টিনের দোতলা ঘর। নিচতলায় দাদুর কাছে ঘুমিয়ে ছিল সে। দাদুর ওই একটা অভ্যাস, সৌরভকে সাথে নিয়ে ঘুমোনো। তাকে দাদু খুব ভালোবাসেন। পাশে শুইয়ে বিভিন্ন রকম গল্প শোনান। যদিও সৌরভ তার আম্মু ছাড়া ঘুমোতে চায় না।
অবশ্য এতে করে সে মজাও পায়। দাদুর পীড়াপিড়িতে আম্মুর কাছে ঘুমোনো হয় না। ওর যখন ঘুম না আসে দাদু আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। গল্প শুনতে শুনতে ঘুমের রাজ্যে চলে যায় সৌরভ।
ওর বড় ভাইয়া সজল। সে মায়ের সাথে ঘুমোয় অন্য রুমে। সজল দাদুর কাছে ঘুমোতে চায় না। এখন একটু বড়ো হয়েছে তো তাই! কিসের যেন শব্দে ঘুম ভেঙে যায় সৌরভের। টিনের চালে ঝনঝনাঝন শব্দ করে উঠলো। ভয়ে দাদুকে জড়িয়ে ধরলো সে। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো ঘরটা কেমন যেন আলোকিত হয়ে গেছে। রূপোর মতো ঝিলিক খেলে গেল যেন।
কার যেন পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। আম্মু না তো? নাহ্ তো। ভোরে আম্মু কিভাবে আসবে। আর আম্মু এলে তো ডেকে তুলতো দরজা খুলে দিতে বলতো। তাহলে কি আজকে দরজা খোলা ছিলো ? নাহ্ তা ও তো না।
ভাবছে সৌরভ। মনে মনে সাহস জোগাচ্ছে সে। চোরের ভাবনাও মাথা থেকে যাচ্ছে না। সাহস করে তাকালো, নাহ্ কিছু তো দেখা যাচ্ছে না। ঘরের ভেতর দিনের মতো পরিষ্কার, অথচ কাউকে দেখা যাচ্ছে না ।
হঠাৎ চুড়ির আওয়াজ কানে এলো। মহিলারা কাচের চুড়ি পরলে যেমন করে শব্দ হয় সেরকম। মাঝে মাঝে আম্মু যেমন করে চুড়ি পরলে শব্দ হয়। চোখে পড়লো ফর্সা একটি মেয়ে। তার রুম থেকে ভেতর রুমে যাচ্ছে। পরনে তার হালকা সাদা ফ্রক, ঠিক যেন রাজকুমারীর গল্পের সেই পরির মতো।
সৌরভ মাথা উঁচু করে ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল,
কে?
জবাব নেই। আবার ও প্রশ্ন করলো সে। ভেতর থেকে আস্তে করে মায়াবী সুললিত কণ্ঠে জবাব এলো-
আমি সুহাসিনী।
সুহাসিনী? চিনলাম না তো।
চিনবে চিনবে আগে আমার কাছে এসো। তারপর তোমাকে বলছি।
সৌরভের সাহস হতে লাগলো। সে উঠে ভেতর রুমে চলে গেল। তাকাতেই তার চোখে আলোক রশ্মি ভেদ করে চলে গেল।
কি ভয় পেয়েছ?
না না।
না বললে কি হবে। তোমার শরীর ভার হয়ে আছে। গায়ের পশম খাড়া হয়ে আছে। তাই না ?
মাথা নাড়ে সৌরভ।
তুমি বুঝলে কী করে?
আমি সব বুঝি সব দেখতে পাই।
কে তুমি?
বললাম তো সুহাসিনী।
বুঝলাম তোমার নাম সুহাসিনী। তুমি আসলে কে?
শুনলে তুমি ভয় পাবে না তো?
না, ভয় পাবো কেন?
আমি পরি রানি সুহাসিনী
তুমি পরি?
