এ গল্পটি করোনাভাইরাস নিয়ে চিন্তিত শিশুদের জন্য

[মলি ওয়াটস পেশায় একজন নার্স, কাজ করেন যুক্তরাজ্যের ‘সাউদাম্পটন চিলড্রেন’স হসপিটাল’ এর প্যাডিয়াট্রিক ইনটেন্সিভ কেয়ারে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে শিশুদের ভয় দূর করতে তিনি লিখেছেন ‘ডেভ দ্য ডগ ইজ অরিড অ্যাবাউট করোনাভাইরাস’ শিরোনামে একটি গল্পের বই, বইয়ের অলঙ্করণও তার করা। বইটি প্রকাশিত হছে তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে। বাংলাভাষী শিশুদের জন্য চমৎকার এ গল্পটি অনুবাদ করেছেন মাজহার সরকার।]

মাজহার সরকারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2020, 04:50 AM
Updated : 2 April 2020, 04:50 AM

এক যে আছে এক পেঁচা, তার নাম ডটি। সে একজন নার্স আর তার পোশাকে আছে বিন্দু বিন্দু রঙিন ফোঁটা। ওই পাহাড়ের চূড়ায় যে হাসপাতালটি আছে ওখানেই ডটি কাজ করে, ওখানে সে অসুস্থ হয়ে পড়া শিশুদের দেখাশোনা করে।

ডটির বাড়ির পাশেই ডেভ নামে একটা কুকুর বাস করে। প্রতিদিন সকালে কাজে যাবার বেলায় সে ডটিতে হাত নেড়ে অভিবাদন জানায়। একদিন সকালে ডটিতে দেখে ডেভ অভিবাদন জানালো বটে, কিন্তু তার মুখে ছিলো কষ্ঠহাসি। দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো ডেভ কোনো একটা বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত।

অলঙ্করণ: মলি ওয়াটস

চিন্তা করবেই না কেনো! চারদিকে সবাই করোনাভাইরাস নিয়ে কথা বলছে। নানা জায়গা থেকে এটা ওটা শোনে ডেভ খুব ভয় পেয়ে গেলো। টিভিতে, স্কুলে ও বাড়িতে সব জায়গায় কেবল করোনাভাইরাসের খবর আর আলোচনা। এসব দেখে ডেভ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো, সবকিছু বোধ হয় আর কক্ষনো ঠিক হবে না!

ডেভ আতঙ্কিত হয়ে পড়লো, আর এই বিষয়টা খেয়াল করলো নার্স ডটি। কথা বলার জন্য একদিন রাস্তায় ডেভকে ডাকলো সে। ততদিনে করোনাভাইরাস নিয়ে নানা রকম ভয়ানক কথাবার্তা চালু হয়ে গেছে চারপাশে। নার্স ডটি জানতে চাইছিলো ডেভ আসলে এ ভাইরাস সম্পর্কে সত্যি কারণগুলো জানে কিনা।

ডটি ডেভকে জানালো, করোনাভাইরাস আমাদের অসুস্থ করে দেয় ঠিকই, কিন্তু খুব অল্পসংখ্যক মানুষকে। আর যারা অসুস্থ হয় তাদের বেশিরভাগই আবার সুস্থ হয়ে ওঠে। এটা ফ্লু বা ঠান্ডার মতো, শীতার্ত পরিবেশে এটা বেশি হতে পারে। কিন্তু এটা থেকে নিজেদের ও বয়স্কদের বাঁচাতে চেষ্টা করে যেতে হবে।

ডেভ জানতে চাইলো কেউ যদি কাশি বা হাঁচি দেয় তখনই তো বুঝা যায় যে তার করোনাভাইরাস হয়েছে! ডটি জানালো, কাশি বা হাঁচি দিলেই যে করোনাভাইরাস হয়েছে তেমন নয়। এটা হলে জ্বর হবে এবং সঙ্গে শ্বাসকষ্টও থাকবে। কিন্তু এগুলো একমাত্র লক্ষণ নয়, সাধারণ ঠান্ডা না ফ্লু হলেও এমনটা হতে পারে।

নার্স ডটি ডেভকে পরামর্শ দিলো হাত ভালোভাবে ধুতে। ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে, সুর করে দুইবার ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ’ বলতে যতক্ষণ সময় লাগে ততক্ষণ হাত ধুতে হবে। এটা নিয়মিত করলে কাউকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত করতে পারবে না। এ পদ্ধতি নিজে পালন করে ও অন্যদের জানিয়ে জীবন রক্ষা করতে পারে ডেভ।

অলঙ্করণ: মলি ওয়াটস

তবে নিজে নিরাপদ থাকতে ও অন্যকে নিরাপদ রাখতে ডেভের ঘরে থাকা উচিত, বিনা প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া উচিত নয়। তবে তার সঙ্গে তার পরিবার থাকতে পারে, যেন তার একা না লাগে। বাসায় থাকতে হবে পর্যাপ্ত খাবার ও খেলার জন্য গেমস।

এসব শুনে ডেভ তার অনেক পরিকল্পনা বাতিল করলো। ছুটির দিনে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছাও বাদ দিলো। কিন্তু ঘরের ভেতর থাকাতে সে অন্য মানুষদের সঙ্গে দেখা করতে পারছিলো না, যেটা সে সবসময়ই করতো। অন্যরাও তাদের নিজ নিজ ঘর থেকে বের হচ্ছিলো না।

এদিকে সবাইকে নিরাপদ রাখতে স্কুল ও কিছু দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেলো, কিন্তু সবই ছিলো সাময়িক। ডেভের এক বুড়ি দাদিমা আছে। সে তার দাদিমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো, কারণ সে শুনেছে বুড়োদের বেলায় করোনাভাইরাস কিছুটা মারাত্মক। নার্স ডটি জানালো ছোটদের চেয়ে বুড়োদের জন্য এই ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি। আর এজন্যই তার ঘরে থাকা উচিত, দাদিমার যত্ন নেওয়ার জন্য।

ডেভ যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই যায় তাহলে কি সে হাসপাতালে গিয়ে নার্স ডটির সঙ্গে দেখা করবে? জানতে চাইলো ডেভ। নার্স ডটি জানালো, সব ক্ষেত্রেই এমনটা করতে হবে তা নয়। কিছুটা অসুস্থ হলেও ঘরে থেকে বিশ্রাম নেওয়া ভালো। যদি সে খুব বেশি প্রয়োজন মনে করে তখনই কেবল হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে।

নার্স ডটি জানালো, করোনাভাইরাস নিয়ে পত্রিকায় আর টেলিভিশনে নানা মিথ্যা সংবাদ আর ভুল গালগল্প ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এসবে কান দিলে চলবে না। আমরা যেহেতু বিষয়টা জানি এবং সতর্ক থাকছি তাই আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই।

নিজেকে ও চারপাশের সবাইকে ভালো রাখার জন্য ডেভকে অবশ্যই নিয়ম মেনে চলতে হবে। ডেভ যেন আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হয়, শান্ত থাকে ও অবশ্যই নিয়মিত হাত ধুতে মনে রাখে। এখন থেকে ডেভ আর ভয় পায় না, কারণ সে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সত্যি কথাগুলো জেনেছে এবং নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত রাখছে।

লেখক ও শিল্পী মলি ওয়াটস

 
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!