বাঘ মামার মন ভালো নেই

সাত সকালে বাঘ মামার ফোন পেয়ে শিয়াল অবাক। ভোরের আলো এখনও ভালো করে ফোটেনি।

আলী নাঈমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2020, 02:32 AM
Updated : 9 April 2020, 02:32 AM

হ্যালো বাঘ মামা। এই সাত সকালে কী মনে করে?

তুই এখনই আমার বাসায় চলে আয় শিয়াল।

এই সাত সকালে?

আর বলিস না পণ্ডিত, কাল রাত থেকে মনটা খুব খারাপ।

কেন মামা, কী হয়েছে?

ফোনে সব বলা যাবে না, তুই আয়।

শিয়াল মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে, এখনো দাঁত ব্রাশ করেনি, হাত-মুখ ধোয়া হয়নি। নাস্তাও করা হয়নি। এখনই যাবে, নাকি নাস্তা করে তারপর যাবে? কে জানে বাবা, বাঘ মামার মেজাজের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। দেরি হলে আবার কান ধরে নিলডাউন করিয়ে রাখবে। নিলডাউন হতে শিয়ালের খুব কষ্ট হয়।

এক মাথা চিন্তা নিয়ে শিয়াল গেল বাঘ মামার দরবারে। বাঘের চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ।

কী ব্যাপার মামা? তোমার চোখ-মুখ এত শুকনো কেন? রাতে কোনো শিকার জোটেনি?

তোকে আর কী বলব ভাগ্নে, কাল ঘুরতে ঘুরতে গিয়েছিলাম শহরে।

শহরের মানুষ তোমাকে মারধর করেনি তো?

আরে না, মারধর করলে তাও তো ভালো ছিল। এমন ঘটনা ঘটেছে যে দুঃখে লজ্জায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

ব্যাপারটা একটু খুলে বলো তো মামা।

বাঘ বলল, কাল ঘুরতে ঘুরতে ভাবলাম, সুন্দরবন থেকে বেরিয়ে শহরের হালচাল একটু দেখে আসি। শহরে এদিক-সেদিক ঘুরতে ঘুরতে এক বাসার পাশে গিয়ে একটু জিরোতে বসেছি, এমন সময় শুনি একটা বাচ্চা মেয়ে কাঁদছে। আর তার বাবা-মা তাকে নানা কথা বলে সান্ত্বনা দিচ্ছে।

কিন্তু কিছুতেই বাচ্চাটার কান্না থামছে না। সে কিছুতেই ভাত খাবে না। তার বাবা বলছে, তুমি ভাত খেলে আমি তোমাকে চিড়িয়াখানা দেখাতে নিয়ে যাব। সেখানে বাঘ আছে। তোমাকে বাঘ দেখাব। আমি ভাবলাম, বাঘ দেখার কথা শুনে মেয়েটি নিশ্চয়ই খুশি হবে! কিন্তু কিসের কি! মেয়েটার কান্না তো থামেই না।

তখন তার বাবা বলল, তুমি কান্না থামালে আমি তোমাকে বাঘের ডাক ডেকে শোনাব। এই শুনে আমি ভাবলাম, আমি তো পাশেই আছি। মেয়েটির বাবাকে একটু সাহায্য করি। আমি গলা পরিষ্কার করে ‘হালুম’ বলে একটা ডাক দিলাম। এই শুনে মেয়েটির বাবা ভয় পেয়ে বলল, ওই শোন বাঘ ডাকছে।

কিন্তু এতেও মেয়েটি কান্না বন্ধ করল না। আমার খুব রাগ হলো। আমি ভাবলাম, ডাকটা বেশি জোরে হয়নি বলেই বোধহয় মেয়েটি ভয় পায়নি। এবার বেশ জোরে হালুম হালুম করে ডাক দিলাম। কী বলব ভাগ্নে! মেয়েটি আরও জোরে কাঁদতে থাকল। এদিকে আমার ডাক শুনে মেয়ের বাবা তো ভয়ে অজ্ঞান।

