মৎস্যকুমারী ও এক আশ্চর্য নগরীর উপকথা

বই: মৎস্যকুমারী ও এক আশ্চর্য নগরী, ধরন: গল্প, লেখক: কামরুল হাসান শায়ক, প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: গৌতম ঘোষ, প্রকাশক: পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি., স্টল: প্যাভিলিয়ন নম্বর ১৯, পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩২, মূল্য: ১৫০ টাকা

জব্বার আল নাঈমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2020, 09:16 AM
Updated : 23 Feb 2020, 09:32 AM

‘মৎস্যকুমারী ও এক আশ্চর্য নগরী’ গল্পটিকে বলা যেতে পারে রূপকথার গল্প, শিশুদের জন্য গল্প, বাস্তবসত্য ও শিক্ষণীয় গল্প। আবার বলা যেতে পারে মানবিক বোধবুদ্ধি ও পরাবাস্তবতার গল্প।

এ গল্পটির শুরু হয়েছে বন্দর-নগরী চাঁদপুরে বসবাস করা জেলে আজাদের পরিবারকে কেন্দ্র করে, আজাদের দুই ছেলেমেয়ে বিজয় আর জয়াকে নিয়ে। বিজয় আর জয়ার মা হলেন অনিন্দ্য সুন্দরী এক মৎস্যকুমারী। একদা মৎস্যকুমারীর অপার সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে আজাদ তাকে বিয়ে করে।

মৎস্যকুমারীর নাম রাখা হয় সালফি। জন্ম হয় দুই সন্তানের। তবুও সালফির মন পড়ে থাকে নদীতে। একদিন হারানো পোশাক ফিরে পায় সালফি। পোশাক পেয়ে সে বেছে নেয় জলের জীবন। ফিরে যায় নদীতে। নদীতে ফিরে গেলেও সন্তানদের জন্য হৃদয়ের গোপন ঘরে একটা টান অনুভব করে।

একদিন বিজয় আর জয়া নদীর পাড়ে খেলা করছিলো। সালফি এসে তাদেরকে দেখতে পায়। সন্তানরা এ মৎস্যকুমারীকে দেখতে পেয়ে কিছুটা অবাক হয়। সালফি তার পরিচয় তুলে ধরে। বিজয় প্রথমে অবিশ্বাস করতে চাইল। সালফি পুরো ঘটনা সংক্ষিপ্তভাবে বললে জয়া বিশ্বাস করে। সেই বিশ্বাসে প্লাবিত হয় বিজয়ও। সন্তানদের নিয়ে নদী ও সমুদ্রে ঘুরে বেড়াতে চায় মা। ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে সামনে আসে বিশাল দেয়াল। জয়া আবদার করে দেয়ালের ওপাশে যাবে।

আবদার করেই থামতে চাইল না, দরজায় টোকা মারলে সেটি খুলে যায়। মূলত খুলে যায় তাদের সামনে বিশাল একটি স্বপ্নের জগত। স্বপ্নের এক রাজ্য। তারা সেখানে প্রবেশ করা মাত্রই দেখতে পায় দৈত্যকার একজন মানুষ। দৈত্যকার মানুষটি সালফিকে অভয় দিয়ে বলে আমাকে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। আমিও তোমাদের মতো মানুষ। সালফিকে মানুষ মনে করার কারণ হলো, এখানে আসার আগেই পোশাক বাইরে খুলে রেখে আসে।

দৈত্যকার মানুষটির নাম বানশী। সালফি ও তার সন্তানদের জানায়, রাজ্যে এমন নিরবতার কারণ হলো তার লোভ। এ লোভকে মেনে নিতে পারেনি রাজ্যের অন্যান্যরা। ফলে সবাই অভিমান করে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি হয়ে আছে। অথচ একটা সময় এ রাজ্যে সুখের কোনো কমতি ছিল না। কোনো সম্পদেরও অভাব ছিল না। সবাই সবার মতো করে রাজা ছিল।

সালফি, বিজয়, জয়াকে আপ্যায়ন করে বানশী। সালফিদের খুব মায়া হলো বানশীর জন্য। বুদ্ধিমতী সালফি বাঁশি, ঢাক, ঢোল ও বিউগল বাজিয়ে ওয়াফি নামক নগরের রেড স্কয়ারের দিকে যাত্রা শুরু করল। এমন শব্দে রাজ্যের মানুষদের মনে খুশির ঢেউ খেলে গেল। রেড স্কয়ারে আগেই অপেক্ষা করছে বানশী। উপস্থিত সবার কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইল বানশী। সবাই তাকে ক্ষমা করে দিল। রাজ্যে আগের মতো আবার আনন্দের স্রোত বইতে শুরু করল।

‘মৎস্যকুমারী ও এক আশ্চর্য নগরী’ গল্পটি এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য ছোটগল্পের যা হয়। কিন্তু লেখক কামরুল হাসান শায়ক তা না করে গল্পের মোড় অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলেন। যেখানে গিয়ে পাঠক থমকে দাঁড়াবে! স্তব্ধ হয়ে যাবে! কিংবা বাকরুদ্ধ হয়ে যাবে। খুশিতে কিংবা গল্পের কৌশলের কাছে। তখনই হৃদয়ের দক্ষিণ দুয়ার খুলে যাবে, অনর্গল প্রবাহিত হতে থাকবে ঠাণ্ডা বাতাস। বাজতে থাকবে সাইরেন। অথচ এ সাইরেনে দুঃখের কোনো সুর নেই। মোহ নেই। আছে কেবল মুগ্ধতা। মায়া।

খুশিতে চোখের কোণে জমা হয় সুখের জল। জলে নেমে গোসল করার পরও থামবে না গল্পের রেশ-উত্তেজনা। কারণ, ওয়াফি, বিজয় ও জয়া যখন আপন ভূবনে ফিরতে চাইছে, তখন সন্তানরা মাকে দাঁড় করিয়ে দেয় দ্বিমুখী চিন্তার দরজায়। বিজয় বলল, ‘মা, যে তুমি ওয়াফির মতো মৃত একটি নগরীকে আনন্দনগরী বানাতে পারো, সে তুমি কি পাঁচ বছর আগে মরে যাওয়া, তোমার রেখে আসা সংসারটিকে আবার ওয়াফির মতো সুখ-আনন্দে ভাসাতে পারো না? এ কথা শুনে সালফির চোখ ভিজে ওঠে। বিজয় আর জয়াকে বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরে। এমন দৃশ্য দেখে ওয়াফির মানুষদের চোখও জলে ভিজে যায়।’

গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠকের হৃদয়ে কখনো দ্বিধা, কখনো সংকোচ, ভয়, হারানোর বেদনা, আবার নতুনভাবে আশার সঞ্চার ঘটেছেও। লেখক বারবার দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন নানামুখী উদ্বিগ্নতার সামনে। এ হলো সত্যিকার একজন কথাসাহিত্যিকের লেখনীর কৌশল বা বৈশিষ্ট্য। বলা যেতে পারে সার্থক শিশুতোষ গল্প।

গল্পপাঠের পর এ কথা বলাই যেতে পারে, পুস্তক ও প্রকাশনা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কামরুল হাসান শায়ক যদি নিয়মিত বাংলা ভাষার শিশু সাহিত্যের একজন নিয়মিত লেখক হতেন, সাহিত্যের এ শাখাটি আরো বেশি উজ্জ্বল ও শক্তিশালী হয়ে উঠত সন্দেহাতীতভাবে।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!