টিকটিকির জেঠা ডাইনোসরের ভাই

নদীর চরায় শুয়ে রোদ পোহাচ্ছিল কুমির। একটু দূরে আখক্ষেতের পাশে বসে একটা আখের গোড়া চিবুচ্ছিল শেয়াল পণ্ডিত।

আলী নাঈমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2020, 07:20 AM
Updated : 27 April 2020, 07:44 AM

শেয়ালের দিকে তাকিয়ে কুমির ভাবছিল, মানুষজন বলে শেয়াল খুব চালাক আর কুমির বোকা। মানুষের সব গল্পে শেয়াল চালাকি করে কুমিরকে ঠকায়। মানুষগুলো কি বোকা! আখের গোড়ার শেষটুকু চিবুতে চিবুতে শেয়াল এলো কুমিরের কাছে। কুমির ভায়া, বহুদিন চিড়িয়াখানার কোনো খবর পাই না। তোমার সাথে কোনো যোগাযোগ আছে?

না রে ভায়া, করোনাভাইরাসের ভয়ে সব বন্ধ। কয়েকদিন ধরে ফোন করতে পারছি না বলে চিড়িয়াখানার কোনো খোঁজখবরও নিতে পারছি না।

কুমির বললো, আমারও একই অবস্থা। শহরে যেতে পারছি না বলে কাউকে ফোন করতে পারছি না। আমার ভাই-বোনরা সব নানা জায়গায় থাকে, কেউ থাকে ভাওয়াল গড়ে, কেউ টাঙ্গাইলের মধুপুর জঙ্গলে। কারো সাথে যোগাযোগ নেই।

আচ্ছা শেয়াল পণ্ডিত, এই যে মানুষজন তোমাকে আর আমাকে নিয়ে গল্প বানায়, সেগুলো তোমার কাছে কেমন লাগে?

আমার তো ভালোই লাগে, গল্পে তুমি কত বোকা আর আমি কত বুদ্ধিমান! তোমার নিশ্চয়ই রাগ লাগে?

না গো পণ্ডিত, না। আমার মোটেও রাগ লাগে না। ছেলেমেয়েরা এসব গল্প পড়ে মজা পায়, তাতেই আমি খুশি।

কিন্তু এখন নাকি আর কেউ শেয়াল-কুমিরের গল্প পড়ে না!

তাই নাকি, তোমাকে কে বলল?

আমার যে ফুফাতো ভাই থাকে গাজীপুর জাতীয় উদ্যানে, গত মাসে সে বলেছিল, ছোট বাচ্চারা এখন আর শেয়াল-কুমিরের গল্প পড়ে না। ওরা নাকি সবাই ডাইনোসরের গল্প পড়ে, ডাইনোসরের কার্টুন দেখে, ডাইনোসরের সিনেমা দেখে।

তাই নাকি? এ খবর তো জানতাম না!

আর বলো না কুমির ভায়া, আমার ভাই এ খবর দিতে গিয়ে প্রায় কেঁদে ফেলেছিল। অবশ্য আমারও খুব মন খারাপ হয়েছিল। বাঘ, শেয়াল, কুমির, বানরকে নিয়ে সন্ধ্যার পর গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে দাদি-নানিরা কত গল্প শোনাতো ছোট ছেলেমেয়েদের। সেইসব গল্প শুনে ছোটরা কত আমোদ পেত। এখন আর কেউ নাকি গল্প শোনায় না, সবাই টিভিতে নইলে মোবাইলে আর নাহলে কম্পিউটারে সিনেমা দেখে, গেমস খেলে। আর কী কী সব করে!

এতো খুব চিন্তার কথা বললে পণ্ডিত। তা তুমি এক কাজ কর না, যেভাবেই হোক, আমার মোবাইলে কিছু টাকা রিচার্জের ব্যবস্থা কর। তারপর চল দুজন মিলে দেখি, কী সিনেমা ছোটরা দেখে আজকাল। শেয়াল বহু কষ্টে এক বানরের হাতে-পায়ে ধরে মোবাইলে টাকা রিচার্জের ব্যবস্থা করল। তারপর কুমির আর শেয়াল একে একে ফোন করল চিড়িয়াখানায়, গাজীপুর জাতীয় উদ্যান, মধুপুর জঙ্গলসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আত্মীয়-স্বজনের কাছে। তারপর দুজন মিলে দেখতে বসল ডাইনোসরের সিনেমা আর কার্টুন। কুমির আর শেয়াল মিলে অনেক কার্টুন, অনেক সিনেমা দেখল। সেগুলোর নাম আমার জানা নেই।

পরদিন সকালে কুমির বলল, পণ্ডিত, সিনেমা তো অনেক দেখলাম। কিন্তু ডাইনোসররা পৃথিবী থেকে কোথায় হারিয়ে গেল সেটা তো জানা দরকার। সেটা কোথায় জানতে পারব?

শেয়াল বললো, শোন কুমির, শহরে একটা পাঠাগার আছে, সেখানে নিশ্চয়ই ডাইনোসরদের নিয়ে বইপত্র পাওয়া যাবে। বই না পড়ে তো কোনোকিছু জানা যাবে না। আমি গিয়ে কিছু বইপত্র নিয়ে আসি।

কুমির বললো, তাহলে তাই কর। সেদিন বিকেলে শেয়াল গেল শহরে। শহরের এক প্রান্তে পাড়ায় একটা পাঠাগার ছিল। ওই পাঠাগারের ছেলেমেয়েদের সাথে শেয়ালের ছিল খুব ভাব। ওরা শেয়ালকে অনেকগুলো বই দিল ডাইনোসর বিষয়ে। এক সপ্তাহ পরে বই ফেরত দেওয়ার কথা বলে শেয়াল বই নিয়ে ফিরে গেল জঙ্গলে, তুলে দিল কুমিরের হাতে। কুমির কী কী বই পড়েছে সেসব বইয়ের নাম আমার জানা নেই।

বইটই পড়ে কুমির তো অবাক। আরে এ যে দেখি দারুণ খবর। পরদিন সকালেই ফোন করল শিয়ালকে। শিয়াল পণ্ডিত, তাড়াতাড়ি চলে আস।

শিয়াল বললো, কী ব্যাপার, কোনো সমস্যা?

আরে না, দারুণ এক খবর পেয়েছি। তুমি এলে তবে বলব। পড়িমরি করে শেয়াল হাজির হলো কুমিরের ডেরায়।

কী খবর বলো তো কুমির ভায়া।

তুমি চিন্তাও করতে পারবে না কী দারুণ খবর পেয়েছি বই পড়ে।

আহা, বলোই না খবরটা।

তুমি তো পণ্ডিত মানুষ, তুমি আন্দাজ কর তো কী খবর হতে পারে?

আমি কীভাবে আন্দাজ করব!

শোনো পণ্ডিত, আমরা নাকি ডাইনোসরের কাজিন, মানে মামাত-ফুফাত ভাই। তাই নাকি?

তাহলে আর বলছি কী!

সব খুলে বলো তো কুমির ভায়া।

ডাইনোসর মানে কী জানো? ডাইনোসর মানে হলো ভয়ংকর টিকিটিকি!

কী বললে, টিকটিকি? টিকটিকি? শেয়াল হি হি করে হাসতে হাসতে বলল।

আহ, আগেই এতো হেসো না। আগে শোনো ভালো করে কথাটা। ডেনিওস অর্থ ভয়ংকর, আর সেরিওস অর্থ টিকটিকি। এইভাবে ডাইনোসর মানে হলো ভয়ংকর টিকটিকি। এ নাম মানুষের দেওয়া। ডাইনোসররা তো আর নিজেরা নিজেদের নাম দিতে পারেনি। যেমন আমরা যে কুমির, এটাও মানুষের দেওয়া, তোমরা যে শেয়াল এ নামও মানুষের দেওয়া। যাই হোক, শোনো। ডাইনোসররা বাস করত প্রায় ২৩ কোটি বছর আগে। ওরা টিকে ছিল প্রায় ১৬ কোটি বছর। সবচেয়ে বড় আকারের ডাইনোসরেরা ১৯০ ফুট (৫৮ মিটার) পর্যন্ত লম্বা এবং ৩০ ফুট ৪ ইঞ্চি (৯.২৫ মিটার) পর্যন্ত উঁচু হতো। কিন্তু সব ডাইনোসরই বড় আকরের ছিল- এমন নয়।

তাহলে?

ছোট আকারের ডাইনোসরও ছিল, এই এতটুকু, মাত্র ২০ ইঞ্চি (৫০ সেন্টিমিটার)।

তাই নাকি?

তাহলে আর বলছি কি। আর শোনো, সে আমলে আমাদের পূর্বসূরী কুমিরেরা ছিল ইয়া বড় বড়। ওদের নাম ছিল ‘রাজানা’। ওরা লম্বায় ছিল ২৩ ফুট। আর ওজনে প্রায় হাজার কেজির কাছাকাছি। এই বিরাট বিরাট কুমিররা ‘রাজত্ব’ করত আজ থেকে প্রায় ১৭ কোটি বছর আগে, জুরাসিক যুগে। কুমির আর ডাইনোসরের যুদ্ধও হতো।

শেয়াল বললো, ওরে বাবা। তো সেই যুদ্ধে কে জিতত? নিশ্চয়ই ডাইনোসর? আরে না, কুমিররা ছিল শিকারি প্রাণি, তারা ডাইনোসর ধরে ধরে খেত। কুমিরদের কাছে ডাইনোসররা হেরে যেতে।

বলছ কী এসব?

আরে শুধু কী এই? বিজ্ঞানীদের ধারণা, কুমির আর ডাইনোসরেরা একই পূর্বসূরী থেকে বিবর্তিত হয়েছে। এই যে আকাশে পাখি উড়তে দেখ, সেগুলোও ডাইনোসরের আত্মীয়-স্বজন। কিন্তু শুধু পাখিরাই নয়, এই যে টিকটিকি, গিরগিটি এরাও সবাই ডাইনোসরদের আত্মীয়-স্বজন।

কুমিরের কথা শুনতে শুনতে বিস্ময়ে শেয়ালের চোখ গোল গোল হয়ে গেল। বললো, ওরে বাবা, এসব কথা তো জানতাম না!

আরে, আমিই কি জানতাম এসব কথা। বই পড়তে গিয়েই তো জানতে পারলাম। পণ্ডিত, আমরা ডাইনোসরের ভাই, এটা জানার পর থেকে তো আমার বুকটা গর্বে ভরে গেছে। তুমি এক কাজ কর। আগামী পরশুদিন বনের সব পশুপাখিকে ডাক, সবাইকে এসব বিষয় জানানো দরকার।

কুমিরের পরামর্শ শুনে শেয়াল চলে গেল বনের সব পশুপাখিকে খবর দিতে। আমরাও বনের পশুপাখিদের সভায় কী আলোচনা হয় সেটা জানার অপেক্ষায় রইলাম।

এই লেখকের আরও লেখা

বাঘ মামার মন ভালো নেই

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা  kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!