্তি করতে চায় সে স্কুলে ভর্তি হতে হলে মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। আজ রিন্তির সেই পরীক্ষা।

মৃত্তিকা সমাদৃতাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2020, 06:48 AM
Updated : 4 May 2020, 06:48 AM

তাকে হলে ঢুকিয়ে দিয়ে আমি, মা আর বাবা গেটের বাইরে অপেক্ষা করছি। রিন্তির এই পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য মা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিল ওকে পড়ানোর। কারণ আমার বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। আমি তখন ফ্রি। ওকে পড়াতে গিয়ে আমি যে কতরকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি।  আবার কখনো কখনো মজাও পেয়েছি।

ওর শব্দ গঠনগুলো সবচেয়ে মজার ছিল। একবার আমি রিন্তিকে অ-ঔ দিয়ে শব্দ বানিয়ে লিখতে বললাম। এরপর সে যখন আমাকে খাতা দেখালো, তার খাতাটা ছিল এরকম:

                অ- অনেক

                আ- আরেক

                 ই- ইঁদুর

                 ঈ- ঈগল

                 উ- উট

                 ঊ- পারি না

                 ঋ- ঋতু

                 এ- এদিক

                 ঐ- ঐদিক

                 ও- ওষুধ

                 ঔ- ঔষুধ

এটা দেখে আমার এতো রাগ হয়েছিল, আমি মাকে গিয়ে বলি যে, আমি আর ওকে পড়াবো না। তখন মা বললো, তুমি যদি ধৈর্য ধরে ওকে একমাস পড়াতে পারো, তাহলে তোমাকে একটা সাইকেল কিনে দিবো। এই সাইকেলের লোভেই আমি ওকে পড়ানো ছাড়িনি।

আরেকদিনের কথা, আমি রিন্তিকে ঘড়ি চেনানো শেখাচ্ছিলাম। রিন্তি জিজ্ঞেস করে, আপু, ঘড়িতে ১২টার পর ১৩টা বাজে না? আমি বলি, না। ১২টার পর সরাসরি ১টা বেজে যায়। সে বলে, তাহলে  মা যে মাঝে মধ্যে বলে ১২টা বেজে ১৩টা বেজে গেল? এই কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম। আর ভাবলাম,  আমি তো এটা কখনো ভাবিনি। বললাম, কাঁটার ঘড়িতে ১২টা পর্যন্তই থাকে। ডিজিটাল ঘড়িতে ২৪টা পর্যন্ত হতে পারে। 

ছোটবেলায় কম-বেশি অনেকেরই ইংরেজি লেটার উল্টো হয়। রিন্তিরও হতো। একবার আমি ওকে A-D দিয়ে ওয়ার্ড বানাতে বলি। সে লেখে,

               A- apple

               B- dall

               C- cat

               D- boll

এটা দেখে যেমন আমার রাগ হয়েছিল, তেমনি হাসিও পেয়েছিল। এখন অবশ্য রিন্তির এধরনের ভুল আর হয় না। 

রিন্তিকে অংক শেখাতে গিয়েও আমি মুশকিলে পড়েছিলাম। ওকে আমি বলি, তোমার কাছে চারটা চকলেট আছে। আমি তোমাকে আরও তিনটা চকলেট দিলাম। তোমার কাছে এখন কয়টা চকলেট হলো বলো? রিন্তি সঙ্গে সঙ্গে বললো, আমি চকলেট দিয়ে অংক করবো না, তাহলে আমি সব চকলেট খেয়ে ফেলবো। ওর উত্তর শুনে আমি ভেবেছিলাম রিন্তিকে পড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব না, কিন্তু সাইকেলের লোভে সেটা সামলেছিলাম।

এসব ভাবতে ভাবতেই বেল বেজে উঠলো। সব মেয়েরা সিঁড়ি দিয়ে নামছে। বুঝলাম পরীক্ষা শেষ। রিন্তি বেরিয়ে এলে বাবা আমাদের একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল লাঞ্চ করাতে। আমরা সবাই বসার পর বাবা খাবার অর্ডার করলো। আমাদের সারাদিনের আড্ডা জমে খাবার টেবিলে। খাবার না আসা পর্যন্ত আমরা গল্প করতে থাকলাম।

আমি রিন্তিকে জিজ্ঞেস করি, ‘পরীক্ষা কেমন হলো?’ রিন্তি বললো, ‘ভাল’। আমি জানতে চাই তাকে কী প্রশ্ন করলো? সে বললো, 'আমাকে কয়েকটি ছবি দেখিয়ে বলে, এর মধ্যে কোনটি ঘরে থাকে আর কোনটি বাইরে থাকে? ছবিগুলোর মধ্যে ছিল গরু, চেয়ার, ছাতা আরও অনেক কিছু। আমি বলেছি গরু ঘরে থাকে আর চেয়ার ছাতা এগুলো বাইরে থাকে।’

রিন্তির কথা শুনে আমি হতভম্ব। ওকে বললাম, 'তুমি এসব কেন বলেছো!' রিন্তি বললো, 'কারণ গরুতো নিজের গোয়ালঘরে থাকে। চেয়ার, ছাতা এসবতো মানুষের ঘরে থাকে।’ বললাম, 'তুমি টিচারকে এভাবে বুঝিয়ে বলেছিলে?' রিন্তি বললো, 'হ্যাঁ। আর আমার উত্তর শুনে টিচার হেসে দিয়েছিল।' আমি বললাম, 'বাহ্ তোমারতো অনেক বুদ্ধি।'

সে আরও বলে, 'জানো আপু, একটা মেয়ে না পরীক্ষা দিতে দিতে হিসিই করে দিয়েছিল।' আমি বলি, 'কেন?' রিন্তি বলে, 'ঐ স্কুলে যে টয়লেট আছে এটা সে জানতো না। তাই কাউকে বলেওনি।' এভাবে গল্প করতে করতে একসময় ওয়েটার টেবিলে খাবার দিয়ে গেল। আমরা খেতে শুরু করলাম। খাবারটা খুব মজার ছিল।

দুইদিন পর এক সকালে বাবার চিৎকারে ঘুম ভাঙলো। আমরা সবাই ড্রইংরুমে গিয়ে দেখি বাবা মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে লাফাচ্ছে। আমি আর মা জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে? বাবা উল্লসিত গলায় বললো, আমাদের রিন্তি স্কুলে চান্স পেয়ে গেছে। আমি খেয়াল করলাম রিন্তি ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে। এ যেন যুদ্ধ জয়ের হাসি।

লেখক পরিচিত: শিক্ষার্থী, পঞ্চম শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ

এই লেখকের আরও লেখা

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা  kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!