সার্জেন্ট জহুরুল হক: এক দেশপ্রেমিকের জীবনগাথা

বই: শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক, লেখক: মামুন সিদ্দিকী, প্রকাশক: বাংলা একাডেমি, প্রচ্ছদ: তারিক সুজাত, মূল্য: ২৯০ টাকা

কৌস্তব সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2020, 07:22 AM
Updated : 9 Feb 2020, 07:26 AM

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে যে কয়জন অমৃতসন্তানের নাম সগর্বে উচ্চারিত হয় সার্জেন্ট জহুরুল হক (১৯৩৫-১৯৬৯) তাদের অন্যতম। তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত গবেষক মামুন সিদ্দিকীর বই ‘শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক’।

সার্জেন্ট জহুরুল হক ১৯৩৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলার সুধারামপুর থানার সোনাপুরে জন্ম নেন। তিনি ১৯৫৩ সালে নোয়াখালী জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৫৬ সালে যোগ দেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শক্তির কবল থেকে দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে তাজা রক্ত ঢেলে তরান্তিত করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, তাঁর নাম অমর হয়ে আছে বাঙালি জনসমাজের অন্তরে।

বইটির সূচিপত্রে যে পর্বগুলো রয়েছে সেগুলো হলো- জীবনকথা, জন্ম ও বংশ-পরিচয়, শিক্ষা ও কর্মজীবন, চরিত্র বৈশিষ্ট্য ও জীবনাদর্শ, শিল্পকর্ম ও শিল্পীসত্তার পরিচয়, স্বাধীন পূর্ববাংলা গঠনের চিন্তাধারা, বিপ্লবী সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্তি ও গোপন কর্মতৎপরতা, আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত ও বিচার প্রক্রিয়া, আত্মাহুতি ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত রূপ, মৃত্যু-উত্তর প্রতিক্রিয়া, স্মরণ গণতান্ত্রিক চেতনাসঞ্জাত শক্তি, স্মৃতিরক্ষার প্রয়াস ও মূল্যায়ন। এছাড়া রয়েছে তথ্যনির্দেশ ও টীকাভাষ্য, পরিশিষ্ট, তথ্যপঞ্জি ও আলোকচিত্র।

বইটির লেখক মামুন সিদ্দিকী বলেন, “ঊনসত্তরের চারজন প্রধান শহীদের একজন সার্জেন্ট জহুরুল হক। আগরতলা মামলার অভিযুক্ত হিসেবে তিনি বন্দি অবস্থায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক নিহত হন। তাঁর রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তান সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। মামলার প্রধান অভিযুক্ত শেখ মুজিবসহ সব অভিযুক্ত মুক্তি পান। শেখ মুজিব অভিষিক্ত হন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে। জহুরুল হকের সেই ঐতিহাসিক ভূমিকার বিস্তারিত ইতিহাস ছিল না। গত পঞ্চাশ বছরে তাঁর জীবনীও লেখা হয়নি। ১৯৬৯-১৯৮০ এই এগারো বছরের পত্র-পত্রিকা ঘেঁটে বিরল সব তথ্য সন্নিবেশ করে লিখেছি এই বই।”

শিল্পী ও বিপ্লবী দুই বিপরীত সত্তার অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল সার্জেন্ট জহুরুল হকের জীবনে। কৈশোরিক দুরন্তপনা, বর্ণাঢ্য শিক্ষাজীবন শেষে বিমান বাহিনীতে কর্মজীবনে তার মাঝে উন্মেষ ঘটে জাতীয়তাবাদী চেতনার। বাঙালির ওপর পাকিস্তানি শাসকচক্রের জাতিগত বৈষম্য ও নিপীড়ন তার সংবেদনশীল মনকে বিশেষ পীড়িত করে। এই জাগর চৈতন্য তাঁকে যুক্ত করে স্বাধীন পূর্ব বাংলা গঠনের বৈপ্লবিক পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে।

এ পরিকল্পনা ফাঁসের পরিপ্রেক্ষিতে অন্যদের সঙ্গে অভিযুক্ত হন আগরতলা মামলায়। ঢাকা সেনানিবাসে বন্দি ও বিচারাধীন অবস্থায় জাতীয়তাবাদী মনোভঙ্গী, বিশেষত শিশুবাৎসল্যের জন্য পাকিস্তানি সৈন্য কর্তৃক শিকার হন নৃশংসতম হত্যার। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ ঘটনাধারায় সার্জেন্ট জহুরুল হকের আত্মাহুতি সেদিন মুক্তিকামী বাঙালিকে বিপুল্ভাবে উজ্জীবিত করেছিল স্বাধীকার সংগ্রামে।

বাঙালি এই বীরসন্তানের জীবন কাহিনি, শিক্ষা ও কর্মজীবন, চরিত্র বৈশিষ্ট্য, শিল্পীসত্তার পরিচয়, বিপ্লবী সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্তি, বন্দিজীবন, নৃশংসভাবে হত্যার পূর্বাপর বিবরণ, একে ঘিরে বাঙালির বিক্ষোভ ও অসন্তোষের ঘটনাপঞ্জি এবং স্মরণের প্রয়াস এ বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে বস্তুনিষ্ঠরূপে।

জীবনীকার বিভিন্ন সূত্র, বিশেষত সমকালীন পত্র পত্রিকা থেকে দুর্লভ তথ্য আহরণের মাধ্যমে শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের পূর্ণাঙ্গ জীবনী রচনার প্রয়াস নিয়েছেন। ফলে উঠে এসেছে তাঁর অত্যুজ্জ্বল জীবন ও আত্মত্যাগের মহিমা, তাঁর চিন্তাদর্শের মৌলিক চিত্র। এই বই তাই একজন অকুতোভয় দেশপ্রেমিকের জীবনগাথা ও বাঙালি মুক্তিসাধনার অনবদ্য ভাষ্য।   

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!