আমার বোন রিন্তি

মা যেদিন আমার ছোটবোনকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে এলো, আমি প্রথমে ভেবেছিলাম একটা পুতুল, আকাশি রঙের একটা তোয়ালে দিয়ে মোড়ানো।

মৃত্তিকা সমাদৃতাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2020, 07:13 AM
Updated : 20 March 2020, 07:13 AM

তারপর যখন বোনটা কেঁদে উঠে হাত-পা নাড়তে শুরু করলো আমি দেখে যে কি অবাক হয়েছি। আনন্দে আমার মনটা ভরে গিয়েছিল।

ওর নাম রাখা হলো রিন্তি। একটু একটু করে রিন্তি আমাদের চোখের সামনে বড় হতে লাগলো। আর যত বড় হচ্ছে আমার সঙ্গে বন্ধুত্বও তত গভীর হচ্ছে। ওর বেড়ে ওঠার সঙ্গে জড়িত কত ঘটনার সাক্ষী আছি আমি! যখন রিন্তির বয়স এক বছরের একটু বেশি, ও একটা মজার কাণ্ড ঘটিয়েছিল। বাবা ডিম কিনে টেবিলে এনে রেখে হাত-মুখ ধুচ্ছিল। মা রান্নাঘরে রান্নায় ব্যস্ত। আর আমি টিভি দেখছিলাম। মা আমাকে বললো বোনকে দেখে রাখতে। কিন্তু আমি টিভি দেখছি তো দেখছিই। বোনের কথা খেয়ালই নেই।

রিন্তি তখন ঘুমাচ্ছিল। কখন যে জেগে উঠলো টেরই পাইনি। নিজে নিজে খাট থেকে নেমে গেল। সে দেখলো টেবিলের ওপর ডিম। সে চেয়ারের উপর উঠে ডিমগুলো মাটিতে ফেলতে থাকে। বাবা যখন ঘরে আসে ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। একটা ডিমও আস্ত নেই।

ছোটবেলায় শব্দের বানান নিয়ে অনেকেরই মজার গল্প থাকে। রিন্তিরও আছে । সে ‘জ’ উচ্চারণ করতে পারতো না । ‘জ’ এর জায়গায় ‘দ’ বলতো। যেমন গাজরকে বলতো ‘গাদর’, হজমকে বলতো ‘হদম’। একবার আমি জাম খাচ্ছিলাম। রিন্তি জিজ্ঞেস  করলো, কী খাচ্ছ আপু? আমি বললাম, জাম। ও বললো, আমিও খাবো। আমি বলি, মাকে বলো। রিন্তি মাকে না বলে বাবাকে গিয়ে বলে, বাবা দাম খাবো, বাবা দাম খাবো। বাবা প্রথমে বুঝতে পারেনি। তারপর আমি বলি, বাবা ও জাম খেতে চাচ্ছে। একথা শুনে বাবা- মা দুজনে তো হেসেই খুন।

এ ঘটনাটা যখন ঘটে তখন আমি ক্লাস টুতে পড়ি। পড়তে বসবো বলে বই খুঁজছি, কিন্তু পাচ্ছি না। আমার টেবিল সবসময় গোছানো থাকে, তাই বই হারানোরও কথা না। হঠাৎ খেয়াল করলাম রিন্তি উল্টো দিকে ঘুরে চুপচাপ বসে আছে। ও সাধারণত এরকম চুপচাপ হয়ে থাকে না। এরপর যা দেখলাম তা আর বলার মতো না। ও আমার বইয়ের এক পৃষ্ঠা ছিড়ে কুটিকুটি করে ফেলেছে, আরেক পৃষ্ঠা কলম দিয়ে দাগিয়েছে। আমাকে দেখে ও খিকখিক করে একটা হাসি দিল। আমিতো রাগে কেঁদেই ফেলেছিলাম। পরে বাবা আমাকে শান্ত করেছিল।

কাল রিন্তির ছয় বছর হবে। সে আমার থেকে মাত্র পাঁচ বছরের ছোট। আমরা দুজনে একই ঘরে থাকি। তাই ওকে সারপ্রাইজ দেওয়া কঠিন। আমি অনেক কষ্টে রিন্তিকে ঘুম পারালাম। এবার আমি, বাবা আর মা মিলে পুরো বাড়িটা সাজাবো। রিন্তি সকালে  উঠে অবাক হয়ে যাবে।

আমাদের সাজানো যখন শেষ হলো, তখনই রিন্তি আমাকে ডাকা শুরু করলো। আমি দৌড়ে রিন্তির কাছে গেলাম। রিন্তি বলল, আপু তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে? আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। ঘুম আসছে না। ঘুম পাড়িয়ে দাও। আমি বললাম, একটু পানি খেতে গিয়েছিলাম। এইতো এখন চলে এসেছি, এখন আমরা ঘুমাবো। তারপর দুজনে ঘুমিয়ে পড়লাম ।

সকালে বাবা কেক আনলো। রিন্তি তখনো ঘুম  থেকে ওঠেনি। আমি ওকে ডাকলাম। ও মুখ-হাত ধুয়ে এলে ওকে ডাইনিং রুমে নিয়ে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে বাবা, মা আর আমি বলে উঠলাম, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ…হ্যাপি বার্থডে টু ইউ…হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার রিন্তি…।

রিন্তি অবাক হয়ে বললো, তোমরা এসব কখন করলে? আমি তো টেরই পাইনি। আমি বললাম, সারপ্রাইজ। এমন সময় কলিং বেল বাজলো। আমার খালামণি আর খালাতো বোন এসেছে। আমার খালাতো বোনের নাম ঊর্মি। ঊর্মি আমার বয়সী। এরপর রিন্তি কেক কাটলো। আমরা সারাদিন খুব মজা করলাম। রাতে রিন্তি আমাকে বলল, থ্যাঙ্ক ইউ আপু। এটা আমার জীবনের এখন পর্যন্ত বেস্ট বার্থডে। আমি বললাম, আই লাভ ইউ সিস্টার।

লেখক পরিচিত: বয়স ১১ বছর, পঞ্চম শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ

এই লেখকের আরও লেখা:

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!