আমি জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম, এই মেয়ে, তুমি আমার ডাক শুনে ভয় পাওনি? মেয়েটি আমাকে দেখে অবাক হয়ে বলল, তোমাকে দেখে ভয় পাব কেন? আমি জানতে চাইলাম, তুমি কী দেখে ভয় পাও? তখন মেয়েটি বলল, আমি কোনো কিছু দেখেই ভয় পাই না। এই কথা শোনার পর থেকে আমার মন খারাপ। মনের দুঃখে রাতে কিছু খেতেও পারিনি, ভালো করে ঘুমাতেও পারিনি।

বাঘের কাহিনী শুনে শিয়াল বলল, এতে তোমার ভয় পাওয়ার কী আছে মামা? আজকালকার বাচ্চাকাচ্চাদের কথা ছেড়ে দাও। ওরা কী ভালোবাসে আর কী ভয় পায়- তার কোনো ঠিক নেই। বাঘ কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, তাই বলে বাঘ দেখে ভয় পাবে না- এটা কী করে হয়? তুই না পণ্ডিত, তুই এর একটা বিহিত কর ভাগ্নে। ঠিক আছে মামা, আমি দেখছি। আমাকে একটা দিন সময় দাও, কালকের মধ্যে তোমাকে জানাব।

বাঘকে কোনোভাবে সান্ত্বনা দিয়ে শিয়াল চলল বাড়ি। কিন্তু সে কিছুতেই ভেবে পেল না, ছোটরা বাঘকে ভয় পায় না- এর কী বিহিত করবে। সারাদিন চিন্তায় চিন্তায় কাটল শিয়ালের। কী করি, কী করি! কিন্তু কিছুই ভেবে পেল না। রাতে শুয়ে শুয়ে গিন্নির কাছে সব খুলে বলল শিয়াল।

শুনে শিয়াল গিন্নি বলল, তুমি আর তোমার মামা এখনো পুরনো আমলে পড়ে আছো। তোমরা বইপত্র কিছু পড়ো না, দিন-দুনিয়ার কোনো খবরও রাখো না। শিয়াল বলল: কেন গিন্নি, এমন কথা কেন বললে? শিয়াল গিন্নি বলল: দুনিয়া জুড়ে ছেলেমেয়েরা এখন পরিবেশ রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছে, নানা বিলুপ্ত প্রাণী রক্ষার জন্য আন্দোলন করছে। ওরা প্রাণীকে ভালোবাসার কথা বলছে, ভয় পাওয়ার কথা ওরা ভাববে কেন?

শিয়াল বললো, তাহলে এখন কী করা যায়? শিয়াল গিন্নি: তুমি তোমার মামাকে গিয়ে বলো, ছোটদের সাথে মিলেমিশে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন করতে, ভালোবাসার কথা প্রচার করতে। পরদিন সকালে শিয়াল গেল বাঘের দরবারে। বাঘকে বলল, মামা, তোমার সমস্যার একটা সমাধান পেয়েছি।

বাঘ মনমরা হয়ে শুয়েছিল। শিয়ালের কথা শুনে তার চোখেমুখে আশার আলো ঝিলিক দিয়ে উঠল।

সমাধান পেয়েছিস ভাগ্নে, তাড়াতাড়ি বল।

শোনো মামা, পৃথিবীতে অনেক উলট-পালট হয়ে গেছে। আমাজনের বনে আগুন লেগেছে, অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল লেগেছে। সাগরের পানি দূষিত হচ্ছে। মেরুতে জমে থাকা বরফ গলে যাচ্ছে। এসব নিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা অনেক ভাবছে। তারা আন্দোলনও করছে। এখন আর তারা বাঘ-সিংহ এসব দেখে ভয় পায় না। তারা পরিবেশ রক্ষা কথা বলে, গাছপালা, প্রাণীকে ভালোবাসার কথা বলে।

তোর কথা শুনে আমারও মনে হচ্ছে মেয়েটা আমাকে দেখে ভয় না পেয়ে ঠিক কাজটাই করেছে।

তাইতো বলছি মামা, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছে, সুন্দরবনের বাঘ, হরিণ, ডলফিন রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছে। চলো আমরা তাদের সাথে যোগ দেই।

তাই চল ভাগ্নে। বাঘ আর শিয়াল মিলে শহরের দিকে রওয়ানা দিল।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!