তারও প্রায় মাসখানেক আগে নিয়ে এসেছিলেন একসেট নতুন ইশকুল ড্রেস, জুতো-মোজা ও চুলে ঝুটি বাঁধার সাদা ফিতে। তুবাতো দারুণ খুশি নতুন নতুন এসব জিনিস দেখে, কিন্তু ইশকুলে যাওয়া নিয়ে সে একটু আতঙ্কিত।
তুবার মা ওই ইশকুলেরই শিক্ষক। আজ তুবার মাকে অনেক সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে। ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য নাস্তা তৈরি করেছেন, তুবার ইশকুলে যাবার সব কিছু গুছিয়ে রাখছেন, আবার নিজেকেও তৈরি করছেন স্কুলের জন্য। কারণ তাকে আজ ইশকুলে যেতে হবে ইশকুল শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে, তাও আবার শাড়ি পরে।
তুবার মতো অনেক সোনামনিদের আজ প্রথম ইশকুল। তুবার প্রথম ইশকুল দিন উপলক্ষে তুবার বাবা আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন। তুবা তার প্রথম ইশকুল দিনটিতে তার মা-বাবা দুজনকে নিয়ে একসঙ্গে ইশকুল যেতে চেয়েছিল, কিন্তু তা আর হলো না। এজন্য মনটা একটু খারাপই হয়েছে তার। তুবা তার এই খারাপ করা মন নিয়েই বাবার সাহায্যে ইশকুলের জন্য তৈরি হতে লাগলো। প্রথম ইশকুল আজ তার।
ইশকুলে যাবার পথে অনেকেই তুবাকে দেখে প্রশ্ন করছে, মনটা এত খারাপ কেন ওর?
এদিকে তুবার বাবা এ প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলতে বলতে হয়রান, আজ তুবার প্রথম ইশকুল দিন তো তাই!
মন খারাপ করা মেয়ের মায়ামাখা মুখটার একটা ছবি তুলতে চাইলে তুবার বিরক্ত ভাবটা আরো খানিকটা বাড়ে। ছবি তোলা সে একদম পছন্দ করে না।
ইশকুলের সামনে গিয়ে তুবাতো অবাক! কিযে সুন্দর করে সাজিয়েছে তাদের ইশকুলটা! বিভিন্ন রঙের বেলুন, ভিন্ন ভিন্ন রকম ফুল আর তুবার পছন্দের সব কার্টুনের ছবি দিয়ে ভরা ছিল ইশকুলের দেয়ালগুলো। একই রকমের শাড়ি পরে পরিপাটি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষকরা হাত নেড়ে নেড়ে ইশকুলে আসা নতুন বাচ্চাদেরকে শুভকামনা জানাচ্ছেন আর তাদের সবার হাতে একটা করে ক্যান্ডি আর ফুল তুলে দিচ্ছেন।
বাচ্চারা সবাই সারিবদ্ধ দাঁড়িয়েছে। তুবার মা তুবাকে দেখে এগিয়ে আসলেন, এসে একটু আদর দিলেন। তবে বাড়িতে যেভাবে আদর করতেন সেভাবে নয়। এজন্য তুবার অনেক কান্না পেয়েছিল। চোখ দিয়ে দু-এক ফোঁটা পানিও মনে হয় গড়িয়েছিল। মাকে দেখে তার মনে হয়েছিল সে যেন আমার একার মা নয়, মনে হয়েছিল সে সবার মা।
এ কথাগুলো তুবা তার মনে মনে রাখছিল বাবাকে ইশকুল ফেরার পথে বলবে বলে।
একজন যে কিনা দেখতে আমার মায়ের মতই, সে আমাদেরকে সারিবদ্ধভাবে একটি কক্ষে নিয়ে এলেন। সেই কক্ষে যাবার পর আমি আবার অবাক হলাম! পুরা কক্ষটি বেলুন দিয়ে সাজানো আর দেয়ালগুলো বিভিন্ন রঙে রাঙানো। ওই যে বললাম আমার মায়ের মতো দেখতে মানুষটি তিনি আমাদের শিক্ষক। তিনি ক্লাসরুমে এসেই আমাদের এটা বললেন এবং এক এক করে সবার নাম জিজ্ঞেস করলেন। আর নামের অর্থগুলো বলে দিতে লাগলেন।
আমারও নাম জিজ্ঞেস করলেন আর আমার নামটা কে রেখেছেন জানতে চাইলেন। বললাম, আমার ভালো নামটা রেখেছেন আমার দাদী আর পঁচা নামটা রেখেছেন আমার বাবা। তিনি হাসলেন আর বললেন তুবা তোমার কী করতে সবচেয়ে ভালো লাগে বা তোমার সম্পর্কে তোমার মনে যা আসে বলো। আমরা সবাই আজ তোমার কথা শুনবো। এভাবে আমরা একেক দিন একেক জন করে সবাই সবার কথা জানবো।
যদিও তুবা অনেক কম কথা বলে, কিন্তু শিক্ষক তার সম্পর্কে জানতে চাওয়াতে তার অনেক কথা বলতে মনে চাইলো। কিন্তু কেন যে আজ তার কিছুই মনে পড়ছে না। তারপরও সে বললো তার বাড়িতে কে কে থাকে, সে কী খেতে পছন্দ করে, কোথায় কোথায় ঘুরতে সে পছন্দ করে এবং কী খেলতে সে পছন্দ করে ইত্যাদি।
তার সবচেয়ে পছন্দের খেলা হলো যেমন- মনে করুন বা ধরুন আমি কোথাও ঘুরতে গেছি, তো সেখানে যদি আমি রিকশা করে যাই তাহলে বাসায় এসে আমি রিকশা রিকশা খেলি। কারণ রিকশা চড়তে আমার খুব ভালো লাগে। এভাবে ডক্টরের কাছ থেকে ফিরে ডক্টর ডক্টর খেলি, আবার কোন রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে বাসায় এসে আমি হোটেল হোটেল খেলি। আজ আমি বাসায় গিয়ে ইশকুল ইশকুল খেলবো, কারণ ইশকুলটা আমার অনেক ভালো লেগেছে।
তুবার কথা শুনে শিক্ষক সবাইকে জোরে হাততালি দিতে বললেন। তুবার ভালো লাগাটা যেন আরো দ্বিগুণ হয়ে গেলো। আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছিল আমার শ্রেণি শিক্ষককে, আমি যা-ই বলেছি তিনি আমার কথা অনেক মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। আগে কখনোই কেউ এমন করে আমার কথা শুনেনি।
এ এক চমৎকার অনুভূতি জাগলো তুবার মনে, যেন শ্রেণিকক্ষের চারপাশের জানালাগুলো দিয়ে সোনালি মিঠে রোদ্দুর এমনভাবে প্রবেশ করতে শুরু করলো যেন মনে হলো রাধাচূড়ার ঝড়ে পরা পাপড়িগুলোর মতো। এই প্রথম তুবা অপেক্ষায় থাকলো আগামি দিনের জন্য।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |