চাকায় ছানা আহত, গাড়ি আটকে দিচ্ছে কুকুরের দল

ঢাকার খিলগাঁও সি ব্লকের (আনসার হেডকোয়ার্টার সংলগ্ন) ৩২ নম্বর রাস্তাটি তেমন বড় নয়। তবে এর আশপাশের বাড়িগুলো পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম, গোছানো। এখানকারই ৪৪৪/সি নম্বর বাড়িতে বাবা-মার সঙ্গে থাকে লাবিবা।

বোরহান বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2020, 07:24 AM
Updated : 25 Jan 2020, 04:16 PM

বাড়ির অদূরে একটি বেসরকারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে সে। পশু-পাখির জন্য তার অনেক টান। বাড়ির ভেতরে উঠোনে মোরগ-মুরগী ছোটাছুটি করে। বাইরের রাস্তায় বেশকিছু কুকুরের অনাগোনা থাকে সব সময়ই। লাবিবাকে দেখলেই তারা ছুটে আসে।

কুকুরছানা শিরো’র এক্স-রে

কুকুরগুলো একসময় ছোট ছিল। এখন বেশ বড়। তাদের ঘরেও এখন অনেক ছানাপোনা। এমনি একটি কুকুরছানা ‘শিরো’। তিন মাস বয়সী এই ছানাটির নাম লাবিবাই রেখেছে। কেনো ‘শিরো’ নাম রাখা হয়েছে? এর অর্থইবা কি? জানে না লাবিবা। তবে, নামটি তার ভীষণ পছন্দের।

সম্প্রতি গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মারাত্মক আহত হয় শিরো। প্রথমটায় ভাবা হয়েছিল শিরো বোধহয় আর বাঁচবে না। ব্যথায় রাতদিন সে কি কান্না তার! গলির স্থানীয় লোকজনও শিরোর কান্নায় মন খারাপ করেছে। ওই রাস্তারই ছোট্ট দোকানের টেইলার মাস্টার মিলন দুর্ঘটনার পর পাশের তালতলায় গিয়ে একজন পশুচিকিৎসককে দেখিয়ে ব্যথানাশক ইনজেকশন দিয়ে আনে শিরোর। এতে কিছুক্ষণ ভালো থাকে সে। রাত যত বাড়ে শিরোও তত ব্যথায় কাতর হয়ে পড়ে। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে।

শিরোকে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে

শীতের রাত। তবু ভালোবাসার টানে অনেকেই কুকুর ছানাটির কাছে এসে তাকে আদর করতে থাকে। মুখে খাবার দিতে থাকে। কিন্তু তাতে কি আর গায়ের ব্যথা কমে? ব্যথায় উচ্চস্বরে কাঁদতে থাকে শিরো।

সকাল হয়। ঘরে থাকা আইসক্রিমের প্লাস্টিক বাক্সটি সামান্য কেটে লাবিবা শিরোর চিকিসার জন্য চাঁদা সংগ্রহ করতে শুরু করে। দুদিনে ঊনিশশ টাকার মতো জমা হয় ওই বাক্সে। সবচেয়ে বেশি ১ হাজার টাকা দিয়েছেন স্থানীয় জুয়েল। সেই টাকা দিয়েই শুরু হয় শিরোর চিকিৎসা।

শিরোর জন্য লাবিবার তহবিল

লাবিবাদের পাশের বাড়িতে থাকেন মধ্যবয়সী জুবায়ের। শিরোর জন্য তিনিও ব্যথিত। তাদের বাসা থেকেও শিরোর কান্নার শব্দ শোনা যায়। লাবিবা জুবায়েরের হাতে সংগৃহিত ঊনিশশ টাকা তুলে দেয়। সিদ্ধান্ত হয় শিরোকে চানখারপুলের কাছে পশু হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হবে।

দিন কয়েক আগে চিকিৎসার জন্য বিস্কুটের একটি কার্টনে বসিয়ে শিরোকে নিয়ে যাওয়া হয় চানখারপুলে। সেখান থেকে ফিরে আসার পর দেখা গেল শিরো ঘাড় ঘুরিয়ে কিছুটা এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। বোঝা গেল সে ভালো বোধ করছে। কিন্তু একেবারেই সামনে বা পেছনে যেতে পারছে না। একই স্থানে বসে থাকছে।

শিরো ও লাবিবা

এক্স-রে রিপোর্ট দেখে বোঝা গেল তার শরীরের চারটি জায়গা ভেঙে গেছে। যার মধ্যে একটি আঘাত অনেক বেশি। চিকিৎসক বলেছেন, প্লাস্টার করা যায়। তবে যেহেতু এটি স্ট্রিট ডগ তাই তারা এ ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহ দেখালেন না। ব্যথার ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, ক্যালসিয়াম আর স্যালাইন খাওয়ার প্রেসক্রিপশন লিখে ছেড়ে দিয়েছেন। পরামর্শ দিয়েছেন পূর্বাচল সংলগ্ন তিনশ ফিট এলাকায় বেসরকারি একটি পশু হাসপাতালে নিয়ে আবাসিক ট্রিটমেন্টের। কমপক্ষে সাতদিন সেখানে থাকতে হবে। এতে খরচ হবে প্রায় চার হাজার টাকা।

খরচের কথা শুনে লাবিবা মোটেও ঘাবড়ে যায়নি। তার বিশ্বাস এবারো খরচটা ঠিকই জোগাড় হয়ে যাবে। হয়েছেও তাই। অবশেষে সাহায্যকারির খোঁজ পাওয়া গেছে। তারাই দায়িত্ব নিয়েছেন শিরোর যাবতীয় চিকিৎসার। পাশের বাড়ির জুবায়ের এটা নিশ্চিত করেছেন। চূড়ান্ত চিকিৎসা শুরুর আগে আপাতত শিরোকে আরো দু-একদিন বর্তমান ডাক্তারের পরামর্শে ইনজেকশন নিতে হবে। 

সুস্থ হওয়ার পথে শিরো

লাবিবার চোখে-মুখে এখন তৃপ্তির হাসি। সে হাসি ছুঁয়ে গেছে সবার মনে। লাবিবা বলে, সবাই আমাকে অনেক পছন্দ করেন। তাই আমি যখন শিরোর জন্য সাহায্য চেয়েছিলাম তারা যে যা পেরেছেন তাই দিয়েছেন। এখন অনেক ভালো লাগছে আমার।

কোনো অপরিচিত যানবাহন দেখলেই বড় কুকুরগুলো দলবদ্ধভাবে তেড়ে যায়। ভয় দেখায়। কারণ জানতে চাইলে লাবিবা বলে, অনেকদিন আগে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে একটি কুকুরছানা মারা যায়। সেই থেকে আমাদের এই রাস্তায় অপরিচিত কোনো গাড়ি, রিক্সা, সাইকেল দেখলে ওরা ঘেউ ঘেউ করে ভয় দেখায়।

 

লাবিবার বাবা কাজী শফিক মোস্তফা চঞ্চল জানান, খুব ছোট বেলা থেকেই লাবিবা পশু-পাখির কষ্ট সহ্য করতে পারে না। তাদের কষ্ট দেখলে ওর মনও কেঁদে ওঠে। বাসার সামনে রাস্তার কুকুরগুলোকে প্রতিদিনই সে কোনো না কোনো খাবার দেয়, আদর করে।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!