লকডাউনে বাসায় বসে দেখার মতো ৯টি চলচ্চিত্র

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্কুল এখন ছুটি। এ দিনগুলোতে ঘরে বসে নানা সৃজনশীল কাজ করা যায়। সময় কাটাতে একটা উপায় হলো দেশ বিদেশের ভালো কিছু চলচ্চিত্র দেখে ফেলা। এমনই কিছু চলচ্চিত্রের খোঁজ আজ দেওয়া হলো যেগুলো পুনর্বার দেখা যেতে পারে। 

উম্মে হাবীবা সিলভিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2020, 05:15 AM
Updated : 27 April 2020, 08:51 AM
১. পথের পাঁচালী

গ্রামের নাম নিশ্চিন্দিপুর। সেখানে বাস করে হরিহর রায় ও সর্বজয়া। তাদের মেয়ে দুর্গা ও ছেলে অপু, সঙ্গে বাস করে হরিহরের বিধবা দিদি ইন্দির ঠাকুর।

ভ্রাম্যমান বায়স্কোপ দেখে, মিঠাইঅলার পেছনে দৌড়ে আর রেলগাড়ির পেছনে ছুটে অপু-দুর্গার শৈশব কাটে। এদিকে স্বল্প আয়ে পুরোহিত হরিহরের সংসার চলে না, সে স্বপ্ন দেখে একদিন তার লেখা পালা গ্রামেগঞ্জে অভিনীত হবে। আরও বেশি আয়ের আশায় হরিহরণ ঘর ছাড়ে।

একদিন হরিহর ফিরে এলেও সে জানতে পারে তার একমাত্র মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে, জ্বরে ভুগে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে। শেষ দৃশ্যে ভাগ্য গড়তে নিজের গ্রাম ছেড়ে অজানা গন্তব্যের দিকে রওয়ানা হয় হরিহরের পরিবার। বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের মূল গল্পে ১৯৫৫ সালে মুক্তি পাওয়া এ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন সত্যজিৎ রায়।

২. রুম অন দ্য ব্রুম

এটি এক দয়ালু ডাইনি ও তার বেড়ালের গল্প। তারা ঝাড়ুতে চড়ে আকাশে উড়ে বেড়ায়। তেমনই একদিন তারা মনের আনন্দে আকাশে উড়ছিলো। হঠাৎ বাতাস এসে ডাইনির টুপি ফেলে দেয়, তার ধনুক ও জাদুরকাঠিও উড়িয়ে নেয়। ভাগ্যক্রমে নিখোঁজ জিনিসগুলো খুঁজে পায় কুকুর, পাখি ও ব্যাঙ। বিনিময়ে তাদের ঝাড়ুতে চড়াতে রাজি হয় ডাইনি।

কিন্তু এত বন্ধুদের জন্য ঝাড়ুতে কি জায়গা আছে? ক্ষুধার্ত ড্রাগনের হাত থেকে ডাইনি কি বাঁচাতে পারবে নিজেকে? লেখক ও নাট্যকার জুলিয়া ডোনাল্ডসনের লেখা গল্পের এ বইটির নাম ‘রুম অন দ্য ব্রুম’, বইটি অলঙ্করণ করেছেন অ্যাক্সেল শেফলার। এ গল্পটি কেন্দ্র করেই ২০১২ সালে অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা ম্যাক্স ল্যাং ও জ্যান লাচাউ।

৩. ফারডিনান্ড

‘ফারডিনান্ড’ হলো বুল বা লড়াকু ষাঁড়ের গল্প। স্পেনের ফাইটিং ম্যাটাডোরের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য এসব ষাঁড় ব্যবহার করা হলেও ফারডিনান্ডের ভালো লাগে ফুল শুঁকে বেড়াতে। তার বাবাও কোন এক ম্যাটাডোরের প্রদর্শনী থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল।

একারণে লড়াইয়ের  আসর ছেড়ে ফারডিনান্ড বেরিয়ে পড়ে নিজের পরিবারের সন্ধানে। পল্লী স্পেনের একটি প্রশিক্ষণ শিবির থেকে পালিয়ে যায় সে। খামারে বসবাসকারী একটি মেয়ে তাকে আশ্রয় দেয়, এদিকে কর্তৃপক্ষ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায়। পুনরায় বন্দি হয়ে পড়ে ফারডিনান্ড। এ বন্দিদশা থেকে কীভাবে মুক্তি পাবে সে? ‘দ্য স্টোরি অব ফারডিনান্ড’ যুক্তরাষ্ট্রের লেখক মুনরো লিফের লেখা ও রবার্ট লসনের অলঙ্করণ করা একটি বই। এ গল্পটি নিয়েই ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ফারডিনান্ড’ পরিচালনা করেন কার্লোস সালদানা।

৪. র‍্যাটাটুলি

‘রেম’ নামে এক ইঁদুরের রাঁধুনি হওয়ার গল্প এটি। রাঁধুনি হতে গিয়ে নিজ পরিবার ও মানুষের অসন্তোষের মুখে পড়ে রেম। চলে আসে প্যারিসে। সেখানে একটি রেস্তোরায় গার্বেজ বয়ের কাজের মাধ্যমে তার স্বপ্ন পূরণ হয়। তা করতে গিয়ে তাকে ফ্রান্সের অন্যতম সেরা খাবার সমালোচক আন্তন ইগোর প্রশংসাপত্র পেতে হয়। ২০০৭ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবির পরিচালক হলেন ব্র্যাড বার্ড।

