ইচ্ছেপূরণ

স্কুলে রোজার ঈদের ছুটি দিয়ে দিয়েছে। সারাটা দিন বাড়িতে ছোট্ট পাখির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে টিয়া। মা-বাবা সকালেই কাজে বেরিয়ে পড়েছেন।

সানজিদা সামরিনসানজিদা সামরিন
Published : 1 May 2020, 03:18 PM
Updated : 1 May 2020, 03:18 PM

বিকেলে পেঁয়াজু ভাজার গন্ধে বারান্দা থেকে রান্নাঘরে গেল টিয়া। রোজই বুয়া ইফতার তৈরির পর প্রথম লবণ চেখে দেখে সে। একটা পেঁয়াজু খেতে খেতে ফের বারান্দায় এল টিয়া।

একটা চড়ুই বসেছে বারান্দার গ্রিলে। চড়ুইকে একটু পেঁয়াজু খেতে সাধতেই ডানা ঝাপটে উড়ে গেল। ধুর! চড়ুই বুঝলোই না টিয়া কী চায়।

এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। মা ফিরেছে ভেবে সে দৌড়ে গেল দরজা খুলতে। কিন্তু দরজা খুলতেই দেখলো এক ভিখারি দাঁড়িয়ে আছে। টিয়াকে দেখেই বয়স্ক মহিলা বললেন, ইফতার দিবা মা? টিয়া বললো, জ্বি দেব। আপনি বসবেন একটু?

প্রবীণ বৃদ্ধা গালে ভাঁজ ফেলে হাসলেন। দরজার সামনেই ঝোলা রেখে বসলেন। নিজের ছেঁড়া শাড়িটার পাড় তুলে ধরে বৃদ্ধা বললেন, একটা কাপড় দিবা মা? শাড়িটা ছিঁড়ে গেছে। তোমার মায়ের পুরনো শাড়ি আছে না?

টিয়ার খুব মন খারাপ হলো বৃদ্ধার ছেঁড়া শাড়ি দেখে। সে বললো, পুরনো না অনেক নতুন শাড়িও আছে মা’র। আপনি বসুন। আমি আসছি।

টিয়া ছুটে গেল মায়ের শোবার ঘরে। মা শাড়িগুলো আলমারির উপরে একটা স্যুটকেটে সাজিয়ে রাখেন। টিয়া একটা চেয়ার টেনে তার ওপর দাঁড়ালো। গোঁড়ালি উঁচু করে অনেক কষ্ট করে আলমারির ওপর রাখা স্যুটকেস খুলে হাতের নাগালে যে শাড়িটা পেল টেনে নিল। চেয়ার থেকে নেমে দিয়া বিছানার নিচ থেকে একটা শপিং ব্যাগ বের করলো।

এবার শাড়িটা তাতে পুরে গেল ভিখারির কাছে। তার হাতে ব্যাগটা দিয়ে বললো, এই নিন শাড়ি। আর আমি আপনার জন্য ইফতার নিয়ে আসছি। একথা বলে সে রান্নাঘরে গেল। ভিখারি শাড়িটা নেড়েচেড়ে দেখলেন। তার ঠোঁটে প্রাপ্তির হাসি।

দিয়া ইফতার নিয়ে যেই না মূল দরজার কাছাকাছি এলো, দেখলো মা এসে গেছেন! ভিখারির সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। মা’র হাতে শাড়িটা যেটা মাত্র সে ভিখারিকে দিয়েছে। টিয়ার বুক ধড়ফড় করতে লাগলো। মা, নিশ্চয়ই শাড়িটা তার কাছ থেকে নিয়ে নেবেন! টিয়াকে খুব বকবেন। না বলে মায়ের শাড়ি ভিক্ষুককে দিয়ে দিয়েছে টিয়া।

হাতে আনা ইফতারের প্যাকেট ডাইনিং টেবিলের ওপর রেখে দৌড়ে টিয়া নিজের ঘরে গিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। সে শুনতে পেল, মা আর বুয়া কথা বলছে। কিন্তু কী বলছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। মা কি খুব রাগ হবে? খুব বকবে টিয়াকে?

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়ল টেরই পেল না। ঘুম ভাঙলো অনেক রাতে। বাবা টিয়ার বালিশের পাশে বসে মাথায় হাত বুলাচ্ছেন। টিয়া, খাবে না মা? টিয়া ভীত চোখে বাবার দিকে তাকালো। বললো, বাবা, মা কি খুব রেগে আছে আমার ওপর?

বাবা হেসে বললেন, না তো। রাগবে কেন? মা তোমাকে কত করে ডাকলো ইফতারের সময়। উঠলে না যে! টিয়া বললো, বাবা জানো আমি একটা কাজ করেছি। মা আজকে খুব বকবে আমাকে। বাবাকে সব কথা খুলে বললো টিয়া। বাবা অবশ্য আগেই শুনেছিলেন পুরো ঘটনা।

বাবা বললেন, তুমি কোনো অন্যায় তো করোনি। সে বয়স্ক মহিলার শাড়ি দরকার ছিলো তুমি দিয়েছ। এখানে ভুল নেই। কিন্তু একবার মায়ের অনুমতি নিয়ে দিলে আরও ভালো হতো তাই না? তোমার মা তাকে শাড়ি দিয়েছেন আর ইফতারও করিয়েছেন। তুমি এবার খেতে চলো।

টিয়া ডাইনিং টেবিলে গিয়ে দেখলো মা ভাত মেখে তার জন্য অপেক্ষা করছেন। খাওয়া শেষে মা টিয়ার হাতে একটা জামার প্যাকেট তুলে দিল। টিয়া প্যাকেট খুলে তো অবাক! রাজকুমারীর এই গাউনটাই তো সে ঈদে মায়ের কাছে চেয়েছিল!

লেখক পরিচিতি: জন্ম ১৭ অক্টোবর ১৯৯০। প্রকাশিত বই ‘ব্রাজিলের রূপকথা’, ‘কল্পকাহিনী দেশে দেশে’ ও ‘আফ্রিকার রূপকথা’। বইগুলো প্রকাশ করেছে ‘ইকরিমিকরি’। বর্তমানে ‘ইকরিমিকরি’ থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকায় প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছেন। 

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা  kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!