হ্যাঁ।
আমি কি স্বপ্নে দেখছি?
না, তুমি বাস্তবে আমাকে দেখছ।
আচ্ছা তুমি কিভাবে এলে?
আমি রোজ আসি, এসে তোমার সাথে দেখা করতে চাই। কিন্তু ওই বুড়িটা তোমাকে কোলে করে ঘুমায়। আমি তোমার সাথে দেখা করতে পারি না। আজকে বুড়িকে দিয়েছি ঘুম পাড়িয়ে।
তুমি দাদুর কথা বলছ?
হ্যাঁ।
আজকে দাদু জাগবে না?
না। তোমার দাদুর চোখে আমি ঘুম দিয়ে রেখেছি।
আচ্ছা তুমি আমার বন্ধু হবে?
বন্ধু হতেই তো এসেছি। আমি তোমার সঙ্গে রোজ স্কুলে যাই।
কোথায়! আমি তো দেখি না?
তুমি দেখতে পাও না, কারণ আমি দেখা দিই না।
আচ্ছা কালকে আমার সঙ্গে স্কুলে যেও কেমন।
অবশ্যই যাবো।
পূর্ব আকাশ ফর্সা হতে থাকলো। পরি রানি ঘর থেকে বিদায় নিয়ে চোখের পলকে উধাও হলো।
সকালে মায়ের কাছে ঘটনাটা বলল সৌরভ। মা বিশ্বাসই করলেন না স্বপ্ন বলে উড়িয়ে দিলেন। বললেন, ঘোরের ভেতর ছিলে তাই ওরকম মনে হয়েছে। পরদিন সকালে স্কুলে যাবার পথে সৌরভের মাথায় কে যেন টোকা দিল। সাইকেল থেকে উপর দিকে তাকিয়ে সৌরভ তো অবাক।
কি ব্যাপার তুমি সত্যি এসেছ?
কেন, তোমার বিশ্বাস হয়নি? শোন আমরা তোমাদের মানুষের মতো নই। সব কাজে শুধু জুয়োচুরি। মানুষ বেশি মিথ্যা বলে। আমরা বলি না।
স্কুলে গিয়ে সৌরভ বেঞ্চিতে বসলো। ক্লাসে টিচার প্রবেশ করলেন। পরি রানি শূন্যে ভেসে ক্লাস নেওয়া দেখছিল। কি মনে করে দুষ্টুমির চিন্তা মাথায় এলো। সে ডাস্টারটা স্যারের কাছ থেকে টেনে নিচ্ছিল। স্যার প্রথমে ধমক দিয়ে উঠলেন। চেয়ে দেখেন কিছু নেই। ছাত্র-ছাত্রীরা সিটে বসা।
সৌরভ সুহাসিনীর কাণ্ড দেখে হাসছিল, পরিটা আরও মজা করে ডাস্টার নিয়ে ক্লাসে দৌড়াচ্ছিল। শুধু ডাস্টার ঘুরতে দেখে ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরা ভয়ে ভূত ভূত বলে ক্লাস ছেড়ে বের হয়ে গেল। শুধু সৌরভ ছাড়া।
বিপ্লব স্যার বললেন, কি ব্যাপার তুমি গেলে না কেন?
কারণ, স্যার ওটা ভূতের কাণ্ড নয়।
তাহলে?
ও হলো আমার পরি বন্ধু সুহাসিনী।
স্যার ধমক দিলেন, ওমনি পরি মানুষের রূপ ধারণ করে স্যারের সামনে দাঁড়ালো। স্যার তো অবাক। স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে হাত জোড় করল। স্যার ক্ষমা করে দিলেন।
ইতোমধ্যে স্কুলের সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যান্য টিচাররা ছুটে এলেন। ছুটির পর দুজনে বাড়ি ফিরল। সৌরভকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে পরি রানি চলে গেল। ভোর রাতে সে সৌরভের ঘুম ভাঙাল, হাতে রজনীগন্ধা ফুলৃ।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!