৫. মাই নেইবার তোরোরো

দুই বোন সাতসুকে ও মেইকে নিয়ে এ সিনেমার গল্প। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাপানের এক শহর ছেড়ে তারা গ্রামের এক পুরনো বাড়িতে এসে ওঠে। তাদের বাবা পেশায় অধ্যাপক, মা তখন কাছের এক হাসপাতালে ভর্তি। এমন সময় দুই বোন রহস্যময় জীব তোতোরোর দেখা পায়। তোতোরো তাদের বনের মধ্যে ঘুরতে নিয়ে যায় এবং জীবন সম্পর্কে অনেক ইতিবাচক শিক্ষা দেয়। জাপানি চলচ্চিত্র নির্মাতা হায়ায়ো মিয়াজাকির তোতোরো মুক্তি পায় ১৯৮৮ সালে।

৬. চিলড্রেন অব হেভেন

তেহরানের শহরতলির এক ছোট্ট ছেলে আলী। ছোট বোন জোহরার ছেঁড়া জুতো সারাতে বাজারে যায়। কিন্তু জুতোজোড়া যায় হারিয়ে। অনেক খুঁজেও আর পাওয়া যায় না। ভয়ের চোটে বাড়িতে কিছুই জানায় না আলী। কিন্তু জোহরা তার একমাত্র জুতোজোড়া হারাবার শোকে কাঁদতে শুরু করে। বাবা-মাকে গিয়ে ঘটনা বলতে চাইলে অনেক অনুনয় করে জোহরাকে ঠেকায় আলী। নিজের জুতোজোড়া ধার দিতে রাজি হয়।

পরদিন সকালে আলীর জুতো পায়ে পরে স্কুলে যায় জোহরা। স্কুল ছুটির পরপর এক দৌড়ে ভাইয়ের কাছে আসে জোহরা। কারণ সেই জুতো পরে আবার স্কুলে যাবে আলী। কিন্তু এভাবে প্রতিদিনই স্কুলে যেতে দেরি হয়ে যায় আলীর। একদিন স্কুলে দৌড় প্রতিযোগিতার ঘোষণা হয়। সে প্রতিযোগিতার একটি পুরস্কার হলো এক জোড়া জুতো।

জুতো জোড়া পেতে প্রতিযোগিতায় প্রাণপণে দৌড়ায় আলী। কিন্তু দৌড় শেষে প্রথম হয়েও কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। কারণ সে হতে চেয়েছিলো তৃতীয়, তৃতীয় হলে যে পুরস্কার হিসেবে পাওয়া যাবে এক জোড়া নতুন জুতো! ১৯৯৮ সালে ইরানে মুক্তি পাওয়া এ ছবিটির পরিচালক মাজিদ মাজিদি।

৭. গুপী গাইন বাঘা বাইন

আমলকী গ্রামের গুপী ও হরতুকী গ্রামের বাঘা দুজনই গানের অনুরক্ত, কিন্তু তারা গান গাইতে জানে না। নিজ নিজ গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয় তারা। পথে এক বনে দুজনের দেখা হয় ও সেখানে ভূতের রাজা তাদের তিনটি বর দেন।

বরগুলো হলো- যখন ইচ্ছে মনমতো খাবার, দুই জোড়া জুতো ও দুজনের হাতে হাতে তালি দিয়ে দেশবিদেশ ঘুরতে পারা ও লোককে গান শুনিয়ে অবশ করে দেওয়া। শুন্ডী রাজ্যের রাজাকে গান শুনিয়ে তারা তার সভাগায়ক হয়ে সেখানেই থেকে যায়। এভাবেই এগুতে থাকে শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা এ রূপকথা। এটি অবলম্বনে ১৯৬৮ সালে মুক্তি পাওয়া এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন সত্যজিৎ রায়।

৮. কোকো

মেক্সিকোর একটি শহর সান্তা সেসিলিয়ার গানপ্রিয় ১২ বছরের ছেলে মিগুয়েল। তার পরিবারে গান-বাজনা নিষেধ। কিন্তু মিগুয়েল এ অচলায়তন মানতে চায় না। কাঠ দিয়ে গিটার বানিয়ে আড়ালে চলে তার গানচর্চা।

মরা মানুষের ছবি ঝুলিয়ে রাখার একটা উৎসব হয় সেসিলিয়ায়। মেক্সিকান লোকসংস্কৃতিতে এ উৎসবকে বলা হয় ‘ডে অব দ্য ডেথ’। বিশ্বাস করা হয় যে মৃতরা ওইদিন পৃথিবীতে বেড়াতে আসে, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করে। সেদিন মিগুয়েল ভুল করে মরা মানুষের দেশে ঢুকে পড়ে, সেখানে বাউন্ডুলে হেক্টরের সঙ্গে তার দেখা হয়। শুরু হয় মিগুয়েলের পৃথিবীতে ফেরত আসা এবং তার পরিবারের পুরো ইতিহাস উদঘাটনের যাত্রা। ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া এ চলচ্চিত্রটির পরিচালক লি আঙ্করিচ।

৯. মোয়ানা

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ছোট্ট একটি দ্বীপ মতুনুই। ফুল-ফল, শস্য ও প্রাণিজ আমিষের প্রাচুর্যে ভরা এ দ্বীপ। মাউই নামের এক উপদেবতার অপকর্মে দ্বীপে একবার দুর্যোগ নেমে আসে। সেই দ্বীপের রাজকন্যা মোয়ানা দ্বীপবাসীদের রক্ষা করে তার পরিবারের জন্য সম্মান বয়ে আনে। সেই দ্বীপের রাজা হলো মোয়ানার বাবা টুই। ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া এ চলচ্চিত্রটির পরিচালক রন ক্লেমেন্টস ও জন মুস্কার।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!